২০১৩ সালের মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পুরো সময় জুড়ে প্রতিবাদকারী জনসাধারণ ব্রাজিলের রাজপথে অবস্থান নিয়েছিল। সাও পাওলো, রিও, পোর্তো আলেগরি, ব্রাসিলিয়া, ফোরতালেজা শহরগুলোকে তাঁরা প্রতিবাদের ঝড়ে কাঁপিয়ে তুলেছে। এই শহরগুলো ছাড়াও সারা দেশ ব্যাপী আন্দোলনে আরও কয়েক ডজন শহর কেঁপে উঠেছে। বৃহৎ আকারের এই সামাজিক আন্দোলন একটি অনুভূতি নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এটি এমন এক অনুভূতি যা এখনও মানুষের মাঝে উদয় হয়নি।
ব্রাজিলের রাজনৈতিক জীবনে প্রতিবাদ খুব সাধারণ একটি বিষয়। কিন্তু গত বছরের আন্দোলনটির সুস্পষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি জনগণকে বেশ অবাক করেছে। তরুণ প্রজন্ম প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে। তরুণদের বেশিরভাগই এই প্রথম কোন আন্দোলনে অংশ নিল। তারা কোন রাজনৈতিক দল অথবা সামাজিক বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী দলের সদস্য নয়। এসবের পরিবর্তে তারা অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আলোচনার মাধ্যমে তাদের বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতজনদের আন্দোলন করতে সমবেত করেছে। “ক্ষমতাবানেরা জেগে ওঠো” এবং “রাজপথে এসো” ধরনের বাণিজ্যিক স্লোগানগুলোকে তারা পরাহত করেছে এবং জনগণকে তাদের আন্দোলনে সামিল হতে আমন্ত্রণ জানাতে ব্যবহার করেছে। তাদের আন্দোলনের বিভিন্ন সমালোচনার ইস্যু এবং দাবিগুলো বেশ বৈচিত্র্যময়। ইস্যুগুলোর মধ্যে আছে জীবনধারণের উচ্চমূল্য, দূর্নীতি, ফিফা বিশ্বকাপের জন্য হস্তক্ষেপ, গণশিক্ষার মান, স্বাস্থ্য সেবা এবং বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর অনাস্থা ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, একটি মাত্র হাঁটা কর্মসূচীতে এই ইস্যুগুলো একসাথে তুলে ধরা হয়েছে।
ব্যানার, সমস্বরে স্লোগান দেওয়া এবং পোস্টারের মাধ্যমে জানানো দাবিগুলোকে প্রতিধ্বনিত করে এই ইস্যুগুলোর প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে। পেছনে ফিরে তাকালে তাদেরকে এখন হয়তোবা এই মুহূর্তের প্রমাণ স্বরূপ প্রতিবাদ জানাতে দেখা যাবে। “জাগিয়ে তোলার” মাধ্যম হিসেবে পোস্টারগুলো প্রতিবাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। টাম্বলার ব্লগ কারতাজে দোস প্রোতেস্তসের জন্য এগুলো রসদও প্রদান করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা প্রতিবাদ পোস্টারগুলোকে এই ব্লগের মাধ্যমে একত্রিত করা হয়েছে। এই সংগ্রহের মাধ্যমে যে কেউ সারা দেশ জুড়ে হওয়া আন্দোলনের দাবি, সমালোচনা এবং প্রতিবাদকারীদের সংগ্রামের বিচিত্রতা দেখতে পাবেন। এই দাবিগুলোর মাঝে সব ধরনের চিন্তা চেতনার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। প্রগতিশীল ধারণা থেকে শুরু করে সংকটময় এবং অসহনীয় বিষয়গুলো ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যাপারগুলোও এখানে তুলে আনা হয়েছে।
স্পাইডারম্যানের সাজে সজ্জিত এক লোক ট্যাক্সের সমালোচনা করে লেখা একটি পোস্টার ধরে আছেন। পোস্টারটিতে লেখা আছে, “এমনকি একজন সুপারহিরোও এত বেশি ট্যাক্স সহ্য করতে পারে না!”; আরেকটি পোস্টারে পতিতা হাঁটা কর্মসূচীর বরাত দিয়ে লেখা আছেঃ “আমি কোন সরকারী পতিতা নই! আমি একজন স্বাধীন পতিতা হতে চাই!”; ধর্মপ্রচারক এবং রাজনীতিবিদ ফেলিসিয়ানোর বিরুদ্ধে পোস্টারে লেখা হয়েছে, “রাজনীতিবিদদের বিকল্প হিসেবে চিকিৎসা করা প্রয়োজন”। কারন, তিনি সমকামীদের “চিকিৎসার” জন্য একটি আইন পাস করার প্রস্তাব তুলেছেন। দেশটির মূলমন্ত্র “শান্তিশৃঙ্খলা এবং প্রগতি” উক্তিটির বরাত দিয়ে পোস্টারে লেখা হয়েছে, “চলুন, প্রগতির দেখা পেতে শান্তিশৃঙ্খলাকে নাড়া দিই”।
এই বার্তাগুলো প্রচারের পাশাপাশি কিছু কৌতুক পূর্ণ এবং শ্লেষ পূর্ণ বার্তাও পোস্টারে লেখা হয়েছে। যেমন, একটি পোস্টারে লেখা হয়েছে, “[ঠিক এই মূহুর্তে] আমি হয়তোবা ফাইল দেখে ছাড়তে পারতাম, তা না করে আমাকে এখানে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে”।
ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৪ আগমনের সাথে সাথে ঠিক কিছু সময় পরে অর্থাৎ অক্টোবর মাসে প্রেসিডেন্ট, রাষ্ট্রীয় গভর্নর এবং কার্যনির্বাহী পদগুলোতে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। আর তাই নতুন নতুন প্রতিবাদ কর্মসূচী এবং যুদ্ধোদ্যম শুরুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবাদকারীদের ব্যানার এবং সমস্বরে স্লোগান দেয়ার জন্য আবার কাজে নামার সময় এসেছে। অবশেষে আরেকটি পোস্টারে লেখা হয়েছেঃ “নীরবতা পালন করে কোন দেশে পরিবর্তন আনা যাবে না”।