বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ৩২ জন নিহত হওয়ার পর ভারতের মুসলমানরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে

The the north-eastern state of Assam, India is severely gripped in ethnic violence. The tensions between an ethnic-group called Bodos and migrant Muslim religious minorities over control of land and settlements have been simmering for a long time.  Image by Reporter#21795 Copyright Demotix (25/7/2012)

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে জাতিগত দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদী আদিবাসী বোডো গোষ্ঠী এবং সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বসতি স্থাপন ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। ছবি তুলেছেন রিপোর্টার#২১৭৯৫। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২৫/৭২০১২)

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে জাতিগত সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ৩২ জন মুসলিম অধিবাসী নিহত হয়েছেন। ওই এলাকা থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত করতেই এই হামলা করা হয়েছে।

বোডো বিচ্ছিন্নতাবাদীরা গত ১ এবং ২ মে ২০১৪-এ রাজ্যের কোকরাঝড় এবং বাক্সা জেলায় মুসলিমদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালায়। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।

হত্যা করার আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিরা তাদের বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেয়। একটি অনির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ভারতের চলমান নির্বাচনে পছন্দের দলকে ভোট দেয়ার অভিযোগে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে।

এ ঘটনায় শত শত মুসলিম অধিবাসী পালিয়ে পাশের গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ডেকে কার্ফু জারি করেছে।

আদিবাসী বোডো গোষ্ঠী বোডো ভাষায় কথা বলে। বোডোদের দাবি, মুসলিমরা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে এসেছে। বোডোরা নিজেদের জন্য স্বাধীন বোডোল্যান্ড দাবি করে আসছে। এজন্য তারা সশস্ত্র ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোডোল্যান্ড-এর অধীনে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন করছে। যদিও আসামে মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১০% হলো বোডোরা।

শুধুমাত্র মুসলিম অভিবাসীরাই নন, বোডোদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন হিন্দিভাষী অন্যান্য রাজ্য থেকে আগতরাও। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ৭ জন নাগরিককে হত্যা করা হয়। হত্যার অভিযোগ উঠে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোডোল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তারা উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ৪টি রাতের বাস থামায়। সেখান থেকে ১৩ জন যাত্রীকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

বোডোদের একটি স্বশাসিত কাউন্সিল আছে। এর নাম বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী বোডোরা শপথ নিয়েছে, কোনো অভিবাসীদের তারা গ্রামে থাকতে দেবে না

সাংবাদিক এবং ব্লগার হাবিব সিদ্দিকী এই সহিংসতার নেপথ্য কারণ তুলে ধরেছেন:

যেসব মুসলিম আসামে বসবাস করেন, তারা কেউ-ই বাংলাদেশ থেকে এখানে আসেননি। আর সবার মতোই তারা এখানে শত বছর ধরে বসবাস করছেন। ভারত ভাগের আগে থেকেই তারা এখানে আছেন। মুসলিম পরিচয় আর বাংলাভাষী হওয়ার কারণে তারা আসামে বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন। আর এটাই রক্তাক্ত ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে।

কয়েকদিন আগে ভারতীয় জনতা দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশী অভিবাসীদের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। আসামের সহিংসতা ও মুসলিম নিধনের পিছনে নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মূখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী পরমাণু প্রকৌশলী তানভীর সেলিম এই সহিংসতার পিছনে যে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, টুইটারে সেটার ব্যাখ্যা দিয়েছেন:

আসামের মুসলিম জনগোষ্ঠী বিশ্বাস করে, বিচ্ছিন্নতাবাদী বোডো প্রার্থীকে সমর্থন না করার কারণেই তাদের ওপর হামলা হয়েছে। কী লজ্জার ব্যাপার!

বোডো জনগোষ্ঠীর কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন টুইটার ব্যবহারকারী দীপঙ্কর:

আসামের সবখানেই বোডোরা রয়েছেন। যদিও আমরা বাক্সায় এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটতে দেখেছি। মুসলিম বিরোধী সহিংসতার মধ্যে দিয়ে বোডো আন্দোলন পথ হারিয়ে যাচ্ছে কেন?

রোহিত ভাট অবশ্য যুক্তি দেখিয়েছেন, এই সহিংসতা ধর্মের কারণে নয়:

এটিকে অনেকেই সংখ্যালঘু মুসলিম -বোডোর মধ্যকার সহিংসতা হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। কিন্তু এখানে ধর্মের বিষয় অপ্রাসঙ্গিক। এই সহিংসতা আদিবাসীদের সাথে বহিরাগতদের।

1 টি মন্তব্য

  • Nakul

    সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে, পারস্পারিক সাংস্কৃতিক আদান প্রদান বাড়াতে হবে, এটাই করতে হবে | এটা ব্যাতিত বিকল্প নেই |

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .