দক্ষিণ কোরিয়ার ফেরি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সরকারের “অযোগ্যতা”কে আড়ালের চেষ্টা প্রচার মাধ্যমের

Yellow Ribbons tied by citizens, hoping for miracles, at one random street of Seoul, Image by author.

সিউলের একটি রাস্তায় ফেরি দুর্ঘটনায় পতিতদের জীবিত ফিরে পাবার আশায় বাঁধা কিছু হলুদ ফিতা। ছবিঃ লি ইউ এন।  

কয়েক শত আরোহী নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ান একটি ফেরি উল্টে যাওয়ার ১৪ দিন পেড়িয়ে গেল। দুর্ঘটনায় ২০৫ জন লোকের নিশ্চিত মৃত্যু হয়েছে এবং ৯৭ জন লোক এখনও নিখোঁজ রয়েছে।

ফেরির ক্যাপ্টেন এবং সকল ক্রু তখন থেকেই গ্রেপ্তার হয়ে আছেন। দূর্যোগের প্রতি সরকারের দেরীতে উদ্যোগ গ্রহণের কারণে যেসব সমালোচনার ঝড় উঠেছে, তাঁর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী চুং হং-ওন পদত্যাগ করেছেন। কোরিয়ান শিপিং এ্যাসোসিয়েশনের ইনচেওয়ন দপ্তর থেকে তিনজন লোককে বিভিন্ন প্রমাণ ধ্বংস করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে

ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধার করতে দক্ষিণ কোরিয়ান সরকারের জোড়া তালি দেয়া উদ্ধার কাজ পরিচালনার বিস্তারিত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর জনগণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

দায়ভার থেকে রেহাই পেতে সরকারের দেওয়া নানা কৈফিয়ত কেবলমাত্র তোতা পাখির মতো আওড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষ এবং মূল ধারার রক্ষণশীল প্রচার মাধ্যমের দিকে অনলাইন ব্যবহারকারীরা তাদের নিশানা তাক করেছেনঃ 

সরকারের অন্তহীন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, তাদের অযোগ্যতা এবং মিথ্যার ফুলঝুড়ি এবং প্রচার মাধ্যমগুলোর বিরামহীন মিথ্যা বলে যাওয়া… এসব কিছুই দূর্যোগে আক্রান্তদের পরিবারগুলোকে রাগিয়ে তুলেছে। সিউল ফেরি দূর্যোগের পর দেশটির সর্বনিম্ন পর্যায় প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। 

এই সব খবর থেকে প্রেসিডেন্টকে একেবারে উধাও করে ফেলা হয়েছে। উদ্বিগ্ন সরকারি কর্তৃপক্ষের হঠকারিতা এবং নানা ধরনের ভুল ও তাদের অন্যান্য ব্যর্থতা সম্পর্কে প্রচার মাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে তিনি একেবারেই অনুপস্থিত। ডুবে যাওয়া সিউল ফেরি থেকে প্রথমে ক্যাপ্টেন যেভাবে অদৃশ্য হয়েছে সেভাবে সরকারের সব ধরনের ভুল প্রতিবেদন থেকে তিনি পুরোপুরি গায়েব হয়ে গেছেন।  

সিউলের ধ্বংস প্রাপ্ত ফেরির ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ভিডিও ফুটেজ প্রচার মাধ্যমগুলোতে দেখানো হয়েছে। ফেরিটি উদ্ধার কাজের সময়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ধারণ করা দৃশ্যও দেখানো হয়েছে। যদি আমরা শুধুমাত্র প্রচার মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনের দিকে তাকিয়ে দেখি, তবে মনে হবে উদ্ধার কাজ বেশ ভালোভাবেই চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যদিও দূর্ঘটনাটি ঘটার প্রাথমিক অবস্থায় যাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে তারা ছাড়া আর কাউকে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা এখন আর নেই। উদ্ধার কাজে তেমন কোন অগ্রগতি নেই, তবুও প্রচার মাধ্যমগুলো অপ্রয়োজনীয় কথা বলেই যাচ্ছে। প্রচার মাধ্যমগুলো আমাদেরকে যা দেখাচ্ছে, বাস্তব চিত্র তাঁর থেকে একেবারেই আলাদা। 

এই দূর্যোগ থেকে সুযোগ নেওয়া রাজনীতিবিদেরা আবার আগুনে ঘি ঢালার মতো নিষ্ঠুর আচরণ করছেন।

ক্ষমতাসীন সায়েউনরি পার্টির একজন আইন প্রণেতা একজন দূর্যোগ কবলিত ব্যক্তির বাবা-মাকে [কোরিয়ান] ভুলভাবে দোষারোপ করার কারণে জনরোষের শিকার হয়েছেন। সেই আইন প্রণেতা তাদের বিরুদ্ধে বহিরাগত হয়েও “বিশৃঙ্খলা উস্কে দেওয়া এবং সরকারের প্রতি আক্রোশ প্রকাশ” করার অভিযোগ এনেছেন।  

এখন পুলিশ এমন একজন লেখককে [কোরিয়ান] খুঁজছে, যিনি ফেসবুকে লিখেছেন, “যারা দক্ষিণ কোরিয়াতে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, তারা অর্থাৎ উত্তর কোরিয়ার পক্ষের সমর্থকেরা সিউল ফেরি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে”।  

জনগণকে “লাল কমিস” এবং “উত্তর-পক্ষের [কোরিয়ান সমর্থক]” নামে বিভক্ত করার এই কৌশলটি একটি নিত্য দিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কতোটা ভয়াবহ এই নিষ্ঠুরতা ? যখনই কোন বিষয়ে মতবিরোধ তৈরি হচ্ছে, তখনই একে অন্যকে কেবল “উত্তর-পক্ষের” বা “উত্তর কোরিয়ান গুপ্তচর” হিসেবে দোষারোপ করছে। সিউল উদ্ধার কাজের প্রতি যারা বিন্দু মাত্র আশা হারাননি, তারা এ ধরনের মন্তব্য শুনে প্রচন্ড অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পড়ে যান এবং সহজেই দুঃখ পেয়ে যান। আপনারা কি বলছেন দেখুন। 

যেহেতু সমগ্র দেশটিকে হতাশা গ্রাস করে ফেলছে, যেহেতু সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক উক্তিকারীরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তাই ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের সমর্থকেরা এখন “উত্তর-পক্ষ” বিশেষণ শব্দটিকে এই দূর্যোগের সাথে জুড়ে দিয়েছে। এ ধরনের দূর্যোগ দেশটিতে কেন দেখা দিল, সে সম্পর্কে এই পরিবেশ আমাকে ভাবতে বাধ্য করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি দোষ ত্রুটিকে “উত্তর-পক্ষ” ফন্দি-ফিকির দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া নেতৃত্বকে আমরা পরিবর্তন করতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই প্রশ্নের কোন উত্তর পাব না। 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .