
একজন শ্রমিক হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মাসে ন্যূনতম
মজুরী ১৬০ ডলারের দাবি জানাচ্ছেন। ছবিটি মু সচুয়ার ব্লগ থেকে নেওয়া।
কম্বোডিয়ার প্রায় দশ হাজার পোশাক কর্মী সারা দেশে পালিত ধর্মঘটে অংশ গ্রহণ করেছে। মাসিক ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ১৬০ মার্কিন ডলার করার জন্য সরকারকে চাপ দিতে তারা এই কর্মসূচী পালন করছে। বর্তমানে তাদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি মাত্র ৮০ মার্কিন ডলার। কিন্তু সে দেশের শ্রমিক কাউন্সিল মূল বেতনের মাত্র ১৫ মার্কিন ডলার মজুরি বাড়াতে ইচ্ছুক। একজন সরকারি কর্মকর্তা শ্রমিকদের বলেছেন, ন্যূনতম মজুরি ১৬০ মার্কিন ডলার করার এই দাবি আগামী ২০১৮ সাল নাগাদ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
তৈরি পোশাক খাত কম্বোডিয়াতে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি রপ্তানি শিল্প। এই খাত ৬ লক্ষেরও বেশি লোকের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
আন্দোলনরত শ্রমিকেরা নমপেনে শ্রম মন্ত্রনালয়ের সামনে এক পাশের রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। যেহেতু ধর্মঘটের ব্যাপ্তি বেড়েই চলেছে, তাই কারখানাগুলোকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। জন ভিনক রিপোর্ট করেছেনঃ
মজুরি বৃদ্ধির জন্য আন্দোলনরত শ্রমিকরা সারা দিন ধরে শ্রম মন্ত্রনালয়ের পাশের রাস্তাটি অবরোধ করে রেখেছে।
নমপেনের প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কামবলে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সামনে আরেকটি রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এসইজেডের ভিতরে আন্দোলনরত শ্রমিকেরা প্রবেশ করার চেষ্টা করলে দাঙ্গা পুলিশ ধাওয়া করে তাদেরকে দূরে সরিয়ে দেয়। এরপর তারা সেই সড়কটিতে অবস্থান নেয়। এসইজেড অঞ্চলটিকে দুই স্তর কন্টেইনার এবং কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে।
Garment workers protest at Labor Ministry continues peacefully but many express anger at gov't ignoring their economic hardship
— Kevin Doyle (@doyle_kevin) December 27, 2013
গার্মেন্টস শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে শ্রম মন্ত্রণালয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু অনেকেই তাদের অর্থনৈতিক কষ্ট উপেক্ষা করার জন্য সরকারের উপর রাগ দেখিয়েছেন।
Another pic from this morning when 2k factory workers block the road in front of the Ministry of Labour #Cambodiapic.twitter.com/JW7GOqQb43
— Ruom Collective (@RuomCollective) December 27, 2013
আজ সকালের আরেকটি ছবি, যেখানে দুটিকে কারখানার শ্রমিকরা শ্রম মন্ত্রণালয়ের সামনের রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে।
Entrance to Ministry of Labor, Phnom Penh pic.twitter.com/LcfzThMRGq
— Kevin Doyle (@doyle_kevin) December 27, 2013
নম পেনের শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রবেশিকা।
Redistributing and optimizing nation's wealth better than $160. Luxury cars, villas or decent living standard for all pic.twitter.com/jWfmllapMx
— oudomnimith (@oudomnimith) December 27, 2013
১৬০ ডলারের চেয়েও বেশি ভালো জাতীয় সম্পদের পুনরায় বিভাজন এবং সর্বোচ্চ ব্যবহার করা । বিলাসবহুল গাড়ি, বাগানবাড়ি বা সবার জন্য উপযুক্ত জীবনযাত্রার মান।
নিচে একটি ভিডিও রয়েছে। ভিডিওটিতে শ্রমিক ও পুলিশের মাঝে সংঘর্ষের চিত্র দেখা যাচ্ছেঃ
আন্দোলরত শ্রমিকরা বিরোধী দল কম্বোডিয়া জাতীয় উদ্ধারকর্তা দলের সমর্থন পেয়েছে। দলটি শ্রমিকদের ১৬০ মার্কিন ডলার নূন্যতম মজুরি দাবির পক্ষে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে তাদের সমর্থন জানিয়েছেঃ
অতি দ্রুত যদি নূন্যতম মজুরি বাড়িয়ে ১৬০ মার্কিন ডলার না করা হয়, তবে খাদ্য দ্রব্য এবং জীবন ধারণ ব্যয় বাড়ার কারণে গার্মেন্টস শ্রমিকদের পক্ষে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। অতিসত্বর দাবি মেনে না নিলে তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদন বন্ধ করে যে ধর্মঘট চালানো হচ্ছে, তা আরও দীর্ঘায়িত হবে।
বিরোধী দল প্রতিদিন নমপেন উদ্যানে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করছে। তারা ক্ষমতাসীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করতে চাপ প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যে এমনটা করছে। এভাবে তারা এ বছরের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করছে বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। গত তিন দশক ধরে প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ক্ষমতায় আছেন। যদিও তাঁর দল সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে বেশ কয়েকটি আসন হারিয়েছে।
অনেক শ্রমিকই বিরোধী দলের র্যালিতে যোগ দিচ্ছেন। এটি হয়তোবা আবারও হুন সেন প্রশাসনের ভীতকে দূর্বল করে দিতে পারে। সরকার তাদের দাবি না মেনে নেয়া পর্যন্ত শ্রমিক ইউনিয়নগুলো আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছে।
অতঃপর, কারখানা মালিকরা হুশিয়ারী দিয়ে বলেছে, চলমান এই ধর্মঘট অর্থনীতির উপর এবং শ্রমিকদের অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারা সরকারকে এই “অবৈধ ধর্মঘটের পক্ষে অসহনশীল” আচরণ দেখানোর জোর আহ্বান জানিয়েছে। কম্বোডিয়ার মানবাধিকার কেন্দ্র তাদের এই আবেদনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটি “শ্রমিক অসন্তোষের মূল কারন” খতিয়ে দেখতে চায়ঃ
অবৈধ ধর্মঘটের উপর অসহনশীলতা প্রদর্শনের আহ্বান জানানোয় সিসিএইচআর এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এ ধরনের বিবৃতি গার্মেন্টস খাতের ভিতরের সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে দিবে। এ ধরনের ধর্মঘটের বৈধতা নিয়ে বিবেচনা না করে অসহনশীলতা নীতি অনুসরণ করলে কেবল মাত্র শ্রমিক অসন্তোষের মূল কারণগুলোকে অবহেলা করা হবে। এতে করে শ্রমিক এবং ইউনিয়ন সদস্যদের বিরুদ্ধে সম্ভবত আবার আরও ব্যাপক সহিংস শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাম্প্রতি এই ধর্মঘট কম্বোডিয়াতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দুরবস্থার কথা তুলে এনেছে। বিশেষ করে, শ্রমিক কল্যান কর্মসূচীকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, তাঁর জন্য সরকার এবং গার্মেন্টস শিল্পের আরও উন্নততর পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেছে।