বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনীর উপর ভিত্তি করে নির্মিত এক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “ ৩৩ বছর পর হংকং ধ্বংস হয়ে যাবে” ব্যাপক ভাবে ইন্টারনেটে প্রদর্শিত হয়েছে এবং এটি চীনের সেন্সর বিভাগের ক্রোধের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৩ মার্চ, ২০১৪-এ আপলোড করা, ৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের এই ভিডিও ইতোমধ্যে ৬৪৫,০০০ বার দেখা হয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে উদাসীন হংকংবাসীরা এক ধেয়ে আসা উল্কার বিষয়ে নিস্পৃহ- যেটি ২০৪৭ সালে এলাকাটিতে আঘাত হানতে যাচ্ছে, যে সালটিতে হংকং চীনের এক বিশেষ প্রশাসনিক এলাকায় পরিণত হতে যাচ্ছে, আর এর মাধ্যমে মূল চীনা ভূখণ্ডের বিপরীতে হংকং যে আলাদা আইনী সুবিধা পেত তা আর থাকবে না।
এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে উল্কার আঘাত হানার সংবাদের পর হংকং-এর দুই তৃতীয়াংশ নাগরিক এবং একই সাথে বিশাল বিশাল সব সব প্রতিষ্ঠান এলাকাটি ত্যাগ করে চলে যাবে। এই ভাবে খালি হয়ে যাওয়ার ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধি লাভ করবে এবং সকলের গৃহ পাবার ব্যবস্থা উন্মুক্ত হয়ে যাবে। শীঘ্রই ধ্বংস হয়ে যাবার সম্ভাবনা সত্ত্বেও এক অর্থে শহরটির আবার পুনর্জন্ম ঘটবে। ঘটনাক্রমে, আঘাত হানার আগেই বিজ্ঞানীরা উল্কাটিকে ধ্বংস করতে সক্ষম হবে।
এই ভিডিও ক্রমশ বাড়তে থাকা ভীড় এবং বস্তুবাদী হয়ে ওঠা ও ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের হাত থেকে চীনের হাতে হস্তান্তরের ফলে মূল চীনা ভূখণ্ড থেকে আসা অধিবাসীদের সংখ্যাবৃদ্ধির মত রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিষয়ে হংকংবাসীদের উদ্বেগের বিষয় উন্মোচন করেছে। মূল চীনা ভূখণ্ডের অধিবাসীদের কাছে এই চলচ্চিত্র ঠিক বিপরীত এক খুব “সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির” বার্তা প্রেরণ করেছে, আর তা হচ্ছে চীনের অর্থনৈতিক সমর্থন ছাড়া হয়ত হংকং-এর অনেক আগেই ইতি ঘটত।
আইসিইউইনমাইহার্ট নামক এক নেট নাগরিক ইউটিউবে মন্তব্য করেছে:
আমার কাছে ইতোমধ্যে হংকং-এর ইতি ঘটেছে। ১৯৯৭ সালের আগে আমি যে স্বাধীনতার, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন এবং নিরপেক্ষতার সুবাতাস পেতাম তার পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
অনিবার্যভাবে ইয়াকুর মত চীনা ভিডিও ওয়েবসাইটগুলোতে স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই ভিডিওটির প্রদর্শনী বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেই চাং দাও নামক ব্লগের সংবাদ অনুসারে বাইডু এবং সিনা ওয়েবো উভয় স্থানে “৩৩ বছর” দিয়ে অনুসন্ধান করলে কোন কিছু আসছে না। চায়না ডিজিটাল টাইমসের সংবাদ অনুসারে চীনের প্রচারণা বিষয়ক কর্তৃপক্ষের আদেশ অনলাইনে প্রকাশ হয়ে পড়েছে:
国信办:全网立即查删1,“声援、营救唐吉田等失踪律师”的相关信息, 2,鼓吹港人“自救”的科幻短片“香港将于33年后毁灭”相关视频、文字等。
রাষ্ট্রীয় তথ্য পরিষদ অধিদপ্তর: দ্রুত নিন্মোক্ত উপাদানগুলো সকল ওয়েব সাইট থেকে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে, (১) “ট্যাং জিটিয়ান এবং অন্য নিখোঁজ আইনজীবীদের সমর্থন এবং উদ্ধার”; (২) ভিডিও, টেক্সট ইত্যাদি যা “ ৩৩ বছর পর হংকং ধ্বংস হয়ে যাবে” শিরোনামে হংকংবাসীরা নিজেদের রক্ষা করল এমন এক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে তুলে ধরে।
ইক কান চেয়ুং একজন ভিএফএক্স শিল্পী এবং উক্ত ভিডিওর পোস্ট প্রোডাকশন সুপারভাইজার, যিনি “দি ডিপ্লোম্যাটকে” জানাচ্ছে কেন সে মনে করে যে এই ভিডিওটি মূল চীনা ভূখণ্ডে নিষিদ্ধ হয়েছিল
আমরা বিশ্বাস করি, যে কারণে কর্তৃপক্ষ ভিডিওটিকে সেন্সর করেছে তা হচ্ছে তারা বিশ্বাস করে তারা সমাজকে শান্তিপূর্ণ রাখার কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা মনে করি তারা যা করছে তা হচ্ছে মানুষকে সত্য না জানিয়ে তারা এর থেকে নাগরিকদের দূরে রাখছে, এর এটি হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত না নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত মূল চীনা ভূখণ্ড থেকে পর্যাপ্ত নাগরিক আমদানি করে চীন চেষ্টা করছে শ্বাসরোধ করে হংকংকে ধ্বংস করে ফেলতে। এরপর হংকং-এ আর কোন নির্বাচন হবে না।