
একটি কারখানায় কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের একটি ক্লিনিকে পাঠানো হয়। কমিউনিটি লিগ্যাল এডুকেশন সেন্টারের ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া ছবি।
এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে কম্বোডিয়ার গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে গণ হারে কর্মীরা অচেতন হয়ে পড়ছে বলে তিন দিন ধরে রিপোর্ট করা হয়েছে।
দেশটির রাজধানী শহর নমপেনে এ পর্যন্ত মোট ৩৩৭ জন গার্মেন্টস কর্মীর সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী কর্মী। চিকিৎসার জন্য তাদের চারটি পৃথক ক্লিনিকে পাঠানো হয়েছে।
সাড়া সপ্তাহ ধরে ভানতানাক পার্কের ভিতরে অবস্থিত তিনটি গার্মেন্টস কারখানার ১১ টি দালানে গণ হারে অজ্ঞান হয়ে পরার এই ঘটনাগুলো ঘটেছে। কারখানা তিনটি হচ্ছে শেনঝু, দাকিয়ান টেক্সটাইল এবং নিউ ওয়াইড। কারখানা তিনটির নাম কম্বোডিয়ার বাইরে তেমন পরিচিত না হলেও, এখানে খেলার পোশাকের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্র্যান্ড এডিডাস, পুমা এবং নাইকির জন্য পোশাক তৈরি করা হয়।
গার্মেন্টস খাত থেকে কম্বোডিয়া প্রতি বছর রপ্তানি বাবদ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। এই খাতে দেশটির ৬ লক্ষেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। তবে সেখানে গার্মেন্টস কর্মীরা অনেক বছর ধরেই নগণ্য মজুরি প্রদানের অভিযোগ করে আসছে।
শ্রমিক দলগুলো প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছে যে, “অনিরাপদ খাবার ও পানি এবং কাপড়ের রঙয়ের কড়া গন্ধের” কারনে কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। প্রায় নিয়মিতভাবেই গার্মেন্টস কর্মীদের এই ধরনের গণ হারে অচেতন হয়ে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব খবরে সাধারনত কারখানার ভেতরে কাজের খারাপ পরিবেশকে এর কারন হিসেবে দায়ী করা হয়েছে।
গার্মেন্টস কর্মীরা গত ডিসেম্বর মাসে তাদের নূন্যতম মাসিক মজুরি ৮০ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৬০ মার্কিন ডলার করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে। কিন্তু সরকার বলছে, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে তাদের মজুরি সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ মার্কিন ডলার বাড়ানো সম্ভব। সরকারের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গার্মেন্টস ইউনিয়নগুলো সারা দেশে ধর্মঘট পালন শুরু করে। তবে জানুয়ারি মাসে সহিংস উপায়ে পুলিশ তাদের ধর্মঘট ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এই সপ্তাহে যে তিনটি কারখানার কর্মীরা গণহারে অচেতন হয়ে পড়েছে, সে তিনটির মাঝে একটি কারখানা থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরের একটি স্থানে পুলিশ এবং গার্মেন্টস কর্মীদের মাঝে সেই রক্তাক্ত মারামারির ঘটনাটি ঘটেছিল।
This April 3, more than 200 garment workers fainted in Canadia Park, where bloody strike in Jan 2014. CMO reported. pic.twitter.com/S5RUQQDjwn
— Sopheak SREY (@sopheaksrey) April 3, 2014
এই এপ্রিল মাসের ৩ তারিখে, ২০০ জনেরও অধিক গার্মেন্টস কর্মী কানাডিয়া পার্কে অচেতন হয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে এখানেই রক্তাক্ত সংঘর্ষটি ঘটেছিল।
দ্যা কমিউনিটি লিগ্যাল এডুকেশন সেন্টার গার্মেন্টস কর্মীদের অচেতন হয়ে যাওয়ার সাথে তাদের পুষ্টিহীনতা এবং কম মজুরির একটি যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে। দলটি এসব নামী দামী ব্র্যান্ডগুলোকে তাদের যোগান-শৃঙ্খলে কর্মরত শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতির জন্য জোড়ালো সুপারিশ করেছেঃ
যেখানে এডিডাস, পুমা এবং নাইকির মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর বিভিন্ন নীতিমালা, নিয়মাবলী এবং মাপকাঠি বলছে যে কর্মীদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যথাযথ মজুরি প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। তাদের ন্যায্য সঞ্চয় এবং খরচের জন্যও মজুরি প্রদান অত্যাবশ্যকীয়। সেখানে এই ঘটনাতে তারা সহযোগী বলা যায়। বিভিন্ন নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও তাদের যোগান-শৃঙ্খলে কর্মরত শ্রমিকেরা কোন বাস্তব সুবিধা পাচ্ছে না।
এডিডাস, পুমা এবং নাইকির মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি আমাদের আহ্বান, তারা যেন ন্যায্য মজুরির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কেননা, বর্তমানে যে পরিমান মজুরি প্রদান করা হয় তাতে শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয় না। এমনকি এই পরিমান মজুরি দিয়ে তারা মানুষের মর্যাদা সম্পন্ন একটি জীবন যাপন করতে পারেন না।
দলটি সরকারকেও গার্মেন্টস কর্মীদের মজুরি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেঃ
যতো দ্রুত সম্ভব মজুরি নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। যে সব ব্যবসা বর্তমানে কম্বোডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত আছে সে সব ব্যবসা ক্ষেত্রে জড়িত সকল ধরনের দুর্নীতি বন্ধের জন্যও আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।