পাকিস্তানের জাতীয় পতাকাবাহী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান সংস্থা পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিমান (পিআইএ) গত ছয় মাসে এর বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ৩০০ জন কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে। এই ৩০০ জন কর্মী ভুয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ব্যবহার করে চাকরি নিয়েছে বলে প্রমাণিত হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
পিআইএ এর ১৬ হাজার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর পরিচয়পত্রের সত্যতা যাচাই করতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশকৃত প্রচেষ্টার একটি অংশ হিসেবে ভুয়া সনদপত্রের এই বিষয়টি উদ্ঘাটিত হয়েছে। চাকুরিচ্যুত কর্মীদের মাঝে পাইলট, ফ্লাইট এটেন্ডেন্ট এবং প্রকৌশলীরাও রয়েছেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্যা নেশন সংবাদপত্রটি রিপোর্ট করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভুয়া সনদ দিয়ে চাকরিপ্রাপ্ত বলে যাদের সন্দেহ করা হয়েছে, তারা সাবেক সরকারের মদদপুষ্ট লোক।
কেলেঙ্কারিটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে। তখন বিমানের বিপুল সংখ্যক কর্মীর বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ জমা দিয়ে চাকরি নেয়ার অভিযোগ আনা হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুয়া সনদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের এটাই প্রথম সংগ্রাম নয়। ২০০৮ সালে সাবেক সামরিক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনী আইনের সংশোধনী পাস করা হয়েছে। এই সংশোধনী অনুযায়ী পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় হতে সনদপত্র অর্জন করা বাধ্যতামূলক করা হয়। তখন বিপুল সংখ্যক রাজনীতিবিদের জন্য এই আইনটি একটি চ্যালেঞ্জে পরিনত হয়। কারন তাদের এই বাধ্যবাধকতা পূরণের সুযোগ নেই। এই আইন অনুযায়ী নিজেদেরকে যোগ্য প্রমাণের জন্য তাদের মাঝে কেউ কেউ ভুয়া সনদপত্র নিয়েছেন।
PIA fires 300 fake degree holders! Fake degrees is an epidemic in Pakistan! How will we cure it?
— Shireen Mazari (@ShireenMazari1) April 5, 2014
পিআইএ তাঁদের ৩০০ জন কর্মীকে বরখাস্ত করেছে। জাল ডিগ্রী পাকিস্তানে মহামারীর রূপ নিয়েছে! আমরা এটা কিভাবে নিরাময় করব ?
বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিপুল সংখ্যক মিথ্যা প্রমাণ পত্রাদি প্রকাশিত হলে দেশটির সুপ্রীম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক সরকারের সকল পার্লামেন্ট সদস্যের বিশ্ববিদ্যালয় সনদ যাচাই বাছাই করতে নির্বাচন কমিশনকে আদেশ দেয়। সব মিলিয়ে তাঁদের সংখ্যা ১,১০০ জন। এই আদেশের ফলশ্রুতিতে অনেক আইন প্রনয়ণকারীও সংসদে তাদের আসন হারাচ্ছেন। তবে যারা এ সকল আইন প্রণয়নকারীদের ভুয়া সনদপত্র দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
সারা দেশের অসংখ্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী এবং ডাক্তারদের বিরুদ্ধেও একই রকম অভিযোগ আনা হয়েছে। এই বিস্ময়কর ঘটনাগুলো প্রকাশের ধারাবাহিকতায় সুপ্রীম কোর্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কর্মচারীদের সকল সনদপত্রের সত্যতা যাচাই করার এবং এর ফলাফল হিসেবে একটি সম্মতি রিপোর্টের মাধ্যমে তা পেশ করার আদেশ করেছে।
দ্যা নেশন পত্রিকার ওয়েবসাইটে “পাক প্যাট্রিয়ট” এই ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি জাল সনদপত্র ব্যবহারের কারণে বরখাস্ত পিআইএ কর্মীদের শাস্তি দাবি করেছেনঃ
এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে পুলিশের জালিয়াতি মামলা করা উচিৎ। তাদের রাজনৈতিক প্রভাব সবার সামনে ফাঁস করে দেয়া উচিৎ।
এসব পিআইএ কর্মীদের একটি তালিকা সংবাদপত্রে প্রকাশ করা উচিৎ। তাদের লজ্জা হওয়া উচিৎ।
তবেই এদেশে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে।
জনগণকে জানতে দিন কোন রাজনীতিবিদেরা এ ধরনের দুর্নীতির চর্চাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
পরবর্তী নির্বাচনের জনগনের উচিৎ এই ভন্ড লোকদের ভোট না দেওয়া।
সাদ ইকবাল নিরাশ হয়ে ফেসবুকে লিখেছেনঃ
হা হা হা, এটা জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের একটি কৌশল মাত্র… এই নকল ডিগ্রী ধারী সবার রাজনৈতিক প্রভাব আছে। এই ক্ষমতাবলে তারা আবার কর্পোরেশনে ফিরে যাবে। একই যোগসাজশের গুণে তারা আবার চাকরিতে ফিরে যাবে অথবা তাঁদেরকে বেতনের অতিরিক্ত অন্যান্য পাওনা বা ভাতা এবং বিশেষ সুযোগ সুবিধা সহকারে আবার পুনর্বহাল করা হবে।
সাজিয়া খান-মাহবুব মন্তব্য করেছেনঃ
যদি এটি কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত পদক্ষেপ না হয়ে থাকে, তবে এটি অত্যন্ত চমৎকার একটি উদ্যোগ…
যখন ফাঁস হয়ে গেছে যে আইন প্রণয়নকারীরাই জাল সনদপত্র নিয়েছেন, তখন তরুণদের নেটওয়ার্ক দ্যা ভয়েস অব ইয়ুথের তাইয়্যেবা ইফতিখার এই পরিস্থিতি নিয়ে একটি কৌতুকপূর্ণ বিশ্লেষণ প্রদান করেছেনঃ
এই পরিস্থিতি সম্পর্কে এমন শোরগোল আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আসলে আমি বলতে চাচ্ছি, তাদের কাছে অবশ্যই পড়াশোনা করার চেয়ে বরং আরও ভাল কোন কাজ করার ছিল, হ্যাঁ তাদের সবার কাছেই। সংশোধনীঃ তারা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, হয় কোন সনন্দ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন, না হয় পড়াশোনাই করবেন না। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কেন তা বুঝতে পারছেন না ? শুধুমাত্র বাকি “সাধারণ” পাকিস্তানিদের কাজ হচ্ছে পড়াশোনা করা এবং পড়াশোনা করে আসল সনদ অর্জন করা। কেননা, সাধারণ পাকিস্তানিরা যদি ভুয়া সনদ নেয়, তবে সেটা হবে আইনের লঙ্ঘন। আর তাদেরকে আইন অমান্য করার জন্য কারাবরণ করতে হবে। মনে রাখবেনঃ এই জাতির ধনী এবং ক্ষমতাবান লোকেরা এই আইনের উর্ধ্বে থাকবেন।