“কোন ঘটনা যদি নথিভুক্ত না করা হয় বা সে সম্পর্কে কোন ব্লগ লেখা না হয়, তবে ঘটনাটি সবাই ভুলে যায়”- কথাগুলো বলেছেন প্যালেস্টাইনের সাংবাদিক, ব্লগার, সুরকার এবং দ্যা ব্লগ বাসের প্রতিষ্ঠাতা সাইদ কারজুন।

ব্লগ বাসটি ফিলিস্তিনের বিভিন্ন বিষয়ের উপর রিপোর্ট করার জন্য ব্লগার, সক্রিয় কর্মী এবং সাংবাদিকদের সাথে নিয়েছে।
এই বাসে ব্লগার, সক্রিয় কর্মী ও নাগরিক সাংবাদিকরা একত্রিত হয়েছেন। তাঁরা অনলাইনে হয়তো একে অপরের সাথে ইতোমধ্যে পরিচিত। তবে অনলাইনে পরস্পরের পরিচিত হলেও ব্লগ বাসের মাধ্যমে বাস্তব জীবনে হয়তোবা তাঁরা এই প্রথম একে অন্যের দেখা পেলেন।

জর্ডান ভ্যালিতে একজন “ব্লগ বাস” অংশগ্রহণকারী একদল শিশুর সাথে কথা বলছেন। তিনি সেই সব শিশুদের প্রাত্যহিক জীবন, সমস্যা এবং স্বপ্নের নানা কথা শুনছেন।
বাসটি স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রিপোর্ট করতে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেমন, তরুণদের মাঝে সচেতনতা তৈরি, নারী বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়, বেকারত্ব, ইসরায়েলী দখলের কারনে সৃষ্ট বিভিন্ন অসুবিধা এবং এমনি আরও নানাবিধ সমস্যা।
যেকোন সমস্যা নিয়ে রিপোর্ট করতে এই বাসের প্রত্যেক লেখক তাদের প্রিয় ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে থাকেন। তাই এটিকে আমরা সংক্ষেপে “ব্লগারদের একটি ভ্রাম্যমান মতবিনিময় সভা” বলতে পারি।
কারজুনের ব্লগের মতে, ছত্রভঙ্গ হয়ে থাকা এক দল ব্লগারকে একত্রিত করাই হচ্ছে এই পদক্ষেপের প্রধান লক্ষ্য [আরবি]। এই ছত্রভঙ্গ হয়ে থাকা ব্লগারদের মাঝে এতোদিন শুধুমাত্র একটি অঞ্চল নিয়ে লেখালেখি করার ঝোঁক ছিল – তবে ব্লগ বাসের বদৌলতে তারা এখন একত্রিত হয়ে আরও বড় বড় সমস্যা যাচাই বাছাই করে দেখতে পারছেন।
ব্লগাররা আশা করছেন, একটি অঞ্চল এবং এটির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে করা তাদের রিপোর্টের মাধ্যমে প্রধান ধারার প্রচার মাধ্যম এবং নীতি নির্ধারক উভয়েরই দৃষ্টি তাঁরা আকর্ষণ করতে সক্ষম হবেন। কেননা, স্থানীয় অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর মতো সক্ষমতা কেবল তাদেরই আছে।
- “একুশ শতকে এসেও জর্ডান ভ্যালিতে বিদ্যুৎ পৌছাইনি #ব্লগবাস” এই স্লোগান সম্মিলিত প্লাকার্ডটি ধরে আছেন “ব্লগারস মোবাইল কনফারেন্স” এর প্রথম ট্যুরে অংশ নেওয়া একজন ব্লগার।
এই বাসটিতে শুধুমাত্র ব্লগই লেখা যায় না, বরং বাসটিতে অংশগ্রহণকারীরা ছবি তুলতে, পডকাস্টস, ইউটিউব ভিডিও, টুইটার, ফেসবুক, গুগল প্লাস, সরাসরি বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং স্মার্ট ফোন এ্যাপগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
গত ২৭ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে জর্ডান উপত্যকা সফরের মাধ্যমে বাসটি উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি প্রথমে প্যালেস্টাইনের পশ্চিম তীর এবং জর্ডানের মাঝে থাকা সীমান্তে ভ্রমণ করেছে।

ব্লগ বাসের প্রথম ট্যুরে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় সংস্থার সমর্থনে ব্লগ বাস বড় বড় প্রচার মাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এসব প্রচার মাধ্যম তাদের কাজের প্রশংসা করেছে এবং প্যালেস্টাইনে [আরবি] জীবনের নিষ্ঠুর বাস্তবতার উপর আলোকপাত করার জন্য তাদের অসামান্য ভূমিকার কথা তুলে ধরেছে।
দ্যা ব্লগ বাস কাজ শুরু করে দিয়েছেঃ
পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ …
রাইজিং ভয়েসেসের সাথে একটি ই-মেইল সাক্ষাৎকারে সাইদ বলেছেন, ব্লগ বাসের আয়োজকদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে এই প্রকল্পটির জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা। এমন একটি অ্যাপ তৈরি করা যা ব্লগারদের তাদের ব্লগগুলোর সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করবে। এগুলো ব্লগ বাস মঞ্চে তাদের লেখা সরাসরি প্রকাশ করতেও সাহায্য করবে। এতে ছবি, ভিডিও, মানচিত্র, অডিও এবং জনগনের বিভিন্ন ভাষ্য ও প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তিনি আরও বলেছেন, নীতি নির্ধারক এবং প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের এই বাস সফরে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তারা এই প্রচারাভিযান সম্পর্কে বিভিন্ন জনসভায় ব্লগারদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিবেন।
ব্লগ বাস ইউনো নামের একটি বৃহত্তর প্রকল্পের একটি অংশীদার মাত্র। প্রকল্পটি ফিলিস্তিনে তথ্য অধিকার প্রসার নিয়ে কাজ করছে। এছাড়াও ব্লগ বাস এ বছর সম্মানজনক হাল্ট পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে।

প্রথম ব্লগ বাস ট্যুরে অংশ নেওয়া ব্লগাররা
সবগুলো ছবি দ্যা ব্লগ বাসের অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।