রাশিয়ার ক্রিমিয়া অধিগ্রহণের ফলে রাশিয়ার প্রতি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে এখন আলোচনা চলছে। তবে বিষয়টি যেন ইউরোপিয়ান রাজনীতির আরেকটি গতানুগতিক ঘটনায় পরিনত হতে যাচ্ছে। তবে যেকোন ভাবেই হোক, এটি পরিবর্তিত হচ্ছে। এ সপ্তাহে ইউক্রেনে একটি সৃজনশীল বর্জন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই সৃজনশীল বর্জন কার্যক্রমটি রাশিয়ান ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। ইউক্রেনিয়ান নারীরা “কোন রুশকে এটি দিও না” শিরোনামে একটি নতুন প্রচারাভিযানের আয়োজন করেছেন। এই প্রচারাভিযানটি হচ্ছে রাশিয়ান পুরুষদের বিরুদ্ধে একটি যৌন নিষেধাজ্ঞা। এই প্রচেষ্টা রাশিয়ান ভোক্তা পণ্যের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর আন্দোলনের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে। এমনকি এই প্রচারাভিযানের কাজে সারা ইউক্রেন জুড়ে প্রধান প্রধান সড়কে স্থাপিত কয়েকটি বিলবোর্ডও ব্যবহার করা হয়েছে।
যৌন সম্পর্ক বর্জন প্রচারাভিযানটি ইতোমধ্যে তাঁদের নিজেদের টি-শার্ট তৈরি করেছে। টি-শার্ট গুলোতে তাদের দাপ্তরিক লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। লোগোতে দেখা যাচ্ছে, দুইটি হাত একসাথে জড়িয়ে ধরে একটি উন্মুক্ত যোনিপথের মতো আকৃতি দেয়া হয়েছে (উপরে দেখুন)। টি-শার্টটিতে একটি স্লোগানও লেখা আছে । স্লোগানটি হচ্ছেঃ “কোন রুশকে এটি দিও না!” স্লোগানটির নিচে ইউক্রেনিয়ান কবি তারাস শেভচেনকোর লেখা একটি কবিতা “কাতেরিনার” একটি চরণ লেখা রয়েছে। কবিতাটি তিনি ১৮৩৮ সালে লিখেছিলেন। চরণটি হচ্ছেঃ “ও সুন্দরী প্রেয়সী, প্রেমে পড়ো, তবে কোন মোসকালির [রুশ পুরুষের] প্রেমে পড়ো না।”
এদিকে গত ২৩ মার্চ তারিখ থেকে রুশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এই যৌন সম্পর্ক বর্জনের টি – শার্ট পড়া বিরোধী দলীয় নেতা ভালেরিয়া নোভোদভোরস্কির একটি আলোকচিত্র প্রচার করতে শুরু করেন। নোভোদভোরস্কি একজন রুশ নাগরিক, যিনি তার অদ্ভুত চেহারা এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারের জন্য কুখ্যাত। কিন্তু অনলাইনে অনেকেই এ ব্যাপারটি বিশ্বাস করতে প্রস্তুত ছিলেন যে একজন রুশ বিরোধী দলের নেতা হয়েও রাশিয়ার ক্রেমলিন দখলের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি এই নিষেধাজ্ঞায় যোগদান করবেন।
উদাহরণস্বরূপ, রুশ পার্লামেন্টের সদস্য রবার্ট শেল্গাল নিম্নলিখিত মন্তব্যের সঙ্গে এই ছবিটি টুইট করেছেন:
Валерия Новодворская одним фото убила весь украинский секс-бойкот просто на корню.:) pic.twitter.com/8h3fcyxegN
— Роберт Шлегель (@Shlegel) March 23, 2014
একটি ছবি দিয়েই ভালেরিয়া নোভোদভোরস্কি সম্পূর্ণ ইউক্রেনীয় লিঙ্গের-বয়কট কার্যক্রমকে এর অন্তঃস্থলেই ধ্বংস করেছেন।
উল্লেখ, ছবিটি ফটো-শপের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। ছবিটি ২০১৩ সালের জুলাই মাসে রাশিয়ান-ইজরায়েলি সম্পর্কের (পটভূমিতে তাই ইজরায়েলি পতাকা) উপর নোভোদভোরস্কির দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের সময় তোলা। ব্যতিক্রমী সম্পাদনা দক্ষতার কেউ একজন নোভোদভোরস্কির এই বর্জনমূলক টি – শার্ট সংস্করণের ছবিটি তৈরি করেছেন, যেটি অনলাইনে বিদ্রুপ এবং খারাপ জনসংযোগ তৈরি করেছে।

স্পষ্টতই, ফটোশপ ব্যবহার করে আপনি যা করতে পারেন।
এই মুহূর্তে যৌন সম্পর্ক বর্জন প্রচারাভিযানের ফেসবুক গ্রুপে কেবল মাত্র ১৫৬ জন সদস্য রয়েছেন। তবে প্রচারাভিযানটি রাশিয়ান ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। দাপ্তরিক টি-শার্ট (নিচে দেখুন) পরিহিত দুইজন নারীর একটি ছবি রাশিয়ান নেটিজেনরা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন। প্রত্যাশিতভাবে এই বর্জনের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানানো বেশিরভাগ রাশিয়ান নেটিজেনই হচ্ছেন পুরুষ। তারা এই প্রচারাভিযানে চিড় ধরাতে এর সম্পর্কে যৌন বৈষম্যবাদী কৌতুক করতে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। রুশ জাতীয়তাবাদী ওয়েবসাইট স্পুটনিক এবং পোগ্রমের প্রধান সম্পাদক এগর প্রসভিরনিন এই যৌন নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে ফেসবুকে লিখেছেন। তিনি এই প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণকারীদের পতিতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। লাইভজার্নাল এবং আরও কয়েকটি ওয়েবসাইটে অন্যান্যরাও একই ধরনের কৌতুক করেছেন।
তবে উপরে দেওয়া ছবিটির দুইজন নারী পেশায় বেশ প্রসিদ্ধ (এবং তারা “বয়স্ক” ধরনের নারী নন)। ছবিতে (বায়ে) আছেন খবরের ওয়েবসাইট ডেলো ডট ইউএ’র প্রধান সম্পাদক ক্যাটেরিনা ভেনঝিক এবং (ডানে) আছেন ব্যবসা বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল ইকনমিকা কমিউনিকেশন হাব এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইরিনা রুবিস। ছবিটি গত ২১ মার্চ, ২০১৪ তারিখে ডেলো ডট ইউএ’র একটি অনুষ্ঠানে তোলা হয়েছে। সে অনুষ্ঠানে ভেনঝিক ওয়েবসাইটের “ইউক্রেনের শীর্ষ ১০০ নারী ব্যবসায়ী” প্রতিযোগীতার চূড়ান্তভাবে বিজয়ীদের নাম ঘোষনা করেন। সে অনুষ্ঠানটিতে রুবিসও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি এবং ভেনঝিক ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। একটি ছবিতে এই দুইজন মহিলা তাদের জামার উপর যৌন সম্পর্ক বর্জন প্রচারাভিযানের টি-শার্টটি পড়ে আছেন।
যৌন সম্পর্ক বর্জনের এই ধারনাটি কমপক্ষে ২,৪২৫ বছর পুরনো। কোন না কোন ভাবে এত বছর আগে গ্রিকরা প্রথম লেসিস্ট্রাটা নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছিল। সেই প্রহসনমুলক নাটকটিতে জোর করে পেলোপোনেশিয়ান যুদ্ধের অবসানের জন্য গ্রিক নারীরা তাদের স্বামী এবং প্রেমিকদের সাথে তাদের যৌন সম্পর্ক বর্জন করেছিলেন। এথেন্স ঐ যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সাত বছর আগে নাটকটি লেখা হয়েছিল।
আশা করা যাচ্ছে, ইউক্রেনিয়ানদেরও হয়তোবা এখন থেকে সাত বছর পর অর্থাৎ ২০২১ সালে সেই অনুগ্রাহকের ভাগ্য বরণ করে নিতে হতে পারে।