ভারতের উপকূলীয় এলাকা কেরালায় প্রতিবছর নভেম্বর মাসে শীতের শুরুতে থিয়াম উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এটি একটি লোক উৎসব। আদিবাসী নৃত্য-গীত আর উঁচু লয়ের ড্রাম বিটের সাথে মনোমুগ্ধকর গল্পবলার মধ্যে দিয়ে হাজারখানেক মন্দিরে এই উৎসব পালন হয়ে থাকে।
সাধারণত সমাজের নিম্নশ্রেণির মানুষেরা থিয়াম উৎসবে অংশ নিয়ে থাকেন। উৎসবে বলা সব গল্প এবং গানে সমাজব্যবস্থা এবং উঁচুতলার মানুষের নিষ্ঠুরতার ছবি ফুটে উঠে। থিয়াম উৎসবের মূল ব্যাপার হলো, যখন আর সবকিছুর দরজা বন্ধ হয়ে যায়, তখন ঈশ্বর একজন সাধারণ মানুষের মধ্যে দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করেন। ওই মানুষটি তখন ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী হন।
খ্যাতিমান ব্রিটিশ লেখক উইলিয়াম ডালরিম্পলের “নাইন লাইভস” নামে একটি বই আছে। সেখানে তিনি বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন, থিয়াম উৎসবের শুরুতে কখন একজন সাধারণ মানুষ কিছু সময়ের জন্য দেবতায় পরিণত হন:
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি থিয়ামের এই কয় মাসে এটি ঘটে। আমরা আমাদের ধরাবাঁধা কাজ ছেড়ে দেই। এই কয় মাস আমরা থিয়াম শিল্পী, আমরা দেবতা হয়ে যাই। তখন আমাদের সবকিছুর পরিবর্তন ঘটে। এ সময়ে আমরা মাছ, মাংস খাই না। স্ত্রী'র সাথে ঘুমানো আমাদের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আমরা গ্রামের সবার জন্য আর্শীবাদ বয়ে আনি। অশুভ আত্মাদের তাড়িয়ে দিই। আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা এবং ইচ্ছাপূরণের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হই। আমাদের মতো দলিতদের সাথেও গোঁড়া ব্রাক্ষণ রাও আমাদের পুজা করে, পায়ের ধুলো নেয়ার জন্য লাইন দেয়।
থিয়াম উৎসব নিয়ে অজস্র গল্প এবং গবেষণা রয়েছে। তবে এ অঞ্চলের বাইরের লোকদের কাছে এটা এখনো রহস্যই রয়ে গেছে। এ উৎসবের বেশিরভাগ কিছুই রাতে পালন করা হয়। আবার এর কিছু কিছু জিনিস দেখা নারীদের জন্য সম্পূর্ণ নিষেধ।
এতো কিছু সত্ত্বেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই উৎসবের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। অনেকে থিয়াম উৎসবের ছবি ফেসবুকে নারিকোদেথিয়াম২০১৪ হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে আপলোড করছে। অনিমেষ জেভিয়ার নামের একজন শিল্পী এবং গুগল প্লাস ব্যবহারকারী একটি টিভি স্টেশনের ওয়েবসাইটে উৎসব নিয়ে একটি আলোচনা লিখেছেন। এবং থিয়াম উৎসবের ছবি নিয়ে স্কেচ এঁকেছেন।
ফটোগ্রাফার, ব্লগার শাজি মুল্লুক্কারানের বাড়ি কেরালার কান্নুরের নারিকোদে। তিনি গুগল প্লাসে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন উৎসবে যোগ দিয়ে থিয়াম ফটোওয়াকে অংশ নেয়ার জন্য। তিনি গত বছরগুলোতে ফটোওয়াকে অংশ নিয়েছিলেন।

একজন থিয়াম শিল্পী দেবীর ভূমিকা পালন করছেন। ছবি তুলেছেন শাজি মুল্লুক্কারান। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।
সামাজিক মিডিয়ায় সক্রিয় আছেন এমন বিশ জনের বেশি মানুষ শাজি'র আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ক্যামেরা হাতে উৎসবে চলে আসেন। যার ফলে দেবতাদের পৃথিবীতে নেমে আসার দারুণ কিছু ছবি দেখতে পায় বিশ্ববাসী।
কুমার উপাসানা কুয়েত থেকে স্বল্প সময়ের জন্য কেরালায় এসেছিলেন। তিনি পুঠিয়া বাগাভাথি থিয়ামের খন্ড দৃশ্য চিত্র ভিডিও করে রেখেছিলেন:
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সেনা ভায়োভিন নারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে উৎসবের কিছু ছবি তুলেছেন: