- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

কেন থাইল্যান্ডের ধান চাষীরা বিক্ষোভ করছে?

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, থাইল্যান্ড, উন্নয়ন, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, ব্যবসা ও অর্থনীতি, রাজনীতি

Protesting farmers in front of the Ministry of Commerce in Bangkok. Photo by Karnt Thassanaphak, Copyright@Demotix (2/6/2014) [1]

ব্যাংককের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভরত কৃষকেরা। ছবি ক্রান্ত থাসানাপাহাকের।কপিরাইট @ডেমোটিক্সের (২/৬/২০১৪)

প্রতিশ্রুতি মোতাবেক কেনা চালের দাম মেটাতে থাই সরকার ক্রমাগত ব্যর্থ হবার পর রাজধানী ব্যাংককে কয়েকদিন ধরে শত শত ধান চাষী বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে [2]। কৃষকদের পাওনা অর্থ, যা দিতে দেরি হচ্ছে, ইতোমধ্যে তার পরিমাণ ১৩০ মিলিয়ন বাথে পরিণত হয়েছে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা সরকার ২০১১ সালে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে বেশী দামে চাল কিনে তা আবার বিশ্ব বাজারে বিক্রি করার কর্মসূচীর সূচনা করে। এই কর্মসূচীর [3] উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের সঞ্চয়ের আরো সমৃদ্ধ করা।

পাঁচ দশক ধরে থাইল্যান্ড ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারত এবং ভিয়েতনাম চাল রপ্তানিতে থাইল্যান্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। সমালোচকেরা চালের বাজারে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবার কারণে প্রতিশ্রুত চাল কেনা কর্মসূচিকে অভিযুক্ত করেছে।

চাল নিয়ে বিক্ষোভ দেশটির রাজনৈতিক সঙ্কট [4] আরো জটিল করেছে বিশেষ করে যখন ব্যাংককের রাস্তায় হাজার হাজার সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারী সমবেত হয়েছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষকদের বেশীরভাগ সরকার বিরোধী বিক্ষোভের আয়োজক দল [5] পিপলস ডেমোক্রেটিক কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট নয় [6]। বাস্তবতা হচ্ছে অনেক কৃষক গ্রামের বাসিন্দা, যারা সরকারের প্রবল সমর্থক।

বিরোধীরা আন্দোলনরত কৃষকদের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে [7]। শহরে কৃষকরা যাতে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে পারে, তার জন্য সরকার বিরোধীরা অর্থ দানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা ধান চাষীদের বর্তমান দুর্দশার জন্য ইংলাক সরকারের দুর্নীতিকে অভিযুক্ত করেছে।

নিজের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে সরকার বলছে [8] বিরোধীদের এই সমস্ত বিক্ষোভের কারণে সরকার কৃষকদের টাকা দিতে পারছে না, কারণ তা সংসদীয় কার্যক্রম স্থগিতের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার, বিরোধীদের কাছে দাবি জানিয়েছে তারা যেন সরকারি ব্যাংকসমূহ অবরোধ করে না রাখে [9] বা দখল করে না ফেলে।

সরকার কৃষকদের নিশ্চিত [10] করেছে যে কি ভাবে অর্থ প্রদান করা যায়, তারা তার এক উপায় খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে। একই সাথে সরকার তার বিরুদ্ধে করা সমালোচনা প্রত্যাখান করেছে [11] যে চাল কেনার ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদান কর্মসূচি বিপর্যয়কর জনপ্রিয় নীতিতে পরিণত হয়েছে:

এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি নয়, তার বদলে খুব সাধারণভাবে বলা যায় এটা কৃষকদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে এবং আমাদের বংশধরদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে আয় নিরাপত্তার বিষয়কে উন্নত করার এক কর্মসূচি,বিশেষ করে যখন চাষাবাদ মানে দেশের আর্থিক এবং অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রভাব না ফেলে আমাদের এ মাটির ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করা।

কিন্তু ব্যাংকক পণ্ডিত মনে করে সরকারের এক নতুন [12] ভর্তুকি কর্মসূচি প্রয়োগ করা উচিত:

… আরো ভিন্ন কিছু ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদান করা যেতে পারে, যার সাথে সরকার সংযুক্ত নয়, সে ক্ষেত্রে কম মূল্যে চাল বিক্রি করা একটা ভাল উপায় হতে পারে। একই রকম কোন একটা বিষয়ে সরাসরি ভর্তুকির প্রয়োগ এবং তা ঠিকমত সামলানো খানিকটা সহজ বিষয়। এক্ষেত্রে একটা বাজেট তৈরী করা যেতে পারে, আর এক্ষেত্রে সরকার যে সব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সে সবের মুখোমুখি হতে হবে না, যেখানে সরকার বাজারে বন্ড ছাড়ার চেষ্টা করেছে এবং কার কাছ থেকে টাকা ধার করবে তার উপায় বের করার চেষ্টা করছে।

নীচে টুইটারে আসা কিছু ছবি এবং প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হল। এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে কৃষকেরা দেশটির রাজধানী ব্যাংককের এক রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে।

মূল পরিবহন সড়কসমূহ বন্ধ করার জন্য কতজন চাল চাষীর দরকার? খুব বেশী দরকার নেই।

ব্যাংককের বিক্ষোভকারীরা টাকা দান করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছে কৃষকদের প্রতি একাত্মতা প্রদর্শনের জন্য:

চাল চাষীদের সাহায্যার্থে বিরোধী বিক্ষোভকারীরা অর্থ দান করছে। অক্টোবর ২০১৩ থেকে সরকার যাদের অনেকের টাকা প্রদান করেনি।

@প্রাভিতআর মনে করে প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত কৃষকদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে:

ইংলাককে অবশ্যই পিডিআরসির সাথে লুকোচুরি খেলার বদলে এখনই ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে গিয়ে দেখা করতে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।

আজ সকালে আমি চাল চাষীদের জন্য প্রার্থনা করেছি, যেন তারা তাদের কঠোর পরিশ্রমের ন্যায্য মজুরী লাভ করে।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি দেরি করে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের চাল বিক্রির ব্যর্থতা উপেক্ষা করে, বিক্ষোভ-এর চাপ ব্যাংকের উপর পড়েছে, কেবল এই একমাত্র অজুহাত দিয়ে ইংলাক সরকার এই চালের বিষয়টির রাজনীতিকরণ করেছে।