মিশরের অন্যতম এক জনপ্রিয় টক শো-তে টিভির পর্দা দুটি অংশ বিভক্তি হয়ে যায়। এতে-এর একটি অংশে দৃশ্যমান হয় পুতুলের মত একটি চরিত্র, এদিকে পর্দার বাকী অংশ জুড়ে এক ভয় ধরানো কিশোরের আবির্ভাব ঘটে যে পুতুলটিকে কারাগারে পাঠানোর হুমকি প্রদান করেতে থাকে। উপস্থাপক, পুতুল আবলা ফাহিতা এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রদানকারী কিশোর আহমেদ স্পাইডার- এই দুজনের মাঝে চলা বিতর্ক সঞ্চালন করতে থাকে।
আহমেদ স্পাইডার একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করে, যে কিনা তাদের এক বিজ্ঞাপনের সাথে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তারা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের গোপন বার্তা ছড়াচ্ছে। ঘটনাক্রমে এই অভিযোগ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছে উল্লেখ করা হয়, যারা সন্ত্রাসবাদ এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক ঘটনাগুলো দেখাশোনা করে। পরে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ভোডাফোনের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। মিশরে একটি কবুতর, সারস এবং একটা হাঙ্গর ইতোমধ্যে সন্দেহভাজন গুপ্তচরের তালিকায় যুক্ত হয়েছে, এখন আমরা আবলা ফাহিতা নামক পুতুল এবং তার কন্যা ক্যারোলিনা ওরফে কারকোউরাকে এই তালিকায় যুক্ত করতে পারি। যার ফলে পল সেডরা টুইট করেছে:
@সেডগেট: আবলা ফাহিতার তদন্তের পর মিশর আরো একবার পৃথিবীর সবচেয়ে বিকারগ্রস্ত রাষ্ট্রের শিরোপার ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়াকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
মিশরীয় নেট নাগরিকরা এমন সংবাদটি নিয়ে আর ব্যাঙ্গ না করে থাকতে পারেনি।
@কায়রো৬৭আনএডিটেড: যদি কেউ টিভি থেকে আসা আহবানে তার বেড়াল ছানা পরবর্তী কোন ফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে, তাহলে মিশর তাদের পেছনে লাগবেঃ এরপর যা ঘটবে তা হচ্ছে বেড়াল ছানার বিচার শুরু।
নেভিনে জাকি ঠাট্টা করে আবলা ফাহিতাকে আমাদের প্রজন্মের চে গুয়েভারা বলে অভিহিত করেছে।
মে সাদেক এবং পাকিনাম আমেরও এই পুতুলটিকে নিয়ে টুইট করেছে যার ফেসবুকে দশ লক্ষ ভক্ত রয়েছে এবং যা এখন কোন বিপ্লবী চরিত্রের চেয়ে কম নয়।
@মেসাদেক: ফ তে ফাহিতা তবে তা ভ তে ভেনডেট্টার মত ততটা জোরালো নয়… কিন্তু তাতে বেশ সুন্দর ভাবে কাজ চলে যায়..#আবলাফাহিতা
@পাকিনামআমের: পরবর্তী বিপ্লবের নেতৃত্ব আবলা ফাহিতাকে দিতে হবে। সে হবে আমাদের ভি (ভেনডেট্টা)। অবয়বহীন এক প্রতিরোধ।#৩য়াবাথ #সুররিয়ালিজম
@মোহআনিস: গুজব ছড়িয়েছে যে আবলাফাহিতা, পুতুল প্রদর্শনী অথবা সিসাম স্ট্রিট-এ রাজনৈতিক আশ্রয় চাইছে।
ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে।
@_আমারোআলি:মিশর ইতোপূর্বে ঘটেনি এমন এক ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলা থেকে বিশ্বকে রক্ষা করেছে বিশেষ করে যখন পুতুল ম্যানহাটনের উপর কব্জা করার চেষ্টা করে।
@হোউদাবেলাবিডি: মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবলাফাহিতা ও মিকিমাউসের ফোনালাপ এবং ফেসবুক আলাপচারিতা ধারণ করেছে!
@আনাসালতিকরিতি: চরম ব্যর্থ ভোডাফোন পুতুল নাট্যাভিনয়ের পরে, এমন কি কোন বিবেচক নাগরিক রয়েছে যারা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা নেওয়া এই সরকারকে শ্রদ্ধা করবে?
@আইয়াইউসরি: “মিশরে এক বিচিত্র সময়” শিরোনামে ইকোনমিস্ট পত্রিকায় আবলা ফাহিতার কাহিনী ছাপা হয়েছে।
আশা করা যায় পরবর্তী সম্ভাব্য সন্দেহজনক ব্যক্তির তালিকায় স্পঞ্জ বব স্কোয়ার প্যান্টের নাম উঠে আসবে। গুগলে একটি প্রশ্ন করা হয়েছে যেখানে ইজাবাত বিস্মিত এই কারণে যে হলুদ রঙ এবং রাবিয়ার ব্যানারের মত চারটে আঙ্গুল এই তথ্যের এই কার্টুন চরিত্র কি ভিত্তিতে মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
[যখন মিশর মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করল] তখন রাবা লোগোকে নিজের অবতার হিসেবে করে গ্রেফতার হবার হয়ে কয়েকজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী বিকল্প লোগো তৈরী করে।
এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখায় মোহাম্মদ এলগোওহারি বিস্ময় প্রকাশ করেছে যে এই ঘটনাকে একটা কারণ হিসেবে ব্যবহার করে মিশর সরকার ভোডাফোন ইজিপ্টকে ব্লাকমেইল করছে কি না:
নভেম্বরের শুরুতে ব্লুমবার্গ প্রকাশ করেছিল যে “ যখন মোবাইল কোম্পানির জন্য ফোর (৪)জি অফার করা হয় তখন টেলিকম ইজিপ্ট হয়ত স্থানীয় ভোডাফোন প্রতিষ্ঠানটি কিনে নিতে চায়”। ব্যক্তিগত ভাবে আমি চাই না এই অধিগ্রহণের ব্যাপারটি ঘটুক, বিশেষ করে যখন এটি মোবাইল/ফোর (৪)জির বাড়তে থাকা বাজারকে পতনের দিকে/ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে…এখানে একটি কোটি টাকা দামের প্রশ্ন রয়েছে, যেহেতু ভোডাফোন মূলত সরকারের অংশ কিনে নিতে চায় সেক্ষেত্রে বিএস-এর অভিযোগ কি ভোডাফোন মিশরকে ব্লাকমেইল/বাধ্য করা সরকার যা চায় তা মেনে নিতে?
কাজেবুন-এর ফেসবুক পাতাও নীচের এই ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে কর্মকর্তারা কোন বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে আর কোনটি বাদ দেবে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে।
আবলা ফাহিতার ঘটনা নিয়ে সারাহ কার তার ব্লগ পোস্টে লেখায় আহমেদ স্পাইডারকে তুলনা করেছে গ্লেন বেক-এর সাথে:
প্রতিটি দেশে গ্লেন বেকের মত এক বিশেষ নাগরিক চরিত্র রয়েছে, মিশরের ক্ষেত্রে এর পার্থক্য হল যারা ক্ষমতায় থাকে এবং বিশেষ প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হয়, তারা যেখানে মাননসই, সেখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এদের গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করা হয়। এর এ কারণে সরকারি কর্মকর্তা আঙ্গুল দ্বারা চালানো এক পুতুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করে অথচ রাবা৩এ-এতে প্রায় ১০০০জন নিহত হবার ঘটনায় কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি, কারণ রাষ্ট্র এখন বিস্ময় ও ভয়ের সাথে ফ্যাসিবাদী মেজাজে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের জন্য এবং রাষ্ট্রের যারা বিরোধী তাদের নির্মূল করার জন্য। যদি আমরা সবাই খালেদ সাইদের সমপর্যায়ের এক পাতা থাকত তা হলে এখন তা পাল্টে হত আমরা সবাই এ্যাডলফ হিটলার। হাস্যরস এবং করুণরস অনেক সময় একে অন্যকে ছাড়িয়ে যায়।
সবশেষে, হলি ডাগরেস টুইট করেছে:
@পলিটিক্যালিআফ: যদিও আবলা ফাহিতার ঘটনায় আমরা বেশ হাসলাম, কিন্তু @রিপেন্ট১১ এবং মিশরে বন্দী অবশিষ্ট এজিএফ কর্মীদের থেকে আমাদের মনোযোগ সরিয়ে না নেয়।