ব্র্যান্ডন স্ট্যাটন নামের এক ব্যক্তি ২০১০ সালের নভেম্বরে সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি প্রতিদিন নিউ ইয়র্কের রাস্তায় অপরিচিতদের ছবি তুলবেন। তিনি ঠিক করলেন যাদের ছবি তুলবেন তিনি তাদের সাথে পরিচিত হবেন, কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন এবং সেই গল্পগুলোকে অনলাইনে ছড়িয়ে দিবেন। তিন বছর পর “ হিউম্যানস অব নিউ ইয়র্ক “ নামের তার ফটোব্লগটি অনলাইনে অন্যতম বৃহৎ ব্লগে পরিণত হয়। ফেসবুকে এর অনুসারীর সংখ্যা ২ মিলিয়নেরও বেশি।
তাই বলে নিউ ইয়র্কে “মানুষের’ আসা যাওয়া বন্ধ হয় নি। ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া হয়ে ভারত থেকে ল্যাতিন আমেরিকা পর্যন্ত মানব চলাচল শহর থেকে শহরে, বিশ্বজুড়ে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। মধ্য পূর্ব ও উত্তর আমেরিকার আমাদের অঞ্চলগুলোও এর বাইরে নয়।
আমাদের অঞ্চলের প্রধান প্রধান “হিউম্যানস অব” পাতার চিত্র নিচে দেওয়া হল।
কায়রোর মানুষ
আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব কায়রোর মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতায় স্নাতক, ২২ বছর বয়সী ব্লগার সালমা হেজাব হিউম্যানস অব কায়রো চালু করেন। এ ব্লগটি চালু হয় ২০১২ সালে, এখন পর্যন্ত এ পাতাটি প্রায় ৩,৫০০- এরও বেশি লোক পছন্দ করেছে। এ পাতার লক্ষ্য হল কায়রোর বৈচিত্র্য উপস্থাপন করা। এ বিষয়ে তিনি বলেনঃ
আমি বিশ্বাস করি যে কায়রো একটি প্রাণবন্ত শহর। বেশিরভাগ সময় আমি এ শহরে থাকতে অপছন্দ করলেও আমি চিন্তা করে দেখলাম যে এ প্রকল্প শুরুর মাধ্যমে আমি আমার ক্যামেরার চোখ দিয়ে কায়রোকে উপস্থাপনের সুযোগ পাব! আসলে অনেক দিন ধরে আমি প্রফেশনাল ক্যামেরা ব্যবহার করছিলাম অনেকটা না শিখেই, আশা করি এটা আমার ফটোগ্রাফির দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দেবে।
টিএ৩বিয়ারকে প্রদান করা তাঁর সাক্ষাৎকার এখানে দেখতে পাবেন।
২০১২ সালের কোন এক সময় অপরিচিত একজন আলোকচিত্রি মিশরের মানুষ পাতাটি তৈরি করেন।এ পাতাটি সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়না এবং মাসের পর মাস এর কোন আপডেট নেই। এর ছবিগুলো সত্যিই চমকপ্রদ। মিশরের আরেকটি পাতা “মানসুরার মানুষ”- এর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
তেহরানের মানুষ
২০১২ সালের ৯ মে তেহরানের মানুষ পাতাটির সৃস্টি, বর্তমানে ের অনুসারীর সংখ্যা ১০০,০০০ কে ছাড়িয়ে গেছে। “হিউম্যানস অব” পাতার মধ্যে এটা মিনার সবচাইতে জনপ্রিয় পাতা। এ পাতা সম্পর্কে আলোকচিত্রি বলেনঃ
আপনারা যেমনটা ভাবেন তেহরান সে রকম কোন দূরবর্তী স্থান নয়। “নিউইয়র্কের মানুষ” পাতাটি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ধুলি ধূসরিত প্রিয় রাজধানীর ইরানীয়দের নিত্যকার জীবন-যাপনের কিছু ছবি এ পাতায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
ইরানের অন্যান্য পাতাগুলো হল “ইস্পাহানের মানুষ”, “তাবরিজের মানুষ”। “শিরাজের মানুষ”, “আহভাজের মানুষ” এবং “কেরমানশাহর মানুষ”
ইস্তাম্বুলের মানুষ
ইস্তাম্বুল আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে ২০১২ সালে ইস্তাম্বুলের মানুষ পাতার জন্ম। বর্তমানে এর অনুসারীর সংখ্যা ২,২০০ জনেরও বেশি। এ প্রকল্প সম্পর্কে এর প্রতিষ্ঠাতা শন রেয়ান বলেনঃ
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ইস্তাম্বুল শহরে আসা মানুষগুলোর মানবতাকে ক্যামেরাবন্দী করা। এ শহর সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস, ভাষা, আতিথিয়েতায় পূর্ণ। এ পাতার প্রতিটি ছবিই মানুষের কথা বলে।
তুরস্কের অন্যান্য পাতাগুলো হল “আনকারার মানুষ”, “ইজমিরের মানুষ” এবং “আনাতোলিয়ার মানুষ”।
তেল আভিভের মানুষ
২০,০০০ এরও বেশি অনুসরণকারী আছে তেল আভিভের মানুষ পাতাটির। ইরেজ কাগানোভিতজ ২০১২ সালের ৭ এপ্রিল এ পাতাটি তৈরি করেন। এ পাতার অনুসরণকারীরা অনেক বেশি সুশীল ও অনুগত। কেন এই পাতা? কাগানোভিতজের উত্তরঃ” দুনিয়ার মধ্যে একটা মজার জায়গা হল তেল আভিভ। আসুন মজার মানুষদের সাথে পরিচিত হন”।
ফিলিস্তিনের মানুষ
২০১২ সালে ফিলিস্তিনের মানুষ পাতাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পাতায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই বলেঃ” ফিলিস্তিনকে যারা আকর্ষনীয় করেছে আসুন আমরা তাদের সাথে পরিচিত হই।তাদের সাথে কথা বলি তাদের সাথে বাস করি। “ফিলিস্তিনের আরেকটি পাতা হল “নাবালুসের মানুষ”।
জেদ্দার মানুষ
জেদ্দার মানুষ- সৌদি আরব পাতাটি একেবারেই নূতন। এক মাস আগে এ পাতাটির জন্ম, হেলমি আলসাগাফ এবং শরিফা লি আব্দুলরহমানের যৌথ উদ্যোগে এ পাতার জন্ম। তাদের উদ্দেশ্য হল “শহরের চমৎকার মানুষদের বিশ্ব বৈচিত্র্য তুলে ধরা”।
সৌদি আরবের আরেকটি পাতা হল “রিয়াদের মানুষ”।
লেবাননের মানুষ
আমি ও লেবানিজ-আমেরিকান আলোকচিত্রি বৈরুত স্ট্রিট ফোটোগ্রাফার্স (বিএসপি) এর স্বনামধন্য আলোকচিত্রি মেহের ক্রিকোরিয়ান-এর যৌথ উদ্যোগে লেবাননের মানুষ পাতা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তিতে বিএসপি-এর আরেকজন আলোকচিত্রি করিম সাকার যোগ দেন। এ গ্রুপের অন্যান্য পাতার মত লেবাননের মানুষ- পাতাটির উদ্দেশ্য হল “লেবাননের অধিবাসীদের বৈচিত্র উপস্থাপন করা”।
লেবাননের শিক্ষার্থীদের দিকে দৃস্টি নিবন্ধ করতে চাইলে আপনি নোরা এন্ডেরা নাসার এর “লাউ-এর মানুষ” পাতাটি দেখতে পারেন। লেবানিজ আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নোরা নিউ ইয়র্কে ব্র্যান্ডন স্ট্যাটনের সাথে দেখা করেছেন, প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেনঃ
আমি সব সময় নিউইয়র্কের মানুষ পাতাটির ভক্ত। এ পাতাটি আমাদের শেখায় কাউকে দেখা মাত্রই তার সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত না হতে কারন প্রত্যেকেরই রয়েছে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি। আমি সব সময় চাইতাম আমি লেবাননের মানুষ পাতার অংশ হই কিন্তু আমার আরবি খুব দুর্বল কাজেই বাক্য বিনিময় করা আমার জন্য কষ্টকর। পরবর্তিতে আমি নিউইয়র্কে ব্র্যান্ডনের সাথে দেখা করি। সত্যি বলতে কি তার প্রভাব আমার উপর কাজ করেছেঃ আমি চাচ্ছিলাম ব্র্যান্ডনের মত একই ধরনের একই মানের পাতা তৈরি করতে আর এভাবেই আমি লাউ- এর মানুষ পাতাটি তৈরি করি। এই মানুষগুলোকে আমরা প্রতিদিনই দেখি কিন্তু কখনো কথা হয় না।
লেবাননের আরো দুটো ফেসবুক পাতা হল ত্রিপোলীর মানুষ ও বৈরুতের মানুষ।
আম্মানের মানুষ
আলি আলহাসানি প্রায় একবছর আগে আম্মানের মানুষ ফেসবুক পাতা চালু করেন। এ আলোকচিত্র প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল “লিঙ্গ, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আম্মান, জর্ডানের আশেপাশের মানুষদের মুখচ্ছবি তোলা এবং জর্ডানীয় সমাজে একতাবোধ বাড়িয়ে তোলা। অন্যান্য আলোকচিত্রিরাও এ প্রকল্পে অবদান রাখছেন।“
কুয়েতের মানুষ
মানুষ সিরিজের ফেসবুক পাতার মধ্যে কুয়েতের মানুষ ফেসবুক পাতার গল্পটা এরকমঃ
আমার নাম ব্রায়ান আমি গত ২০১৩ সালের শীতে কুয়েতের মানুষ ফেসবুক পাতা চালু করি। আমার লক্ষ্য এ শহরের ৫,০০০ অধিবাসীর ছবি তোলা। কাজেই কুয়েত কে আমি যেভাবে দেখি সেভাবেই এর ছবি তুলি। এ ফেসবুক পাতার সামাজিক অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে। একদিন কুয়েতের আগুন্তুকদের নিত্যকার জীবনধারা দেখার জন্য এ পাতার বৈশ্বিক গ্রাহক বৃদ্ধি পাবে।
তিউনিসিয়ার মানুষ
তিউনিসিয়ার মানুষ পাতার জন্ম কয়েকমাস আগে। “তিউনিসিয়ার যে সব মানুষ যারা প্রতিদিন হারিয়ে যায় এবং যারা এর গুরুত্ব উপলব্ধির সময় পায় না”।
তিউনিসিয়ার আরেকটি ফেসবুক পাতা হল আকরাম লাহুয়েল, হুসেম লামতি এবং সামার কুধানি কর্তৃক তৈরি তিউনিসের মানুষ পাতা। তাদের একটি ব্লগও আছে। শুধু তাই না আপনি চাইলে সাফেক্সের মানুষ পাতাটিও দেখতে পারেন।
খার্তুমের মানুষ
খার্তুমের মানুষ পাতাটি “খার্তুম, সুদানের মানুষের এক ক্ষুদ্র উপহার এক সঙ্গে এক রাস্তায় এ মুখচ্ছবিগুলো তোলা”
বাগদাদের মানুষ
চিকিৎসক, ফ্রেঞ্চ নিউজ এজেন্সির প্রাক্তন সাংবাদিক নাসে বিজলাহ বাগদাদের মানুষ ফেসবুক পাতার প্রতিষ্ঠাতা। সাংবাদিক হিসেবে অব্যাহত হুমকির মুখে তিনি বাগদাদ ছাড়েন।
সিরিয়ার মানুষ
সিরিয়ার মানুষ পাতাটি কিছুদিন আগে চালু হয়। অজ্ঞাত পরিচয় এই আলোকচিত্রি এই ফেসবুক পাতা সম্পর্কে বলেনঃ “ চোখের জলের অব্যক্ত কথা ও হৃদয়ে জমে থাকা অপ্রকাশিত ভাবনা, যুদ্ধের ডামাডোলে বাষ্প হয়ে যাওয়া চোখের জল সিরিয়াকে প্রকাশ করতে হবে। আবারো বেঁচে থাকার জন্য এটা প্রয়োজন।”
দুবাই ও আবুধাবীর মানুষ
ইসাবেল নামের একজন ফরাসি আলোকচিত্রি দুবাইয়ের মানুষ ফেসবুক পাতাটির জন্ম। তিনি গত ৯ বছর যাবত দুবাইয়ে আছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরেকটি ফেসবুক পাতা হল “ আবুধাবীর মানুষ”।
ত্রিপোলীর মানুষ
ত্রিপোলীর মানুষ পাতাটি তৈরি করা হয় “ত্রিপোলী শহরের ফটোগ্রাফিক জরিপ তৈরির উদ্যোগ থেকে। সুন্দরতা ছাড়া পাতাটিতে আর কিছুই নেই”।
লিবিয়ার আরেকটি ফেসবুক পাতা হল “ বেনগাজীর মানুষ”।
ক্যাসাব্লাঙ্কার মানুষ
কয়েকমাস আগে ক্যসাব্লাঙ্কার মানুষ পাতাটি তৈরি করা হয়। এ প্রকল্পের আলোকচিত্রি কারা? তাদের ভাষায়:
আমরা বিশ্বাস করি আমাদের নিজেদের আত্ম আবিষ্কারের সন্ধানে লুকায়িত সত্য সন্ধানে আমাদের মানুষের কাছে যেতে হবে, অতীতের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে এবং তাদের অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
আলজিয়ার্সের মানুষ
কয়েক মাস আগে আলজিয়ার্সের মানুষ পাতার জন্ম। “আলজিয়ার্সের লোকদের প্রতিদিন একটি করে গল্প বলার জন্য” এ পাতার জন্ম।