বাংলাদেশ: বছরের শুরুতেই নতুন বই পেল সাড়ে তিন কোটির বেশি শিক্ষার্থী

সরকারী ল্যাবরেটরী স্কুলের এক ছাত্র বই উৎসবের দিন তার পড়ার বই তুলে ধরেছে। ছবি ফিরোজ আহমেদের। সর্ব স্বত্ব ডেমোটিক্স (২/১/২০১৪)

সরকারী ল্যাবরেটরী স্কুলের এক ছাত্র বই উৎসবের দিন তার পড়ার বই তুলে ধরেছে। ছবি ফিরোজ আহমেদের। সর্ব স্বত্ব ডেমোটিক্স (২/১/২০১৪)

গত ২ জানুয়ারি ২০১৪-এ বাংলাদেশে বই উৎসবের মাধ্যমে স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে ক্লাশের নতুন বই। প্রতিবছর বছরের প্রথম দিনেই এই উৎসব করা হয়। ১ জানুয়ারি সরকারি ছুটি থাকায় এবার বছরের দ্বিতীয় দিনে এই উৎসব পালিত হলো। উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই পৌঁছানোর বিষয়টি উৎসবের আমেজে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ থেকেই শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিবসটিকে পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস হিসাবে পালন করা হচ্ছে। ইউনেস্কোর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের ৮০% শিশুরা লেখাপড়া জানে।

গত কয়েক বছরে শিক্ষা খাতে বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রাথমিকে শতভাগের কাছাকাছি শিক্ষার্থী ভর্তি, প্রাথমিক-মাধ্যমিকে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা সমতা অর্জন, শিক্ষাবর্ষের প্রথম ক্লাসে পাঠ্যবই প্রদান ও ক্লাস শুরুসহ নানা ক্ষেত্রে দৃশ্যমান সফলতা দেখিয়েছে। ১৯৯১ সালে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ভর্তির হার ছিল ৬১ ভাগ। কিন্তু ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ দশমিক ২ ভাগ এবং ২০১২ সালে ৯৯ দশমিক ৪৭ ভাগে উন্নীত হয়েছে। তাছাড়া মেয়ে শিক্ষার্থীর প্রাথমিকে ভর্তির হার ৩২ থেকে ৫১ ভাগ এবং মাধ্যমিকে ১৮ থেকে ৫৪ ভাগে উন্নীত হয়েছে।

নতুন এই বইগুলো একই সঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে ও সরকারের ই-বুক সাইটে দেওয়া আছে। এখান থেকে যে কেউ ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

২০১৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক, এবতেদায়ি, মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি বিদ্যালয়ের ৩ কোটি ৭৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬৭২ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ২৬৮টি বিষয়ের মোট ২৯ কোটি ৯৬ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯৩৮ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন যে এটি বিনামূল্যে বই বিতরণের নতুন একটি রেকর্ড

ব্লগার মাসুম বিল্লাহ লিখেছেন:

প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই পৌঁছানোর সাফল্য স্কুলে পড়া বন্ধ করে দেওয়ার হারকে কমিয়েছে।

বছরের শুরুতে নতুন বই হাতে পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা। বই হাতে তাদের উচ্ছ্বাসের ছবি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। নেটিজেনরা সেই ছবি দেখে নিজেরা স্মৃতিচারণ করেছেন তাদের সময়ে স্কুল থেকে নতুন বই পাওয়ার মুহূর্তগুলো। চলচ্চিত্র নির্মাতা রওশন আরা নীপা ফেসবুকে স্মরণ করেছেন তার নিজের স্কুলবেলার কথা, যখন নতুন বই হাতে পেতে বছরের কয়েকটা মাস চলে যেত:

গত ৫ বছর ধরে জানুয়ারীর ১ তাং এলেই সব বিদ্যালয় গুলিতে এক অসাধারন আনন্দ উৎসব আমাকে সুখকর এক ঈর্ষায় ফেলে দেয় , আহ্হারে আমি যদি ওদের বয়সী হতাম তবে তো আমিও আজ এই আনন্দের ভাগীদার হতাম! তবে আনন্দ যে একেবারে হয়না তা ঠিক নয়, বছরের শুরুর এই দিনে এক সাথে এত কচি কাচার হাসি মুখ এর চেয়ে বড় কোন শুভেচ্ছা আর আছে কি?

খুব মনে আছে এই তো ৫ বছর আগেই কোন ছাত্র-ছাত্রী নতুন বই কবে পাবে তার কোন ঠিকঠাক সময় ছিলনা, বছরের ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও নতুন বই এর দেখা পাওয়া বড় সৌভাগ্য বলে গন্য হোত অথবা ২/১ টা নতুন বই আর পুরোনো বই মিলে একটা সেট বানানোর প্রাণপন চেষ্টা করা হোত । আমার মা- বাবা দুজনেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। নতুন বই তো দূরের কথা ফেব্রুয়ারী-মার্চ পর্যন্ত কোন বই ছাত্রদের হাতে নাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিলনা…

সন্দীপন বসু বিষয়টি নিয়ে মজা করতে ছাড়েননি:

এখনকার পোলাপাইনগুলা অভাগা। আমাদের কালে আমরা বই না পাওয়ার অজুহাতে পুরা জানুয়ারি স্কুলে যাইতাম না। আর পোলাপাইনে এখন বছরের প্রথমদিনই বই পাইয়া যায়। ক্যামনে কি !!

নতুন বই দেখাচ্ছে এক শিক্ষার্থী। ছবি তুলেছেন ফিরোজ আহমেদ। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২/১/২০১৪)

নতুন বই দেখাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ছবি তুলেছেন ফিরোজ আহমেদ। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২/১/২০১৪))

নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া এই এগিয়ে যাওয়ারই একটি উদাহরণ। ব্লগার আরিফ জেবতিক লিখেছেন:

যাঁরা ভাবে বাংলাদেশ এগুচ্ছে না, তাঁরা আমাদের বাংলাদেশ দেখেনি। আমি জানি এই দেশ কীভাবে কতটুকু আগাচ্ছে। আমরা যে বাংলাদেশ দেখে এসেছি, সেই বাংলাদেশের দিকে পিছু তাকিয়ে মাঝে মাঝে ভাবি ঘুমিয়ে ছিলাম আর ওদিকে তীর থেকে কতদূর চলে এলাম জোয়ারের জলে…..। সামনে অকূল পাথার বটে, তবে ওদিকে তীর থেকেও বহু দূরে চলে এসেছি, সামনের দিকে এগুতে এগুতে হয়তো ওপারের সুখের সন্ধান পাব।
আজ বই হাতে পাওয়া প্রিয় প্রজন্ম, তোমরা সুখে থাকো। তোমাদের যখন পিছু ফিরে দেখার সুযোগ হবে, সেই বয়েসে তোমরা যে বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে থাকবে, সেই সুন্দর বাংলাদেশের কথা ভেবে আমি মাঝে মাঝেই তোমাদের ঈর্ষা করি…

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে বাংলাদেশে চলছে রাজনৈতিক সহিংসতা। সেখানে শিশুদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রেখে মুক্তিযোদ্ধা আক্কু চৌধুরী লিখেছেন:

this is the kind of Bangladesh we would like to see…Children happy with new books seeking knowledge….not Children with gun powder learning to make human BBQ….we want violent free democratic and peaceful nation moving forward with the spirit of liberation war….we want leaders ready to walk the talk…leaders who lead by example….we want politicians who considers power as a public service but not self service to become wealthier….joi manush

আমরা এই বাংলাদেশকে দেখতে চাই- যেখানে শিশুরা নতুন বই নিয়ে জ্ঞান আহরণে ব্যস্ত থাকবে… তারা শিখবে না কীভাবে গান পাউডার ব্যবহার করে মানুষকে পোড়াতে হয়… আমরা চাই একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক জাতি, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাবে… আমরা সেই নেতৃত্ব চাই যারা মানুষের সাথে আলাপ করতে রাস্তায় নেমে আসবে… নেতৃত্ব একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে… আমরা এমন রাজনীতিবিদ চাই, যারা ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নিজের উন্নতি নয়, বরং জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করবে… জয় মানুষ

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .