লেবাননে সহিংসতা কোন অপরিচিত বিষয় নয়। প্রায়ই সেখানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যায়। কোন অপরাধ বা ত্রুটি সংঘটনকারী কে কখনও অপরাধী বলে গণ্য করা হয় না। ২৬ ডিসেম্বর এবং ২ জানুয়ারি তারিখে দু’টি গাড়িতে বোমা হামলায় ১৩ জন নিহত এবং আরো অনেকেই আহত হয়েছেন। নভেম্বর মাসের আরো একবার যুগল বোমা বিস্ফোরণে ২০ জন মারা গেছে এবং সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন এলাকাতে এরকম সহিংসতা চলছেই। নিয়মিত সংঘটিত এসব সহিংসতার কারণে ২০১৪ সাল নিয়ে আশাবাদী হওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিটি বোমা হামলার পর এখনো লোকজন তেমনি তাদের দৈনন্দিন কাজে ফিরে যায়। নিষ্পাপ আক্রান্তরা শীঘ্রই সবকিছু ভুলে যায়। যেহেতু জনগণের এই নিষ্ক্রিয়তা ভুল, তাই #আমিকোনশহীদনই আন্দোলনটি জনগণকে প্রতিবাদ জানাতে উদ্বুদ্ধ করে থাকেঃ
এটি তাদের জন্য এমন একটি জায়গা, যারা বিশ্বাস করে যে মৃত্যু কোন সমাধান নয়।
এটি তাদের জন্য এমন একটি জায়গা, যারা নিজেদেরকে বিফল শহীদ বলে সম্বোধন করতে চায় না।
এটি এমন একটি স্থান যেখানে সকল মৃত; যারা মারা যাচ্ছে এবং দুর্ভাগ্যবশত ভবিষ্যতে যারা মারা যেতে থাকবেন সে সকল ব্যক্তিদেরকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।
এটি এমন একটি স্থান যেখানে আমরা দেখাই যে আমরাও প্রতিবাদ করি।
একটি স্থান যেখানে আমরা প্রত্যেককে দেখিয়ে দেই যে আমরাও পরিবর্তন চাই।
উন্মাদের পর্যায় থেকে লেবাননের একটি জাগরণী ডাক প্রয়োজন। চিন্তাভাবনার জন্য হুম্মুসে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ননা দেয়া হয়েছেঃ
এটি প্রমাণিত যে, আমরা আবদ্ধস্থানে থাকার আতঙ্ক স্বরূপ ব্যাধি এবং নির্যাতনের বদ্ধমূল ধারণাঘটিত মানসিক বৈকল্যতে আক্রান্ত একটি জাতিতে পরিনত হয়েছি; এই বোমা বিস্ফোরণটিই হবে শেষ বোমা বিস্ফোরণ তা আমরা আশা করাই বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ, আমরা জানি যে এটির অনুসরণে শীঘ্রই আরেকটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটবে; আমাদের বিপর্যস্ত গৃহযুদ্ধের অবিচক্ষণ ছায়াতে আমরা বাস করছি। কি বিপর্যয় ঘটে চলেছে, তা না জেনেই প্রতিদিন সকালে আমরা লক্ষ্যহীনভাবে ঘুম থেকে জেগে উঠছি; আমাদের নিজেদেরই দুর্নীতিগ্রস্ত অঞ্চলভিত্তিক রাজনৈতিক শ্রেণীকরণের দ্বারা আমরা নিজেরা উপদলে বিভক্ত হয়ে যেসব পাগলামিকে উত্তেজিত করেছি, সেই পাগলামিই আমাদেরকে গ্রাস করে ফেলছে। আমরা কখনই নিজেদেরকে এটা মনে করইয়ে দিতে ব্যর্থ হয়নি, কীভাবে আমরা এই সমস্যা নিয়ে কিছু করতে গিয়ে বার বার ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের অনেকেই অনড় অবস্থানে থাকা আশা নিয়ে অভিশাপগ্রস্ত হয়ে আছি। তাঁর চেয়েও আরো বেশী সংখ্যক লোক আশাহীনতার অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে আপনার মনের অবস্থা যাই হোক না কেন, অন্তত আমাদের এতোটুকু পরিষ্কার হতে দিন যেঃ আমরা কোন শহীদ নই। আমরা কোন মহৎ উদ্দেশ্যে মারা যাচ্ছি না। আমরা এমনিতেই কেবল মারা যাচ্ছি।
২৬ ডিসেম্বরের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নাম পরিচয়হীন, অন্যান্যদের মাঝের একটি নিষ্পাপ চেহারার একজনের মৃত্যুতে একটি ছোট ধাক্কা উদ্বেলিত করেছেঃ ২৬ ডিসেম্বরের বোমা বিস্ফোরণের তাৎক্ষনিক পরেই যখন আহত ১৬ বছর বয়সী মোহাম্মাদ ছার মারা যায়, লেবাননের ইন্টারনেটবাসীরা তাঁর ছবি এবং বোমা বিস্ফোরণের কয়েক মুহূর্ত আগে তাঁর নিজেরই নেয়া নিজের শেষ ছবিটি শেয়ার করেছেন। তারা সারা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে বয়ঃসন্ধি কালে থাকা এই শিশুটি কোন শহীদ নয়। কেননা শহীদ শব্দটি প্রায়ই অনেক ভুল ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বিদেশে প্রবাসী, লেবাননের নাগরিক ব্লগার ব্যাখ্যা [আরবি] করেছেন, কেন এটি একটি [আরবি] গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ
محمد الشعار ليس شهيداً، فهو لم يختار القتال إلى جانب طرف ضد آخر.
محمد الشعار ليس شهيداً، فهو لم يدعم العنف ولم يكن مستعداً لتضحية بحياته من أجل قضايا سياسية أو دينية.
محمد الشعار ليس شهيداً، محمد الشعار ضحية.
মোহাম্মাদ ছার কোন শহীদ নয়। সে তো এক পক্ষের হয়ে অন্য পক্ষের জন্য যুদ্ধ করতে নামে নি।
মোহাম্মাদ ছার কোন শহীদ নয়। কারণ সে সহিংসতাকে সমর্থন করেনি। কোন রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কারণে সে তাঁর জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিল না।
মোহাম্মাদ ছার কোন শহীদ নয়। সে এই ঘটনার বলি।
মোহাম্মাদ ছারকে নিয়ে শুরু হওয়া একতার এই ঢেউ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মঞ্চে #কোনশহীদনই নামের একটি হ্যাশট্যাগে পরিনত হয়েছে। একটি দেশকে পুনরুদ্ধার করতে গৃহীত একটি প্রচেষ্টা হিসেবে লেবাননে কি ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে তা বিবৃত করতে এই হ্যাশট্যাগটি ব্যবহৃত হবে।
লেবাননের জাতিগত সংঘাতের রাজনীতিকে মরিয়ম আকানান টুইটারে জনসমক্ষে নিন্দা করেছেনঃ
@Akananmariam: بدي حجابي يمثل إماني و حبي للسلام مش انتمائي السياسي او الحزبي. #مش_شهيد #notamartyr
@আকানানমরিয়মঃ আমার বিশ্বাস এবং শান্তির প্রতি আমার ভালোবাসা তুলে ধরতে আমি আমার হিজাব চাই, আমার রাজনৈতিক সম্বন্ধীকরণ বা দলীয় সমর্থন তুলে ধরতে নয়।
@লেবানিজভয়েসেস অপরিবর্তনীয় এই সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করেছেঃ
@লেবানিজভয়েসেস প্রতি সপ্তাহ পর পর আমার পরিবারের সদস্যদের সবাই বোমা বিস্ফোরণের পরেও বেঁচে আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখতে, তাদের সংখ্যা গুনতে গুনতে আমি ক্লান্ত হয়ে পরেছি। #কোনশহীদনই #انا_مش_شهيد #لبنان #লেবানন
মাশরৌ৩ লায়লা ফ্রন্টম্যান @হামিদলায়লা পুলিশের ভয়কে উপেক্ষা করে তাঁর প্রেমিকের হাত ধরতে চানঃ
অন্যান্য আরো অনেকেঃ
#আমিকোনশহীদনই হ্যাশট্যাগটির একটি ফেসবুক পাতা আছে। সেখানে আপনি ইন্টারনেটবাসীদের আরো অনেক বিবৃতি দেখতে এবং পড়তে পারবেন।