- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভোট দেয়ার পাপে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণ

বিষয়বস্তু: বাংলাদেশ, জাতি-বর্ণ, ধর্ম, নাগরিক মাধ্যম, নির্বাচন, প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, রাজনীতি, সরকার
ঢাকায় বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্লাটফর্মের লোকেরা ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করছে। ছবি রাহাত খানের। [1]

ঢাকায় বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্লাটফর্মের লোকেরা ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করছে। ছবি রাহাত খানের। সর্ব স্বত্ব ডেমোটিক্স (৮/১/২০১৪)

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরে হামলার ঘটনা ঘটেছে [2]। এতে পুড়ে গেছে কয়েকশ’ ঘরবাড়ি। তারা সর্বস্ব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।

উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় [3]। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি'র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন বয়কট করে।

ভোট দেয়ার অপরাধে তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে বলে আক্রান্তরা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে। টুইটারে শাহ আলী ফরহাদও (@shah_farhad [4]) বলছেন সে কথা:

অনিতার একমাত্র অপরাধ, সে ভোট দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত তার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, লুটপাট চালিয়েছে।

শাহবাগ ওয়ার্ল্ডওয়াইড (@Projonmo13 [9]) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার একটি ইনফোগ্রাফ তুলে ধরেছেন:

[পরিসংখ্যান] জামায়াতের ক্যাডাররা যশোরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করেছে।

মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় সরকারের সমালোচনা হচ্ছে অনেক। তবে প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ তার ফেসবুক পোস্টে [17] হামলাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিয়েছেন:

গতকালের নির্বাচনে ভোট দেয়ার কারণে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা যশোর ও দিনাজপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালিয়েছে। যশোরে ১৫০ জন হিন্দুর বাড়ি জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সম্পূর্ণ তছনছ করেছে, লুট করেছে এবং জ্বালিয়ে দিয়েছে। দিনাজপুরে ১০০ এর উপর হিন্দু বাড়ি এবং দোকান বিএনপি জামায়াতের ক্যাডাররা ভাংচুর করেছে এবং পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের সরকারের স্থানীয় কর্মকর্তারা ভুক্তভোগীদের সহায়তা করছেন। এই ঘটনায় দায়ীদের আমরা চিহ্নিত করার চেস্টা করছি এবং তাদের অবশ্যই আমরা বিচারের মুখোমুখি করবো।

তবে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর [18] সরকারকে উল্টো দোষারোপ করেছেন সংখ্যালঘুদের উপর হামলার জন্যে। তিনি বলেছেন:

The planned attacks on minorities are an attempt to divert attention from the voters’ absence and enthusiastic boycott of the farcical elections amid criticism from national-international organisations.

জনগণ কর্তৃক প্রহসনের নির্বাচন বর্জন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা এবং ভোটারদের কম সংখ্যায় অংশগ্রহণের দিক থেকে দৃষ্টি ফেরানোর জন্যেই সংখ্যালঘুদের উপর এই পরিকল্পিত আক্রমণ।

বাংলাদেশে নির্বাচনের পর প্রতিবারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। গল্পকার জয়দীপ দে শাপলু ফেসবুকে [19] ভোট প্রদানের দায়িত্ব থেকে মুক্তি চেয়েছেন:

২০০১ এ প্রথম আলোয় লিখেছিলাম ভোট দেয়ার পাপ থেকে আমাদের মুক্তি দিন। আজ তাই মনে হচ্ছে আবার।

অদিতি ফাল্গুনীও [20] হিন্দুদের ভোটদানের সুযোগ রহিত করার কথা বলেছেন:

নির্বাচনে মানুষ ভোট দেয় নি, তবে হিন্দুদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে কেন? নাকি খালি হিন্দুরাই দিছে? তাহলে কি নিজের ইচ্ছামত কিছু করার অধিকার হিন্দুদের নাই? যদি তাই হয়ে থাকে, তবে আইন করে হিন্দুদের ভোট দেয়ার অধিকার রহিত করা উচিত: Ruma Modak.

রিপন চক্রবর্তী [21] ফেসবুকে আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন:

2001 সালে নিজে #আক্রান্ত হয়ে বুঝেছি #সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের #জ্বালা কি। #রাজগঞ্জে দেখেছি- নির্যাতিত #হিন্দুদের সহায়- সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে রাত্রী যাপন। কী যে কষ্টের এই দুঃসহ যন্ত্রনা– নির্যাতিত ছাড়া কেউ কোনদিন বুঝতেই পারবেনা। সহ্য করতে না পেরে বাপ দাদার ভিটে মাটি ফেলে কেউ কেউ দেশত্যাগী হয়। হয়তো তারা ভালোই থাকে- হয়তো গিয়ে বেঁচে যায়। কিন্তু আমি যে পারিনা- আমি যে এই দেশটা ছেড়ে যেতে চাইনা— আমার কি হবে- আমার “ছোট বাপী”টার কি হবে— কেউ বলতে পারেন???

এদিকে দেশের প্রথম সারির একটি পত্রিকার বিরুদ্ধে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ উস্কে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে [22]কুলদা রায় [23] লিখেছেন:

ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়ে নির্বাচন হয়েছে। ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত। নির্বাচনের খবর হিসেবে প্রথম আলো প্রথম পাতায় একটি ছবি ছেপেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে– হিন্দুরা ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রথম আলো এই ছবিটির মাধ্যমে প্রমাণের চেষ্টা করছে যে দশম নির্বাচনে কেবল হিন্দুরা ভোট দিতে এসেছে। আর কেউ নয়।

প্রথম আলো এই ছবির মাধ্যমে সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বিএনপি-জামায়াতের আক্রমণের উস্কানী দিচ্ছে। এই খবর প্রকাশের পরপরই যশোরের অভয়নগরে, দিনাজপুরে, ঠাকুরগাঁয়ে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। […]

তবে এই সংবাদপত্র বিবৃতি দিয়েছে [24] যে কোন প্রকাশিত ছবি পরিবর্তন করা হয়নি। তবে নেটিজেনরা তবুও সমালোচনায় মুখর রয়েছেন [25] সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে পত্রিকাটির এইরুপ পক্ষপাতিত্বমূলক ছবি প্রকাশ এবং কমেন্ট অংশে সাম্প্রদায়ক ঘৃণা ভরা কমেন্ট প্রকাশের জন্যে।

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের কারণে বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই দেশত্যাগ করেছেন। সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন ব্লগার অভিজিৎ রায় [26]:

বাংলাদেশে ১৯৪১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল শতকরা ২৮ ভাগ। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরে তা শতকরা ২২ ভাগে এসে দাঁড়ায়। এরপর থেকেই সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত অত্যাচার এবং নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় দেশটিতে ক্রমশ হিন্দুদের সংখ্যা কমতে থাকে। ১৯৬১ সালে ১৮.৫%, ১৯৭৪ সালে কমে দাঁড়ায় ১৩.৫%, ১৯৮১ সালে ১২.১%, এবং ১৯৯১ সালে ১০% এ এসে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে হিন্দুদের শতকরা হার কমে ৮ ভগের নিচে নেমে এসেছে বলে অনুমিত হয়।

এভাবে বারবার সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করে জাতি হিসেবে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি সেটাই জানিয়েছেন জাহিদ নেওয়াজ খান (@znewaz [27]):

এদিকে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচীর [29] আয়োজন করা হয়েছে এবং একটি লংমার্চের আয়োজন [30] করা হয়েছে।