আজ ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এ বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের আগের দিন কমপক্ষে ২০টি জেলায় ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত শতাধিক স্কুলে আগুন দেয়া হয়েছে। ঠাকুরগাঁও এ একজন পোলিং অফিসার সহিংসতার কারনে নিহত হয়েছেন।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি'র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করছে এবং এটি বাতিলের দাবিতে সহিংস আন্দোলন করছে।
স্কুলে আগুন দেয়ার ঘটনায় সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ফারহানা আজিম শিউলী ফেসবুকে লিখেছেন:
নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য দেশে অনেক ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন খবর শুনে টিভির সামনে বসে দেখলাম আগুনে যা পুড়ছে তা তো ভোটকেন্দ্র নয়। আগুনে জ্বলে যাচ্ছে সারি সারি স্কুল ঘর। বছরে ১ দিনের জন্য যাকে আমরা ভোটকেন্দ্র নামে ডাকি, বাকি ৩৬৪ দিনই তার নাম স্কুল। রাজনীতির নামে মানুষ পুড়েছে। এখন পুড়ে যাচ্ছে মানুষ গড়ার কারখানা।
আন্দোলনের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়ার নিন্দা করেছেন গল্পকার ও শিক্ষা কর্মকর্তা জয়দীপ দে শাপলু:
যুদ্ধক্ষেত্রে স্কুল পোড়ানো হয় কিনা আমার জানা নেই। তবে যাই করা হোক, একবার ভাবা হয়, যুদ্ধের পর শান্তির সময় কি করে দেশ চলবে। এই বোধটাও আজ আমাদের নেই। দু'দিনের রাজনীতির জন্য তিল তিল করে গড়ে ওঠা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। চোট পেলে সেরে যায়, বিকলাঙ্গ হলে তো কিছুই করার থাকে না। আন্দোলনের নামে পুরো জাতিটা বিকলাঙ্গ হয়ে গেলে কাদের নিয়ে দেশ চালাবেন আপনারা?
আগুনে পুড়ে গেছে মিডিয়াকর্মী জাবেদ সুলতান পিয়াসের (@piasbd) শিক্ষাজীবনের প্রথম স্কুলটি:
১. আমার প্রথম স্কুল। মদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেত্রকোনা। গতকাল নাকি আমার প্রিয় স্কুলে আগুন দিয়েছে। খবর… http://t.co/A9KqZYstgO
— Jabed Sultan Pias (@piasbd) January 4, 2014
নির্বাচন বাতিল করতে এবার বিরোধী জোট স্কুলগুলো টার্গেট করেছে বলে টুইট করেছেন শাহ আলী ফরহাদ (@shah_farhad):
Target now schools! Over 100 schools torched by BNP Jamaat thugs across #Bangladesh http://t.co/MIhBy3IEX0 #SaveBangladesh from #Terrorism
— Shah Ali Farhad (@shah_farhad) January 4, 2014
নাশকতার এবারের লক্ষ্যবস্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান! বিএনপি এবং জামায়াতের কর্মীরা একশ'র বেশি স্কুলে আগুন দিয়েছে।
এর আগে নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ডাকা অবরোধ কর্মসূচীর সময়ে রাস্তার দুইপাশের গাছ কাটা হয়েছিল। আর এবার আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হলো স্কুল। সেটা উল্লেখ করে শেখ রোকন লিখেছেন:
Yes, enjoy the ‘politics’ my friends. They had cut thousands of roadside trees for ‘blockade’. Now they have started burning the schools to ‘block’ the election. Claps! Claps! Claps!
হ্যাঁ, বন্ধুরা ‘রাজনীতি’ উপভোগ করছি! অবরোধের সময়ে তারা রাস্তার পাশের হাজার হাজার গাছ কেটেছিল। এখন তারা নির্বাচন বন্ধ করতে স্কুল পোড়ানো শুরু করেছে। হাততালি!
বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই এর আগেও বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন হয়েছে। আন্দোলন করে সেগুলো বাতিল করা যায়নি। ব্লগার আরিফ জেবতিক সেটাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের:
[…] এরশাদের ১৯৮৮ সালের নির্বাচন ঠেকাতে আলাদা আলাদা অবস্থান থেকে চেষ্টা করেছিল বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত, বামদল সহ সবাই-কিন্তু সেই নির্বাচন ঠেকানো যায়নি।
খালেদা জিয়ার ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে আলাদা আলাদা অবস্থান থেকে চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগ, জামায়াত, বামদল-কিন্তু নির্বাচন বন্ধ হয়নি।
সুতরাং আগামীকালের নির্বাচন ঠেকাতেও বিএনপি-জামায়াত পারবে না।
কিন্তু এর আগের ঘটনাগুলোয় স্কুল পোড়ানো হয়নি।
এবার স্কুলগুলো পোড়ানো গেল-এটাই নগদ লাভ। জামায়াতকে কোলে তুলে নিয়ে রাজনীতি করে বিবর্তনে এই জায়গাতেই পৌঁছাল বিএনপি!
এদিকে স্কুল পুড়িয়ে দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে দায়ী করেছেন সাংবাদিক ফজলুল বারী:
নির্বাচন ঠেকানো নিয়ে বিএনপি হাল ছেড়ে দিয়েছে’ এমন একটি রিপোর্ট ছাপা হবার পরই ‘হাল’ পুরোপুরি নিজের কর্তৃ্ত্বে নেয়া শুরু করে দিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত-শিবির! পেট্রোল বোমা, মানুষকে পুড়িয়ে মারার সন্ত্রাসের পর ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয়া সহ অকল্পনীয় নানান সন্ত্রাস শুরু করে দিয়েছে দেশ বিরোধী এই অপশক্তি! […]