বাংলাদেশে আগামী ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশী আসনে জিতে গেছেন ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের প্রার্থীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এর দাবীতে বিএনপির নেতৃত্বে অনেক বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করছে।
কিন্তু কেন ২৫টিরও বেশী দল নির্বাচন বয়কট করছে?
সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনের পূর্বে ক্ষমতাসীন দল পদত্যাগ করে না কারন সবাই নিয়ম মেনে চলে। কিন্তু বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে রাজনীতিবিদদের মধ্যে একে অপরের প্রতি আস্থার অভাব রয়েছে এবং তারা মনে করে যে ক্ষমতাশীল দল প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনে কারচুপি করবে। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন হয়েছিল রাজনৈতিক দলের পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাসের এবং দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়- এমন ধারণার উপর ভিত্তি করে। উল্লেখ্য, এর জন্য আরও দায়ী নির্বাচন কমিশনের অকার্যকারিতা, রাজনৈতিক দলের অসদাচরণ ও বিধিবিধানের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং প্রার্থীদের ছলে-বলে-কলে-কৌশলে নির্বাচনে জেতার মানসিকতা। তবে ২০১১ সালে সংসদে এই পদ্ধতির বিলোপ ঘটানো হয় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে এবং তখন থেকেই বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে সংকটের শুরু।
বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলীয় জোট তখন থেকেই এর প্রতিবাদ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে সরকার বিরোধী দলের দাবি মেনে না নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব দেয়, যেখানে বিরোধী দলের প্রতিনিধি থাকার কথাও উল্লেখ করে। বিরোধী দল সরকারের প্রস্তাব মেনে নেয়নি। তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের জন্য হরতাল, অবরোধ, গণতন্ত্রের অভিযাত্রার মতো কর্মসূচী পালন করে।
বিরোধী দলের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব না মানার কারণ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার কালের কণ্ঠ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন:
বিরোধী দল মনে করে, এ রকম হলে তারা নির্বাচনে জিতবে না। তারা মনে করে, যদি নির্দলীয় সরকার নির্বাচনের সময় থাকে, তাহলে তারা ভোটে জিতবে। তারাও এখানে ছাড় দিতে চায় না, কারণ ছাড় দেওয়া মানেই ঝুঁকি নেওয়া। পরাজয়ের ঝুঁকি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে পরাজয়ের ঝুঁকি নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এটাই হচ্ছে ক্ষমতার রাজনীতি।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জোরালো হয় ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবরের পর থেকে। ২৫ নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। বিরোধী দলীয় জোট এই তফসিল প্রত্যাখান করে। তারপরই তারা রেল, সড়ক, নৌপথে টানা অবরোধ কর্মসূচী দেয়।
সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী
নির্বাচন স্থগিত এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারে দাবিতে বিরোধী দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচীগুলো সহিংস হয়ে উঠে। আর এই সহিংসতায় গত এক মাসে প্রাণ হারান ১১১ জন। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ।
আইন ও সালিশি কেন্দ্র (আসক) ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫০৭ জন নিহত এবং ২২,৪০৭ জনের আহত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছে।
রাজনৈতিক সহিংসতার চিত্র দেখুন গ্লোবাল ভয়েসেস-এর এই পোস্টে।
পার্থ সারথী দে (@parthabgd)তাই বিরোধী দলীয় নেতাকে উদ্দেশ্য করে টুইট করেছেন:
বছরের শেষ দিন, এই বছর শেষবারের মত বলি, মোহতারেমা, নাশকতার রাস্তা ছেড়ে দিন। কিছু জঙ্গী জামাত শিবিরের সন্ত্রাসীদের… http://t.co/ct2WDVC8r8
— Partha Sarathi Dey (@parthabgd) December 31, 2013
এদিকে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার কাছে সংলাপে বসার জন্য চিঠি দিয়েছেন। তার বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিলেন। তাছাড়া বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত দুই দলকে সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন। দেশের সুশীল সমাজও সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সমঝোতার আহবান জানিয়েছে। তবে দুই দলের অনড় অবস্থানের কারণে সমঝোতা হয়নি। এখন বিরোধী জোটের বর্জনের মুখে দেশটির জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
2 টি মন্তব্য