কোন ভোট প্রদান ব্যতিরেকেই বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশী আসনে জিতে গেছেন ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের প্রার্থীরা কারন বিরোধীদলের নির্বাচন বয়কটের কারনে তাদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না।
৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে শুধুমাত্র ১২টির মত দল আগামী ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ফলে ৩০০টির মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের দাবী হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। বেশ কয়েক মাস ধরে বিরোধী দল সারা দেশ জুড়ে সহিংস আন্দোলন করছে তাদের দাবী আদায়ের জন্যে। এইসব ধ্বংসযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগ প্রচুর জানমালের ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়েছে এবং সর্বসাধারণের দৈনন্দিন জীবনযাপনে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে।

একজন মহিলা সহ তিনজন আগ্নিদগ্ধ হয়েছেন যখন নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া বিরোধীদলের অবরোধের তৃতীয় দিনে পরিবাগে এক বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারা হয়। ছবি খুরশেদ আলম রিন্কু। সর্ব স্বত্ব ডেমোটিক্স (৩/১/২০১৪)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ বিরোধী দলের বর্জনের কারণে নির্বাচন নিখুঁত হবে না স্বীকার করে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বলে ফেসবুকে একটি পোস্টে উল্লেখ করেছেন [সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৪শে জানুয়ারীর পূর্বে নির্বাচন হতে হবে]:
[…] সাংবিধানিক শুন্যতা তৈরি যেন না হয় তাতে, নিখুঁত না হলেও এই নির্বাচনের কোন বিকল্প নাই। আমাদের মহান সংবিধানকে সমুন্নত রাখার দায়িত্ব এখন সম্পূর্ণ আপনাদের উপর। আপনি যদি অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলের কোন সুযোগ দিতে না চান তবে, ভোটকেন্দ্রে যান এবং ভোট দিন।
কথকতা ব্লগ অবশ্য মনে করে সরকারই আসলে ভোটারদের নিরুৎসাহী করছে:
[…] এই উপসংহারে পৌঁছালে কি ভুল হবে যে ভোটাধিকারের প্রশ্নটি, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার প্রশ্নটি এখন আর মূল্য বহন করে না? ইতিমধ্যে জানা ফলাফলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভোটাররা যেহেতু জানেন, তাঁদের ভোটের মূল্য নেই, সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের দিনে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বিরোধী দল নয়, সরকারই আসলে ভোটারদের অনুৎসাহী করতে সক্ষম হয়েছে। তাতে করে বিরোধীদের ডাকা ‘বর্জন’ বা ‘প্রতিরোধের’ চেয়ে আরও বেশি কারণ তৈরি হয়েছে ভোটারদের ভোট না দেওয়ার।
ব্লগার রাসেল পারভেজ (যিনি তার মতামতের জন্যে গ্রেফতারের পর বর্তমানে জামিনে আছেন) নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক হচ্ছে না:
[…] আজকে যেমন ওবায়দুল কাদের বললেন সংবাদ সম্মেলনে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনটা হয়ে যাওয়ার পর তারা সকল দলের অংশগ্রহণে, স্বচ্ছ নিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্যে সংলাপ করবেন। তিনিও জানেন ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন গণতান্ত্রিক হচ্ছে না।
টুইটারে মাহবুবুল করিম (@Safi_ctg) দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে “বাছাই” হিসেবে উল্লেখ করেছেন:
ইলেকশন নয়, নির্লজ্জ সিলেকশন হচ্ছে http://t.co/em0sLJDSIz via @sharethis
— Mahabubul Karim (@Safi_ctg) December 24, 2013

নির্বাচন বাতিল এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের সমর্থক আইনজীবীদের ওপর পুলিশের জলকামান নিক্ষেপ। ছবি: জাকির হোসেন। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২৯/১২/২০১৩)
আমরা বন্ধুতে শামান সাত্বিক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর দেখতে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছেন:
কথা উঠেছে, সবদলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হওয়ায় গণতন্ত্রের গতি ব্যাহত হবে ৫ই জানুয়ারীর একতরফা নির্বাচনে। কথাটার মধ্যে যতটুকু সত্য লুকিয়ে আছে, তার চেয়ে বেশি সত্য বোধ হয় জনগণের কাছেই সুবিধৃত হয়ে আছে। সরকারগুলোর জনগণের নিজস্ব মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধানের সম্পূর্ণ আন্তরিকতার পরিবর্তে দূর্নীতি থেকে অধিকতর দুর্নীতির দিকে আরো ৫ বছরের জন্য যাত্রা করাটা নিশ্চিত করবে। কেননা, এই দুই দলই দুর্নীতিতে “কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।” সেক্ষেত্রে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে এই মূহুর্তে পুনরায় নির্বাচিত হতে যাওয়া আওয়ামী সরকারকে আমি ততদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় দেখতে চাই, যতদিনে বেশিরভাগ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হয়ে যাবে।
এদিকে নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য বিরোধী দলের অনুপস্থিতিকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বিরোধী দল কেন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করছে?
1 টি মন্তব্য