আপনি কি অকুপাই ওয়ার্ল্ড স্ট্রিটের কোরিয়ান সংস্করণ দেখতে চান?
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক তরুণের হাতে লেখা একটি পোস্টার দক্ষিণ কোরিয়ার সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই পোস্টারে উঠে এসেছে সামাজিক অবিচার আর রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনোবেদনার কারণ। “আমরা ভালো নেই” পোস্টারে উদ্বুদ্ধ হয়ে কোরিয়ার তরুণরা নিজেদের পোস্টার লিখছে এবং সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে দিচ্ছে।
গত সপ্তাহের ঘটনা এটা। কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জু হাইয়ুন য়ু দুই পাতা জুড়ে একটি মেসেজ লিখেন। এবং সেটা ভার্সিটির বুলেটিন বোর্ডে টাঙ্গিয়ে দেন। জু'র মেনিফেস্টোতে অনেক সামাজিক ইস্যু ছিল যা প্রতিবাদকে উস্কে দেয়। এর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে স্ক্যান্ডাল, রেলওয়ের বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ছাটাই, হাই ভোল্টেজ টাওয়ার নির্মাণের প্রতিবাদে মিরায়াং শহরের বয়স্ক মানুষদের লড়াই, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি এবং অনিশ্চিত চাকরির বাজার।
তিনি তার সহপাঠীদের আহবান জানান, “আমি তোমাদের জিজ্ঞেস করতে চাই, ‘তুমি কি ঠিক আছো'? এই ইস্যুগুলো তোমার সমস্যা নয় বলে এগুলো অগ্রাহ্য করে শান্তিতে আছো? আমি শুধু তোমাকে বলতে চাই, রাজনীতির প্রতি উদাসিনতা দেখিয়ে এগুলো লুকিয়ে ফেলে নিজের ভালো থাকাটাকে জাস্টিফাই করছো। আর তুমি যদি ‘ভালো’ না থাকো, তাহলে এই সমস্যাগুলো দেখতে পেতে। তারপর তোমার মতামত যাই হোক না কেন, সেটা দিতে পারতে।”
এই পোস্টার ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। দাবালনের মতো তা ক্যাম্পাসের সীমানা ছাড়িয়ে দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছে যায়। সিউল ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইওনসেন, হ্যানইয়াং, ইডাব্লিউএইচএ, কেএআইএসটি, পুশান বিশ্ববিদ্যালয়সহ সিউলে ভেতর-বাইরে ২০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টারটি ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এবং আরো কিছু হাই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এতে যোগ দেয় (নিচের ছবিতে দেখুন)।
পোস্টারের ছবি শেয়ার করার জন্য “ক্যান নট বি ওকে” নামের একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই পেজটিকে ২৬২,০০০ জন ফেসবুক ইউজার লাইক দেন। জু'র পোস্টারটি যেন একটি আন্দোলনে রূপ নেয়। পোস্টারটিতে ২০০০ জন লাইক দেন। এবং ৪৪০ বার এটিকে শেয়ার দেয়া হয়। নিচের ছবি ৬টি ক্যান নট বি ওকে'র ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। অনুমতি নিয়ে ছবিগুলো পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে:
শিক্ষার্থীদের মাঝে পোস্টারটি এতো জনপ্রিয় কেন হলো, সেটার বিশ্লেষণ করেছেন কিছু সাংবাদিক। তারা উপসংহার টেনে বলেছেন, এই পোস্টারে কোনো রাজনৈতিক দলের নির্দিষ্ট বক্তব্য উঠে আসেনি। বরং সহপাঠীদের মাধ্যমে কোরিয়ার তরুণদের অব্যক্ত ব্যথা, নিরাশা ও সংগ্রামের কথাই উঠে এসেছে। এজন্য এটি সবার কাছে এতোটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
হাতে লেখা পোস্টারগুলো অনেক টুইটার ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন:
숙명여대. 여기서부터 저 끝까지가 이른바 “안녕들 하십니까” 대자보. 그 대자보를 보고 밤새 잠을 잘 수가 없었다는 구절이 눈에 띕니다. 뭔가 학생들의 마음을 울린게 있었나봐요. pic.twitter.com/X10usKoZsj
— 홍성수 (@sungsooh) December 16, 2013
সোকমিয়াং উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়। একপাশ থেকে অন্যপাশ পর্যন্ত শুধুই “আমরা ভালো নেই” পোস্টার। একজন সেখানে লিখেছে, “পোস্টারগুলো পড়ার পর আমি গত রাতে একফোঁটা ঘুমাতে পারিনি।” এই পোস্টারগুলো শিক্ষার্থীদের একদম মনের কথা।
— 희윤#바보가꿈꾸는세상#국정원특검 (@hee1025w) December 14, 2013
শিন ইযান-জে এবং পার্ক মো-ইয়াং হাতে লেখা “আমরা ভালো নেই” পোস্টারটি লিখেছে। এটা বার্কলের (ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়) বুলেটিন বোর্ডে লাগানো হয়েছে। এটা এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
효성고 3학년생의 “안녕들 하십니까?” pic.twitter.com/kXEWWlw44S
— 조국 (@patriamea) December 14, 2013
হাইসাং হাই স্কুল সিনিয়রের “আমরা ভালো নেই” পোস্টারের ছবি।
ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পরে কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় জু'র পোস্টারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে “গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্মারক” হিসেবে সংগ্রহ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
গত ১৪ ডিসেম্বরে কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী “আমরা ভালো নেই” ব্যানারের অধীনে অফলাইনেও প্রতিবাদ কর্মসূচীর আয়োজন করে। =
20131214, 서울역 pic.twitter.com/LSIuCr7P5G
— 고려대 대학원총학생회 (@gokrgs) December 14, 2013
২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বরে সিউল স্টেশনে।
20131214, 고려대학교 정대후문 pic.twitter.com/Xum3vElvah
— 고려대 대학원총학생회 (@gokrgs) December 14, 2013
২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বরে কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের প্রবেশ পথে।
ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এই পোস্টার নিয়ে দেশের সবচে’ জনপ্রিয় লেখক গং জি-ইয়ং মন্তব্য করেছেন:
2013 올해의 키워드는 단연”안녕들 하십니까?” 이다! 한 대학생의 양심과 용기가 이 겨울 이 나라 이 시대를 흔들고 있다. 한 사람은 결코 작은 존재가 아니구나!
— 공지영 (@congjee) December 14, 2013
২০১৩ সালের মূল শব্দ (কীওয়ার্ড) হচ্ছে “আমরা ভালো নেই”। একজন ছাত্রের বিবেক এবং সাহস এই শীতে পুরো দেশকে আন্দোলিত করেছে। একজনের ব্যক্তিগত চেষ্টা সবসময়ে তুচ্ছ নয়।