ভিসা প্রতারণার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভারতের ডেপুটি কাউন্সেল জেনারেলকে নিউ ইয়র্কে গ্রেফতারের ঘটনায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যে চলা কূটনৈতিক টানাপোড়ন এই প্রথম প্রশমনের লক্ষণ প্রদর্শিত হচ্ছে।
সংবাদে জানা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোনে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেননের কাছে দেবযানী খোবরগাডের গ্রেফতার প্রক্রিয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছে , যাকে ১২ ডিসেম্বর ম্যানহাটনে তার মেয়ের স্কুলের সামনে হাতকড়া পড়ানো হয়। পরে দেবযানীকে নগ্ন করা হয় এবং দেহ তল্লাশী চালানো হয় এবং তার ডিএনএ-এর নমুনা সংগ্রহ করা হয় ও ২৫০,০০০ মার্কিন ডলারে জামানত প্রদানের পর তাকে ছেড়ে দেওয়ার আগে তাকে মাদক আসক্ত এবং যৌনকর্মীদের সাথে একই কামরায় রাখা হয়।
খোবরগাডের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে ভারত থেকে আনা তার গৃহকর্মীকে প্রতি ঘন্টায় ৯.৭৫ ডলার প্রদান করার কথা থাকলেও আদতে উক্ত ভদ্রমহিলা ঘন্টা প্রতি ৩ ডলার হিসেবে বেতন পেয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে দেবযানীকে দশ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হতে পারে।
দেবযানীর প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, তাতে ভারত ক্ষুব্ধ। ভারত সরকার সে দেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিবিদদের সুবিধা প্রত্যাহার করে এবং ভারতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ও ভারতীয় কর্মচারীসহ দূতাবাসের কর্মচারীদের প্রদান করা বেতনের মত তথ্য দাবী করে এই ঘটনার জবাব প্রদান করে। একই সাথে ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের জন্য আনা মদসহ সকল আমদানী ছাড় স্থগিত করে।
খোবাগাডের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে ভারতীয় সংসদ সদস্যরা তীব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে। ভারতের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি এমনকি এর জবাব হিসেবে ভারতে নিযুক্ত সমকামী পুরুষ কূটনীতিবিদদের গ্রেফতার করার পরামর্শ প্রদান করে। গত সপ্তাহে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পুরুষ সমকামিতার উপর নিষেধাজ্ঞা নতুন করে জারি করেছে।
কেরির ক্ষমা প্রার্থনা পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ এই গ্রেফতার করার প্রক্রিয়া পুনরায় যাচাই করে দেখার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে কিন্তু গ্রেফতারের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করার পরপর, তারা তা বন্ধ করে দেয়, যা কেবল ভারতের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালে।
সংবাদ ওয়েব সাইট ফার্স্ট পোস্টে লেখা এক প্রবন্ধে লেখক রাজীব শর্মা, কূটনৈতিকদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্টের আইনে যুক্তির অভাবের বিষয়টি উল্লেখ করছে:
যদি যুক্তরাষ্ট্র তার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন ১৯৪টি দেশের ক্ষেত্রে তা সমানভাবে প্রয়োগ করে তাহলে দেশটিকে শত শত কূটনীতিবিদকে হাতকড়া পড়াতে এবং জেলে পাঠাতে হত, এবং প্রায়শই এই ঘটনা ঘটত। কারণ বিদেশী কূটনীতিবিদেরা যে কর্মী নিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে তাদের নূণ্যতম মজুরি উক্ত কর্মীর প্রাপ্ত বেতনের চেয়ে বেশী।
প্রশ্ন হচ্ছে কি ভাবে খোবরাগাডে তার ন্যানিকে মাসে ৪৫০০ ডলার বেতন দেবে যেখানে তার নিজের প্রতি মাসের বেতন ৪১২০ ডলার, দেবযানীর পিতা অবসরপ্রাপ্ত আইএএস কর্মকর্তা উত্তম খোবরাগাডে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছে, যা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ওয়াশিংটনের বিবেচনা করা উচিত, কারণ এটা ভারতের একার কাহিনী নয়।
সে আরো উল্লেখ করে:
খোবরাগাডের বিরুদ্ধে ভিসা প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে, এটি এমন এক বিষয় যা এখনো প্রমাণিত হয়নি। এমনকি যদি তা প্রমাণিত হয়, তাহলে কি তা এমন কোন অপরাধ যার জন্য একজন কূটনীতিবিদকে হাতকড়া পড়াতে হবে এবং জেলে ভরতে হবে?
লেখক এস. কে. শাহ তার ব্লগে গ্রেফতারের ঘটনার সমালোচনা করেছে:
যুক্তরাষ্ট্র দেবযানীর প্রতি যে আচরণ করেছে তা আমাদের কূটনীতিবিদদের জন্য অসম্মান এবং অপমান। ভারত সরকারের উচিত সামগ্রিক ভাবে ভারতের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা।
যাইহোক, সন্দীপ রায়, ফার্স্ট পোস্টের প্রবন্ধে দেবযানীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রতি নিবিড় মনোযোগ প্রদান করেছে :
বিদেশে ভারতের কাউন্সিলার কর্মীর এক প্রতিনিধি হিসেবে দেবযানী খোবরাগাডে অনেক অধিকার ভোগ করে। তবে স্বল্প বেতনে এক গৃহকর্মী পাওয়ার অধিকার তার মধ্যে পড়ে না।
এই কূটনীতিবিদকে গ্রেফতারের ঘটনায় তার পক্ষে এবং সমালোচনায় টুইটারে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন শুরু হয়। লন্ডন ভিত্তিক এক সাংবাদিক শুভাশিস লিখেছে:
The US has broken diplomatic rules and Khobargade has abused her position to disregard the US laws. Both at fault. Both must admit.
— Shubhashish (@shubHASHISH) December 17, 2013
যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক নীতি ভঙ্গ করেছে এবং খোবরাগাডে যুক্তরাষ্ট্রের আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তার পদের অমর্যাদা করেছে। উভয়ের দোষ রয়েছে। উভয়ের তা স্বীকার করা উচিত।
মুম্বাই ভিত্তিক সাংবাদিক সুদর্শন কুমার টুইট করেছে:
Impressed with the Indian govt moves in Devyani Khobragade case…takes US head on..
— Sudarshan Kumar (@sudarshankr) December 17, 2013
দেবযানী খোবরাগাডের ঘটনায় ভারত সরকারের কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ… যুক্তরাষ্ট্রকে মাথা নত করতে হয়েছে।
কাউন্সিলার এবং ফটোগ্রাফার সামিত বারোহ এই গ্রেফতারের ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের আইনের ধারাবাহিকতা প্রকাশ হিসেবে দেখছে:
US policy consistent: One set of rules for own people.Another set of rules for the rest of the world.Devyani Khobragade just another example
— Smita Barooah (@smitabarooah) December 17, 2013
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বৈষম্যঃ একটি তার নিজ দেশের জনগণের জন্য। আরেক ধরনের আইন বাকী বিশ্বের জন্য। দেবযানী খোবরাগাডে তার এক অন্যতম উদাহরণ
দেবযানী খোবরাগাডের গৃহকর্মীর আনা বেতন বিষয়ক অভিযোগের আলোকে টুইটার ব্যবহারকারী আনভেশা তাকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে :
Devyani's political affiliations or property deals in India does not justify ill-treatment meted out to her in USA. This is the bottom line.
— Anvesha (@anveshaq) December 18, 2013
দেবযানীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা অথবা ভারতে সম্পত্তির বিলি বন্টন যুক্তরাষ্ট্রে তার গৃহকর্মীর প্রতি খারাপ আচরণের বিষয়টিকে যৌক্তিক করে তোলে না।
টুইটার ব্যবহারকারী শ্যাম শ্রীকুমার লিখেছে:
When you cannot afford a nanny, you don't. Bending the law is not the solution. Never for a diplomat. http://t.co/RkabU7K8CJ via @ibnlive
— Shyam Srikumar (@shyamsrikumar) December 17, 2013
যখন আপনার কোন গৃহকর্মীকে রাখার সমর্থ নেই, তাহলে আপনার তা রাখা উচিত নয়। আইনকে পাশ কাটানো, এর সমাধান নয়।
এদিকে, দেবযানী খোবরাগাডেকে নিউ ইয়র্কের স্থানী মিশনে বদলী করা হয়েছে, যার মানে সে এখন সম্পূর্ণভাবে কূটনৈতিক দায়মুক্তি সুবিধাভোগীর দাবীদার: