নেটিজেনদের সহযোগীতায় ইলিনয়েস ভিত্তিক কারাম ফাউন্ডেশন ১০ হাজার মার্কিন ডলারের একটি সত্যিকারের লক্ষ্য থেকে সর্বমোট ১ লক্ষ ৩ শত ৪৭ মার্কিন ডলার তহবিলে জমা করেছে। “গোঁফ কেটে ফেলে একটি সিরিয় শিশুকে উষ্ণ রাখুন” শিরোনামে অনলাইনে ৩০ নভেম্বর থেকে শুরু করে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রচারাভিযানটি চালানো হয়েছে।
গত ৩ ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রচারাভিযানটি প্রকৃতপক্ষে ৫৬ হাজার ২ শত ৮৭ মার্কিন ডলারের আকর্ষনীয় অংকের অর্থ সংগ্রহ করেছে এবং রাজু ফাউন্ডেশনের #গিভিংটুউইসডে প্রতিযোগীতা জয়ের ফলে বাড়তি আরো ১৫ হাজার ডলার এসেছে। প্রচারাভিযানের শেষ দিন পর্যন্ত দানের হিসাবে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বেড়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ১২ টি দলে ২৭ জন অংশগ্রহণকারী এবং আয়োজনকারী এতে সম্পৃক্ত রয়েছে। তারা তাদের মুভেম্বর গোঁফ না কেটেই অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রতিযোগিতা করে।

ছবি সূত্রঃ কারাম ফাউন্ডেশনের সংগৃহীত পাতা
প্রচারাভিযানটি এর আয়ে সিরিয়ার অভ্যন্তরে বাস করা শিশুদের জন্য ২০ ডলারের একটি শীতের প্যাকেজ তৈরি করতে যাচ্ছে। এই প্যাকেজে থাকবে একটি কোট, একটি কম্বল এবং একটি মাথার টুপি, দস্তানা অথবা ওড়না।
আয়োজকদের একজন কারিম ওমারা বলেছেন, তিনি এই প্রচারাভিযানটির অংশ হতে পেরে পরম আনন্দিত। তিনি আশা করেন এটি অনেক দূর যেতে পারবেঃ
আপনারা প্রত্যেকেই একেকজন সুন্দর মনের মানুষ। আপনি দান করুন, প্রচারাভিযানটির বিজ্ঞাপন করুন আর যেটাই করুন, তাতে কোন পার্থক্য করা যায় না। আমি বোঝাতে চাইছি, আমি শুধুই একজন সামান্য কলেজ ছাত্র। তাই আমি তেমন অর্থ দান করতে পারিনি। কিন্তু আমি এই প্রচারাভিযানটিকে আমার শ্রম দিয়ে সাহায্য করার পথ বেছে নিয়েছি। আশাহত হবেন না। আপনি মনে করুন কোন কাজেই কোন ভেদাভেদ নেই। আমরা যে যার মতো করে সাহায্য করতে পারি। কতোটুকু ছোট কিংবা কতোটা বড়, তাতে কিছু যায় আসে না।
সর্বোত্তম ফলাফল পাওয়ার জন্য দলবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে আরেকজন আয়োজক কেনান রাহমানি বলেছেনঃ
সত্যিকার অর্থেই বলছি, জনগণ, আমরা একতাবদ্ধ হলেই কেবল ভালো থাকবো। এই সক্রিয় সম্প্রদায়টি সব সময়ই একই সাথে দশটি পথে যেতে চায়। এই প্রচারাভিযানটিতে আমরা যেমনটি করেছি। আমরা নামে মাত্র কখনো কখনো একত্রিত হয়েছি। হয়তবা আমি এ কারণেও অপরাধী। আমি খুব ভালোভাবেই বুঝি যে সবারই নিজস্ব ধারণা আছে। তারা অন্যদের কাছ থেকে সমর্থন আশা করে।
তাদের এই অর্জন নিয়ে মোহান্নাদও যথেষ্ট সন্তুষ্টঃ
70,000? Haha SIKE… scratch that we made over $95,000 <33 I'm so happy
— MohaNNad أبو مازن (@TheMoeDee) December 4, 2013
৭০ হাজার ? হা হা… আমরা ৩৩ কম ৯৫ হাজার ডলার সংগ্রহ করেছি, তা খোদাই করে রাখুন। আমি খুবই আনন্দিত।
সিরিয়ার প্রবন্ধকার রবিন ইয়াসিন-কাসাবও এই প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি আয়োজকদের সততার প্রতি আস্থা প্রকাশ করে আরো বলেছেনঃ
আমি এই দরিদ্র-সেবা কার্যক্রমটির আয়োজকদের চিনি। আমি তাদের প্রতি আস্থা প্রকাশ করতে পারি, তারা সত্যিকার অর্থেই বেশ সৎ। তাদের সংগৃহীত প্রতিটি মুদ্রা একেকটি সিরিয় শিশুকে এই শীতে উষ্ণ রাখতে কাজে লাগবে। দয়া করে, অর্থ দান করুন। এই পাতাটি শেয়ার করুন। যতটা সম্ভব ততোটা অর্থ সংগ্রহ করতে আমাদের হাতে আর মাত্র কয়েকটি দিনই বাকি আছে।
শীত এসে গেছে
তিন বছর ধরে সিরিয়াতে অস্থিরতা চলছে। সিরিয়ার শীতকাল মৃতদের চেয়ে অনেক দূরে আর বসন্ত কাছে কোথাও নেই। গোলা বর্ষণ না করা হলেও এই হাড় কাঁপানো শীত সিরিয়ার ছোট্ট ফেরেস্তাদের রাতে ঘুমাতে দেবে না। কঠিন বাস্তবতার প্রমাণ দিতে তৈরি করা বিভিন্ন প্রামাণিক সাক্ষ্য এবং ছবি দেখে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে সেভ দ্যা চিলড্রেন সংস্থাটি মেনে নিয়েছে যে শীতকালে সিরিয়ার পরিবারগুলো আসলেই নিদারুণ দুঃখ কষ্ট ভোগ করে। রিপোর্টে উদ্ধৃত একটি অংশে ১১ বছরের আলী বলেছে, যে পরিমাণ সাহায্য পাঠানো হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়ঃ
“আমাদের একটিই কম্বল আছে। আমাদের আর কিছুই নেই – এমনকি কোন জামা কাপড়ও নেই। আমরা একটি কম্বল পেয়েছি, কিন্তু আমরা এখানে তিনজন রয়েছি। এতে আমাদের কীভাবে চলবে? এতে আমরা শীত নিবারণ করবো কীভাবে? এটা পর্যাপ্ত নয়। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি – আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ছি।”
গত মাসের শুরুতে ইস্তানবুল-ভিত্তিক চিত্রগ্রাহক জন রেফর্ড বলেছেন বাস্তুচ্যুত সিরিয় পরিবারগুলো যে শুধুমাত্র নির্বাসনজনিত দুঃখ কষ্টই ভোগ করছেনা বরং শীতকেও ভয় পাচ্ছেঃ
Huddled in an Istanbul park a couple of Syrian families from Homs, ten very small children, its getting colder each night now.
— John Wreford (@JohnWreford) November 16, 2013
হোমস থেকে আসা একটি সিরিয় পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, ছোট ছোট দশটি বাচ্চা ইস্তানবুলের একটি উদ্যানে একে অন্যের গা ঘেঁষে কুন্ডলী পাকিয়ে বসে থাকে। এখন প্রতিটি রাতই শীতল থেকে শীতলতর হচ্ছে।
হোমস-ভিত্তিক সক্রিয় কর্মী লুইসা জাঙ্ঘ বলেছেন, সিরিয়ার ভিতরেও সাহায্যের প্রয়োজন। তিনি মানবিক সাহায্যের জন্য আকুতি জানিয়েছেনঃ
A humanitarian call. If you want to help, make sure #Syria receives blankets. Still a huge shortage in the north and its cold.
— Luisa Zangh (@LuisaZangh) December 1, 2013
একটি মানবিক ডাক। আপনি যদি সাহায্য করতে চান, তবে সিরিয়াতে দয়া করে কম্বল পাঠান। এখনো উত্তরাঞ্চলে কম্বলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে এবং সেখানে খুবই ঠান্ডা।
প্রতিটি মুদ্রাই মূল্যবান। আপনি এখানেও দান করতে পারেন।