বিগত সপ্তাহে পুর্ব চীনে রেকর্ড পরিমাণ ধোঁয়াশা (কুয়াশা এবং ধোঁয়ার মিশ্রণ) নিয়ে পশ্চিমা এবং চীন উভয়ের প্রচার মাধ্যম প্রচুর লেখালেখি করেছে। এর ফলে বিমান যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। আর স্কুল শুরু হতে দেরি হয়েছে।
চীনের সোশ্যাল মিডিয়ায়, উইবো এবং উইচ্যাট ব্যবহারকারীরা তাদের ধোঁয়া ঢাকা শহরের ছবি পোস্ট করেছে এবং সেখানকার বাতাসের গুণগত মানের সূচক আপডেট করেছে, ৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে কি ভাবে ধোঁয়াশা দূর করতে ভাবে সেটি সহ একটি হতাশাজনক ইনফোগ্রাফিক প্রচার করা হয়।
এ ক্ষেত্রে যে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে তা পাঠ করুন:
১ একটি টুপি পরুন
২ মুখোশে মুখ ঢাকুন
৩ লম্বা কোট পরুন
৪ ঘরের বাইরের কাজ আপাতত বন্ধ রাখুন
৫ বাইরে থেকে আসার পর মুখ এবং হাত ধুয়ে ফেলুন
৬ মুখের বদলে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন
৭ নাক পরিষ্কার করুন
৮ উপযুক্ত সময়ে জানালা খুলুন
৯ তাড়াতাড়ি ঘুমান
১০ প্রচুর পানি পান করুন
১১ ধূমপান এড়িয়ে চলুন
১২ প্রচুর মৌলিক ফাইবার যুক্ত খাবার খান
এদিকে চীন সরকার আবহাওয়া এবং রাস্তার বারবিকিউ করাকে এই ধোঁয়াশাপূর্ণ আবহাওয়ার কারণ হিসেবে উপস্থাপন করেছে এবং তা দূর করার জন্য কিছু প্রচলিত জ্ঞান তুলে ধরেছে। খোলামেলা বক্তব্যের এক টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপক মেঙ্গফাই এই বায়ু দূষণ বিষয়ে তার ভেতরের ভাবনা তুলে ধরার মত যথেষ্ট সাহসী ছিল [চীনা ভাষায়], এই সময় যা এক বিরল ঘটনা বিশেষ করে ওয়েবো বিতর্ক এবং মতামত প্রদানের জন্য এক বিপজ্জনক স্থানে পরিণত হয়েছে যেখানে সরকার বড় আকারের দমন অভিযান পরিচালনা করে। সেন্সরশিপ এড়ানোর জন্য তিনি একটি স্ক্রীনশটের মাধ্যমে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন :
১ কেবল আবহাওয়ার কারণে নয়, পরিবেশ দূষণের কারণে এই ধোঁয়াশা, আর এর জন্য অবশ্যই প্রধান দায়ভার সরকারের।
২ এই বায়ু দূষণ এবং ধোঁয়াচ্ছন্ন আবহাওয়ার জন্য কয়লা পুড়িয়ে তাপ উৎপন্নকারী প্রজন্ম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কিন্তু এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তা জিডিপির হার হ্রাস করে ফেলবে, কাজেই স্থানীয় সরকার এই কাজটি চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
৩ বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নাগরিকদের কম কম গাড়ি চালানোর আহ্বান জানানো নির্বোধের কাজ নয়, বরঞ্চ নাগরিকদের মনোযোগ ভিন্ন দিকে পরিচালিত করার এক ভালো কৌশল। মার্কিন জাতি গাড়ি নিয়ে জীবন পাড়ি দেয়, কিন্তু তাদের আবহাওয়া কেন এই রকম ধোঁয়াটে নয়?
৪ ওই সমস্ত বিশেষজ্ঞ এবং সরকারি কর্মকর্তা যারা মনে করে বারবিকিউ আর রান্নার কারনে দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তারা নির্বোধ। পশ্চাৎ দেশের মাধ্যমে বায়ু ত্যাগ এক দূষণ, তাহলে একে কেন তালিকায় রাখা হচ্ছে না?
৫ পরিবেশগত বিপর্যয়ের পেছনে সরকারকে সবচেয়ে বড় দায় গ্রহণ করতে হবে, যখন তারা বলে “সকলে এর জন্য দায়ী” তারা নিজেদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে।
এই স্ক্রীনশট ১৩০,০০০ বার রিপোস্ট করা হয়েছে এবং এতে ৪০,০০০ মন্তব্য করা হয়েছে। অনেক নেট নাগরিকের এতে সমর্থন রয়েছে।
চলচ্চিত্র পরিচালক ইয়াংওয়াইই লিখেছে [চীনা ভাষায়] :
面对空气污染,我们要做的不是带上面具,还是站起来说“不”。
বায়ুদূষণ মোকাবেলা করছি, আমাদের যা করতে হবে তা হচ্ছে মুখোশ পড়া নয়, তার বদলে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং একে না বলা।
আরেকজন নেট নাগরিক “ডু জিং উই” শক্তি উৎপাদন কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের আহ্বান জানিয়েছেন:
能源结构转型,提高工厂废气排放标准是唯一解决途径!
শক্তি উৎপাদন কাঠামোর পুনর্বিন্যাস, কয়লা চালিত শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের নির্গমনের আদর্শের বৃদ্ধি এই সমস্যার একমাত্র সমাধান!
তবে, কয়েকজন নেট নাগরিক বায়ু দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধিকে দায়ী করেছে। ওয়েইবোতে সাংবাদিক জিয়াং জিং লিখেছে:
晚高峰时在街上堵着,就会发现北京的公共汽车很多都是空的或者乘客很少,跟北欧那些人口稀少的城市差不多。人们要么开车,要么坐地铁。没有鼓励绿色生活的政策,人们就会这样一边堵着,一边呼吸着毒气,一边骂政府过活。
সন্ধ্যার সময় যখন মানুষের ভীড় বেড়ে যায়, তখন আপনি দেখতে পাবেন বেইজিং-এ অনেক বাস খালি কিংবা সেটাতে মাত্র কয়েকজন যাত্রী রয়েছে, অনেকটা ঠিক উত্তর ইউরোপের শহরগুলোর মত যেখানে দূষণের মাত্রা সামান্য। সেখানে নাগরিকরা হয় গাড়ি চালায়, নয়তো সাবওয়ে ব্যবহার করে। সুন্দর পরিবেশে বাস করার বিষয়কে উৎসাহিত করার জন্য কোন নীতিমালা নেই, তার ফলে নাগরিকরা ট্রাফিক জ্যামের মুখোমুখি হচ্ছে, যেখানে তারা বিষাক্ত গ্যাস গ্রহণ করছে আর সরকারকে অভিশাপ দিচ্ছে।
নিচে উইচ্যাট থেকে পাওয়া আরো কিছু ছবি দেখুন: