ইয়েমেনের টুইটারবলয়, যা সাধারণত হত্যা, বিমান হানা অথবা রাজনৈতিক টালমাটালের মত অলক্ষুণে খবরে ভরা থাকে, কিছু দিন হল রোমিও আর জুলিয়েটের প্রেম কাহিনীর এক আধুনিক সংস্করণে ছেয়ে গেছে। যদিও এই গল্প অনেক বেশী জটিল আর এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কিছু জাতীয়তাবাদী প্রশ্ন। জুলিয়েট হল হুদা আব্দুলহা আল নারিন, এক জন ২২ বছর বয়সী সৌদি রমণী যিনি তাঁর রোমিও, ২৫ বছর বছরের ইয়েমেনি অভিবাসী আরাফাত মোহাম্মদ তাহের আল-কাধি-র প্রেমে পড়েন।
গ্রামের যে দোকানে আরাফাত কাজ করতেন, সেখানে হুদা মোবাইল কিনতে গেলে আরাফাতের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে আর তারা পরস্পরের প্রেমে পড়েন। আরাফাত বারবার বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও বাড়ির লোক রাজি না হওয়ায় আর জোর করে অন্য জায়গায় হুদার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে হুদা পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি গত মাসে ইয়েমেনে পালিয়ে যান আর তাঁর ইয়েমেনি প্রেমিককে বিয়ে করেন। কিন্তু সীমান্তে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে বন্ধ করা হয়। বর্তমানে ইয়েমেনে বেআইনি ভাবে ঢোকার অভিযোগে হুদার সাজা হতে পারে এবং আরাফাতেরও সামনেও শাস্তির খড়গ ঝুলছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হুদাকে অবৈধ অনুপ্রবেশে সাহায্য করার, যদিও আরাফাত হুদার নয় ঘণ্টা পরে সীমান্ত পার হন।
২০১৩ সালের ৩রা নভেম্বর সৌদি নাগরিক ওকাজ আলিয়ুম দ্বারা প্রকাশিত এক ইউটিউব সাক্ষাৎকারে হুদা জানিয়েছেন কি ভাবে আরাফাতের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল, কিভাবে ওরা প্রেমে পড়েছিলেন আর কেন পরিবারের লোক শুধু মাত্র ইয়েমেনি হওয়ার কারণে আরাফাতের সঙ্গে তাঁর বিয়ের প্রস্তাব মেনে না নেওয়ায় উনি পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর গবেষক বেল্কিস উইলি টুইট করেছেন:
Yemen deporting Huda could well lead to her death, UNHCR must do all in its power to interview her before too late- http://t.co/JtIXgsUhbA
— Belkis Wille (@belkiswille) November 21, 2013
ইয়েমেন হুদাকে দেশান্তরি করার অর্থ হুদার প্রাণ হারানো, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার উচিৎ দেরি হয়ে যাওয়ার আগে সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে হুদার সাক্ষাৎকার নেওয়া
হুদাকে সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো হলে তাঁর পরিবার তাঁর ওপর অত্যাচার করতে পারে। তাই জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা আজ হুদাকে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রবিবার (২৪ শে ডিসেম্বর) ইয়েমেনি কোর্টে তাঁর কেসের শুনানির দিন ছিল যা পহেলা ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়।
ইয়েমেনি সাংবাদিক নাসের আরাবি টুইট করেছেন:
The Saudi woman Huda, is now under the UN protection, no one can harm her from family or gov, said the lawyer Jamal Jubi.
— Nasser Arrabyee (@narrabyee) November 24, 2013
আইনজীবী জামাল জুবি জানিয়েছেন যে সৌদি রমণী হুদা এখন জাতিসংঘের আশ্রয়ে আছে, পরিবার বা সরকারের কেউ তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
সাংবাদিক সৈয়দ আল-বাতাতি আমাদের জানাচ্ছেন:
#Yemeni Romeo was released from prison,but his Saudi Juliet is still behind bars. http://t.co/uZum5wlbGh #فتاة_بحر_ابو_سكينه
— Saeed Al-Batati (@saeedalBatati) November 24, 2013
রোমিওকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ওনার সৌদি জুলিয়েট এখনো কারাগারে বন্দী।
ইয়েমেনে এই প্রেমিক যুগলের অশেষ ভোগান্তির কথা জানতে পেরে বহু মানুষ তাদের সমব্যথী ও সমর্থকে পরিণত হয়েছেন আর এর মধ্যে আছেন বিশিষ্ট ব্যাঙ্গ চিত্রকর কার্লোস লাটুফ যিনি তাঁর সমর্থন জানিয়ে বলেছেন:
My solidarity with Huda and Arafat, the Saudi-version of Romeo and Juliet. #Yemen @theyementimes pic.twitter.com/Oel6z980bM
— Carlos Latuff (@LatuffCartoons) November 24, 2013
আমি সৌদি রোমিও-জুলিয়েট, হুদা আর আরাফাতের সঙ্গে আছি।
ইতিমধ্যে কোর্ট চত্বরে শত শত মানুষ একত্রিত হয়ে “সীমান্ত আর নাগরিকত্বের আগে ভালবাসা”-র স্লোগান দেয়। “
এদিকে জনসাধারন জজের কাছে মামলা খারিজ করে ওই দুজনের বিয়ে দেওয়ার দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। হুদা আর আরাফাতের সমর্থনে “আমরা সবাই হুদা আর আরাফাত” শীর্ষক একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করা হয়, যা ইতিমধ্যে ১২,০০০ বার লাইক করা হয়েছে। এই খবরও পাওয়া গেছে যে ইয়েমেনের একটি শিখ পরিবার এই যুগলকে একটা বাড়িতে থাকতে দিতে চেয়েছে আর আরেকটি পরিবার কিছু আসবাব দিতে চেয়েছে।
এদিকে কিছু মানুষ আছেন যারা হুদার বিপক্ষে; মনের মানুষের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য হুদার পরিবার, সমাজ আর দেশের এত সীমানা লঙ্ঘন করাটা অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। অনেকের মনে এই প্রশ্নও জেগেছে যে যদি পরিস্থিতি উল্টো হত তাহলে ইয়েমেনিদের প্রতিক্রিয়া কি হত।
.@hayaatq @BenGhalib I just want to ask? Would we be feeling the same way if it was a Yemeni girl that did the same with a Saudi?? Just a Q
— ameera (@ameeraymnia) November 22, 2013
আমার প্রশ্ন? যদি একজন ইয়েমেনি মেয়ে ঠিক এটাই কোন সৌদির সঙ্গে করত তাহলে কি আমদের প্রতিক্রিয়া একই হত? শুধু জানতে চাইছি
এর একটা জবাব ছিল:
@ameeraymnia if the situation was exactly same where marriage was denied based on nationality Id feel the same way @hayaatq
— محمد (@BenGhalib) November 22, 2013
যদি পরিস্থিতি ঠিক এমনই হত যেখানে শুধুমাত্র জাতীয়তার কারণে বিয়ে দিতে অস্বীকার করা হচ্ছে, তাহলে আমার প্রতিক্রিয়া ঠিক এমনই হত
আরেকটা জবাব ছিল:
@ameeraymnia I'd say the same thing if she were a Yemeni woman with a Saudi man. It's about humanity not nationality. @BenGhalib
— Hayaat – حيــاة (@hayaatq) November 22, 2013
আমি এই একই কথা বলতাম যদি উনি ইয়েমেনি রমণী হতেন আর সৌদি কোন ব্যক্তির সঙ্গে থাকতেন। এটা মানবিকতার প্রশ্ন, জাতীয়তার নয়।
আমরা কি এই ইয়েমেনি রোমিও আর সৌদি জুলিয়েটের প্রেম কাহিনীর একটা সুখী পরিণাম দেখতে পাবো? না এটা আরেকটা দুর্ভাগ্যজনক আর বিয়োগান্তক প্রণয় গাথা হয়ে দাঁড়াবে?