
ফিলিপাইনের মুল দর-কষাকষি কারী ইয়েব সানো। ফ্লিকার ব্যবহারকারী ৩৫০ অর্গ থেকে ছবি নেয়া হয়েছে। ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স (সিসি বিওয়াই-এনসি-এসএ ২.০) এর আওতায় প্রকাশিত।
পোল্যান্ডে জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনে (সিওপি১৯) ফিলিপাইনের আলোচক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইয়েব সানো। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সম্মেলনে আলোচকদের মধ্যে থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত সমাধান বের হবে, ততক্ষণ তিনি না খেয়ে থাকবেন। ‘দরিদ্র দেশগুলোর প্রতি জলবায়ুর অবিচার’ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ চান তিনি। এর সাথে সম্প্রতি ফিলিপাইনের সুপার টাইফুন হাইয়ানের যোগসূত্রও তুলে ধরেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণেই হাইয়ানের মতো সুপার টাইফুন আঘাত হানছে। উল্লেখ্য, হাইয়ানে ৪ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। গৃহহারা হয়েছেন ৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ।
সানো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ছড়িয়ে দিতে #ফাস্টফরদ্যক্লাইমেট হ্যাশট্যাগ ব্যবহার শুরু করেন:
DAY 1. #FastingForTheClimate
— Yeb Saño (@yebsano) November 11, 2013
প্রথম দিন। #ফাস্টফরদ্যক্লাইমেট
বলিভিয়ার পাবলো সলনের মতো আলোচকরা সানোকে সমর্থন দিতে টুইটারে এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন:
Only through action is posible to break the inaction of the #UNFCCC. All our support to your hunger strike @yebsano #ClimateJustice
— Pablo Solon (@pablosolon) November 11, 2013
#ইউএনএফসিসিসি-এর নীরবতা ভাঙ্গলেই কেবল এটি সম্ভব হতে পারে। আপনার অনশনের প্রতি আমাদের সবার সমর্থন রয়েছে।
নিজের অনশনের কথা বলতে গিয়ে সানোর মহাত্মা গান্ধীর উদ্বৃতি দিয়েছেন:
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.” ― Mahatma Gandhi #FastingForTheClimate
— Yeb Saño (@yebsano) November 13, 2013
সুখ হলো সেটাই, আপনি যা ভাবেন, যা বলেন এবং যা করেন, তা যখন একসাথে মিলিত হয়- মহাত্মা গান্ধী।
জলবায়ুর জন্য অনশন ইতোমধ্যে টু্ইটার হয়ে ব্লগোস্ফিয়ারে ছড়িয়ে পড়েছে।
নিউজিল্যান্ডের মানবাধিকার সংগঠনের আইনজীবী এবং অ্যাডপ নেগোশিয়েটর প্রজেক্টের কর্মী ডেভিড টং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তার দেশের সরকারের প্রতিক্রিয়া কেমন সে বিষয় নিয়ে ব্লগে লিখেছেন। সেখানে তিনি সানোর কথা উল্লেখ করেছেন:
আমি আমার সরকারের আচরণে লজ্জিত। গ্রিন পার্টির রাসেল নরম্যান জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সৃষ্ট টাইফুন হাইয়ানের সাথে নিউজিল্যান্ডের সম্পর্ক থাকার বললে, তারা খুব হেসেছেন। তারা খুব হেসেছেন। তাকে নিয়ে মশকরা করেছেন। তারা ‘লজ্জা’ বলে চিত্কার করেছেন। আমাকে আবার বলতে দিন: ইয়েব সানো যখন নিউজিল্যান্ড সংসদের উদ্ধৃতি দিয়েছিল, তখন মানুষজন হেসেছিল। সবচে’ ভয়াবহ টাইফুন গত সপ্তাহে আঘাত হেনেছে। এতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। ৪ লক্ষ ৭৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ফিলিপাইনের মূল আলোচক ইয়েব সানো একজন প্রকৃত মানুষ, যিনি আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চুক্তি সম্পাদনের জন্য অনশন করছেন। আর আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা হেসেছেন। এখানে, অসলোতে কেউ কিন্তু হাসছে না। ৩০ জনেরও বেশি মানুষ ইয়েবের সাথে অনশনে যোগ দিয়েছে।
ফিলিপাইনের উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কার্লে লাবেরিয়াও অ্যাডপ নেগোশিয়েটর প্রজেক্টে ব্লগিং করে থাকেন। তিনি তার সর্বশেষ ব্লগে নিজ শহরের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। তাছাড়া পোল্যান্ডে জলবায়ুর সংকট মোকাবেলায় বর্তমানে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার সাথে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে হতাশা ব্যক্ত করেছেন:
আমি চিন্তিত আমার মা, বাবা, ছোট্ট বোন, আমার শহর, ভিসায়াসের মানুষজন, বিশেষ করে টাকলোবান আর পানায় নিয়ে। কতটা দু:খ-কষ্ট-যন্ত্রণা ভোগ করলে বিশ্বনেতাদের বোধোদয় হবে, মানুষের টিকে থাকার লড়াই, সম্মান আর মানবিকতা উপলদ্ধি করতে পারবেন?
সম্মেলন চলাকালে কয়েকশ’ রাজনীতিবিদ এটা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা একটি আদর্শ চুক্তিতে পৌঁছাতে চেয়েছেন। তাদের দেশ জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে কীভাবে ভুমিকা রাখতে পারে সেটা নিয়েও বলেছেন। কিন্তু প্রত্যেকটি দেশের নিজস্ব স্বার্থ আছে। তাই চুক্তিতে পৌঁছাতে একটু বেশি সময় লাগছে।
পোল্যান্ডে জলবায়ু নিয়ে আলোচনার দুইদিন চলে গেছে। সানো এখনও অনশন করে যাচ্ছেন। সম্মেলনে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারগুলোকে চাপে রাখতে তিনি একটি অনলাইন প্রচারণা শুরু করেছেন।
Philippine climate negotiator @YebSano delivers his 600,000 strong #Avaaz petition: https://t.co/aAKXQopzB5 #COP19 pic.twitter.com/IQOfsxUVru — Avaaz (@Avaaz) November 19, 2013
ফিলিপাইনের জলবায়ু আলোচক ইয়েব সানো ৬ লাখ আভাজ পিটিশন পেশ করছেন।
সানো জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে নতুন ধরনের পদ্ধতি চান, যাতে গরীব দেশগুলো জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারে। জাতিসংঘের বর্তমান প্রক্রিয়ার অধীনে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বেশি দায়বদ্ধ বলে ধরে নেয়া হয়। তারা বছরের পর বছর কার্বন উদগীরণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ভুমিকা রাখে।
এতো আলোচনার ফলাফল হয়তো আগামী সম্মেলনে সাফল্য বয়ে আনতে সাহায্য করবে। আগামী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৪ সালে, পেরুর রাজধানী লিমায়।