আজ ১৬ নভেম্বর, ২০১৩। লক্ষ কোটি প্রান যেন আবেগে রূদ্ধ হয়ে গেছে। কারণ, ২৪ বছরের দীর্ঘ এক অসাধারণ কাব্যিক ক্যারিয়ার শেষে আজ ভারতীয় ক্রিকেট আইকন শচীন টেন্ডুলকার খেলাটি থেকে অবসর গ্রহণ করলেন। খেলাটিতে শচীনের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তাকে মর্যাদাপূর্ণ ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘ভারত রত্ন’ এ ভূষিত করেছেন।
ভারতে ব্যতিক্রমী পরিসেবা / মানবীয় প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত রত্ন (জুয়েল অব ইন্ডিয়া) পুরস্কার প্রদান করা হয়। জাতি, কর্ম অবস্থান বা লিঙ্গ নির্বিশেষে যেকোন ব্যক্তি এই পুরস্কার পেতে পারেন। প্রথম খেলোয়াড় এবং সর্ব কনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেব ৪০ বছর বয়সী শচীন টেন্ডুলকার এই সম্মানে ভূষিত হতে যাচ্ছেন।
সামাজিক মিডিয়া এই ব্যাপারে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এবং অভিনন্দন বার্তায় ছিল খুবই সক্রিয়।
শচীন কেন ভারত রত্নের যোগ্য, সে ব্যাপারে প্রশ্ন-উত্তর ভিত্তিক সামাজিক সাইট কোরা (Quora) তে এর উপর আলোচনার সময় বালা সান্থিল কুমার দৃঢ় মতামত প্রকাশ করেন। তাঁর মতে,
আক্ষরিক অর্থে ভারত রত্ন হচ্ছে ‘ভারতের রত্ন'।
শচীন কি একজন ‘ভারতের রত্ন'?
নিঃসন্দেহে উত্তরটি অপ্রতিরোধ্য ভাবেই হবে ‘হ্যাঁ'!
যদি কেউ এটিকে খণ্ডন করতে এগিয়ে আসেন আমি তাঁদের চ্যালেঞ্জ করছি।
কোরা'র সাথে যোগ সূত্র আছে এমন অন্য একটি আলোচনায় ক্রিকেট অনুরাগী এবং শচীন টেন্ডুলকারের একজন অন্ধভক্ত বৈভব শর্মা দেখিয়েছেন, কেন তিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার যোগ্য। তিনি মন্তব্য করেছেনঃ
ক্রিকেটে শচীন যে সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করেছেন সে সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই। এটি আপনি তার সহকর্মীবৃন্দ, তার বিরোধী, অবসরপ্রাপ্ত কিংবদন্তি ক্রিকেটার, আইসিসি এবং উইজডেন, যেটি ব্র্যাডম্যানের পর সর্ব কালের দ্বিতীয় সেরা হিসেবে তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাঁদের কাছ থেকে এটি নিশ্চিত হতে পারেন। প্রায় প্রতিটি ব্যাটিং সংকলন তালিকায় এবং আরো অনেক অবিরাম উৎসে তার পরিসংখ্যান থাকে সবার উপরে। […]
শচীনের ব্যাটিং ছিল ভারতীয় মানুষের যন্ত্রণা উপশমের নির্যাস। শচীন যখন ব্যাট করতে আসতেন তখন বর্ণ, ধর্ম, জাতি ও লিঙ্গের কোন ব্যাপার থাকত না। সবাই যে তাকে ভালবাসে আজ তার বিদায় বেলায় তা আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠল। আমি জানি, যারা ক্রিকেট খেলার খোঁজ খবর রাখেন তাঁরা আজ প্রত্যেকেই কেঁদেছেন। কেউ তাদের তা করতে বলে নি, কিন্তু তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তা করেছেন। এই মহান মানুষের প্রভাব ঠিক এমনটাই।
এই পুরস্কার ঘোষণার পর টুইটারও অভিনন্দন বার্তা এবং প্রতিক্রিয়ায় মুখর ছিল।
ভারতীয় উদ্যোক্তা কিরাম মজুমদার শ (@কিরানশ) টুইট করেছেন:
Sachin is a rare legend He is not just a national but a global phenomenon. That makes him extra precious and our Bharat Ratna
— Kiran Mazumdar Shaw (@kiranshaw) November 16, 2013
শচীন হচ্ছেন একজন বিরল কিংবদন্তি। শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয় বরং আন্তর্জাতিক ভাবেই তিনি একজন গ্রেট। এটিই তাকে অতিরিক্ত মূল্যবান এবং আমাদের ভারত রত্ন করে তুলেছে।
সংসদ সদস্য (লোকসভা) ও ভারতীয় ক্রিকেট (বিসিসিআই) কন্ট্রোল বোর্ড এর যুগ্ম সচিব অনুরাগ ঠাকুর (@অনুরাগঠাকুর) টুইট করেছেন:
Bharat Ratna @sachin_rt ! True Champion of the game, International Sports Icon, Global Indian, Inspiration for young & Humble Human Being.
— Anurag Thakur (@ianuragthakur) November 16, 2013
@শচীন_আরটি ভারত রত্ন ! তিনি হচ্ছেন খেলাটির সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন, আন্তর্জাতিক স্পোর্টস আইকন, বিশ্বব্যাপী পরিচিত ভারতীয়, যিনি তরুণ ও নম্র মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা।
অভিনেতা এবং সামাজ কর্মী রাহুল বোস (@রাহুলবোস1) টুইট করেছেন:
And so @sachin_rt becomes the first sportsperson to be conferred the Bharat Ratna. Incredible honour. Congratulations!
— Rahul Bose (@RahulBose1) November 16, 2013
এবং তাই @শচীন_আরটি হচ্ছেন প্রথম খেলোয়াড় যিনি ভারত রত্ন পেলেন। অবিশ্বাস্য সম্মান। অভিনন্দন!
বারাণসী রামপ্রসাদ (@স্মার্টট্রেনারস) নামের একজন ব্যবস্থাপনা পরামর্শক টুইট করেছেন:
Bharat Ratna for Sachin. Another record set by the Master Blaster. Youngest & the first sports person to get the Ratna Award. We Salute you.
— Varanasi Ramprasad (@smarttrainers) November 16, 2013
শচীনের জন্য ভারত রত্ন। মাস্টার ব্লাস্টার আরেকটি রেকর্ড গড়লেন। কনিষ্ঠতম ও প্রথম ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে রত্নের পুরস্কারটি তিনি পেতে যাচ্ছেন। আপনাকে স্যালুট।
ভ্যানেট (@ভ্যাবো১৮) নামের একজন ক্রিকেট ভক্ত খুবই উত্তেজিত ছিলেন। তিনি টুইট করেছেন:
The moment I heard the news Sachin was receiving Bharat Ratna, my face just glowed with happiness! Finally, Indian Gov. gives it to him!
— Vaneet (@Vabo18) November 16, 2013
যে মুহূর্তে আমি শুনলাম যে, শচীন ভারত রত্ন পেয়েছেন, আমার খুশি যেন শেষ হচ্ছিল না। অবশেষে, ভারত সরকার তাকে এটা দিল!
পুরো জাতি শচীনকে অভিনন্দন বার্তায় সিক্ত করতে থাকলেও, কিছু ভিন্নমতও পরিলক্ষিত হয়েছে। তাঁরা মনে করেন, এই পুরস্কারের জন্য আরও সমান যোগ্য প্রার্থী ছিল অথবা পুরস্কারটি অক্রীড়াবিদদের দেওয়া উচিত, যারা বয়স্ক এবং বৃহত্তর জাতীয় কারণে জীবনকাল অতিবাহিত করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, স্বাধীন সাংবাদিক শিভাম ভিজ (@দিল্লিদূরআস্ট) মনে করেন, এটি সরকারের লোকরঞ্জনবাদের একটি রাজনীতি। তিনি টুইট করেছেনঃ
Bharat Ratna for Sachin Tendulkar but not for Dhyan Chand or Anand Vishwanathan. Populism.
— Shivam Vij (@DilliDurAst) November 16, 2013
শচীন টেন্ডুলকারের জন্য ভারত রত্ন, কিন্তু ধ্যান চাঁদ বা আনন্দ বিশ্বনাথের জন্য নয়। লোকরঞ্জনবাদী রাজনীতি।
যাইহোক, এই দিনটিতে এই সব ভিন্নমতের লোকেরা ছিলেন সংখ্যালঘু, যারা কোটি কোটি সমর্থকদের মধ্যে যেন ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো।