জাকার্তার গভর্নর জোকো উইদোদো (জকোউই) প্রতিজ্ঞা করেছেন, আগামী ২০১৪ সাল থেকে জাকার্তার পথে ঘাটে আর “টোপেং মনিয়েট” (মুখোশ পরা বানরের) খেলা হবে না। প্রচারাভিযানটির নাম দেয়া হয়েছে “জাকার্তা বেবাস টোপেং মনিয়েট ২০১৪” (মুখোশ পরা বানরের খেলা হতে জাকার্তাকে মুক্ত কর)। এই প্রচারাভিযানের মূল লক্ষ হচ্ছে প্রাণীদের কল্যাণ সুরক্ষিত রাখা।
বানরগুলোকে রাজধানীর রাগুনান চিড়িয়াখানায় এক হেক্টরের একটি মাঠে স্থানান্তরিত করা হবে। সরকার বানরের প্রশিক্ষকদের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেয়ার এবং জীবিকা অর্জনের বিকল্প পথ অবলম্বনের সুযোগ দিবে। সরকারের এই নতুন নিয়মের কারণে শুধুমাত্র পূর্ব জাকার্তায় বসবাসকারী প্রায় ৭০০ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জাকার্তায় গৃহীত এই নতুন পদক্ষেপের সমর্থনকারীদের মধ্যে একটি হচ্ছে জাকার্তা অ্যানিমাল এইড নেটওয়ার্ক। এই গ্রুপটি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছে, এই টোপেং মনিয়েট প্রদর্শনীগুলোতে কীভাবে প্রাণিদেরকে শোষণ করা হয়ঃ
এটি নিশ্চিতভাবেই একটি নিষ্ঠুরতার চর্চা। এসব খেলার প্রদর্শনীতে জাকার্তার জনবহুল এবং ব্যস্ততম সড়কগুলোতে বাচ্চা বয়সের বানরগুলোকে বিভিন্ন খেলা (নাচা, বাইসাইকেল চালানো) দেখাতে বাধ্য করা হয়।
প্রতি বছর লম্বা লেজ বিশিষ্ট কয়েক হাজার বানরের প্রজনন ঘটানো হয় এবং বন জঙ্গল থেকে তাদেরকে ধরা হয় জাকার্তায় বিক্রি করার জন্য। সেখানে তাঁরা শোষণ ও নিষ্ঠুরতা পূর্ণ জীবনের মুখোমুখি হয়।
বানরগুলোকে রাস্তায় এবং কখনো কখনো মালিকের বাড়ির সামনে ছোট শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। তাঁরা বাচ্চা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হবার সময়টিতে প্রায় সবসময়ই শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় থাকে বলে চামড়ায় ঢুকে যায়। এতে করে তাঁরা প্রায়ই ভয়াবহ সংক্রামক রোগ এবং ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত হয়। বানরগুলো অত্যন্ত সামাজিক এবং তাঁদের সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার প্রয়োজন হয়। তাঁদের মাধ্যমে খুব সহজেই নানারকম অসুখ বিসুখ ছড়ায় বলে বানরগুলো শহরাঞ্চলে সম্ভাব্য বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যাও তৈরি করে থাকে।
বেশকিছু ইউটিউব ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, লোকজনকে আনন্দ দিতে এবং ভিক্ষাবৃত্তির জন্য রাস্তাঘাটে কীভাবে এসব টোপেং মনিয়েট প্রদর্শনীগুলোর আয়োজন করা হয়ঃ
৩:০০ মার্ক নামক ভিডিওটিতে প্রকৃতভাবেই প্রকাশিত হয়েছে, প্রশিক্ষণের সময়ে বানরগুলোর সাথে কতোটা অমানবিক আচরণ করা হয়ঃ
টোপেং মনিয়েট নিষিদ্ধ করতে সরকার যে প্রচারাভিযানটির আয়োজন করেছে, সেটিকে অনেক টুইটার ব্যবহারকারীরাই অভিনন্দন জানিয়েছেঃ
Jakarta governor Jokowi to buskers whose monkeys are seized by city: “Poor monkeys. They are even thinner than me.” http://t.co/9jregJ9Crx
— Yenni Kwok (@yennikwok) October 24, 2013
যাদের বানরগুলোকে শহরে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, সেসব ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে জাকার্তা গভর্নর জোকউই বলেছেনঃ “হতভাগ্য বানরগুলো। সেগুলো আমার চেয়েও দূর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী”।
damn i can't stand watching how those people train those monkeys for topeng monyet 🙁
— JUNGAH (@u_na_mean) November 3, 2013
নিন্দা জানাচ্ছি, আমি কখনো দাঁড়িয়ে দেখার সাহস পাইনি, কীভাবে লোকজনেরা টোপেং মনোয়েটের জন্য এই বানরগুলোকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেঃ
I'll gonna miss the topeng monyet. It's an adorable entertainment for me from my childhood. Good Bye Topeng Monyet… :”)
— rizqi adji pramudia (@rpramudiaa) October 31, 2013
টোপেং মনিয়েটের জন্য আমি খুব দুঃখবোধ করবো। ছোটবেলা থেকেই আমি এটি দেখে বেশ আনন্দ পাই। টোপেং মনিয়েটকে বিদায়ঃ…:”)
quiet impressed with the new policy of jokowi to save monyet2 dari topeng monyet.
— veny veronika (@venyveronika) October 29, 2013
মনিয়েট২ ডারি টোপেং মনিয়েট রক্ষার্থে জকোউই এর নেয়া নতুন নীতিটি আমার মনের ওপর বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে।
Animals don't have anyone to protect them. If we don't stand up, the people who are harming animals will never get stopped #TopengMonyet
— A|C|K|Z|O (@ackzo) October 29, 2013
প্রাণীদের রক্ষা করার যেন কেউ নেই। আমরা যদি উঠে না দাঁড়াই তবে যারা প্রাণীদের ক্ষতি করে থাকে তাঁরা কখনো থামবে না #টোপেংমনিয়েট
As i said before, i hope there's special place in hell for people who abussing animal #topengmonyet
— edi subagiyo (@edi_subagiyo) November 3, 2013
আমি আগেও যেমনটি বলেছি, আমি আশা করি, যারা প্রাণীদের ওপর অত্যাচার করে তাঁদের জন্য নরকে বিশেষ জায়গার ব্যবস্থা রয়েছে। #টোপেংমনোয়েট
কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন যাযাবর গোষ্ঠী বানরদের রক্ষার আগে সর্বপ্রথম শিশু শ্রমিকদের রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি জোর দিয়ে আহ্বান জানিয়েছেনঃ
আমার যুক্তিটি খুবই সাদাসিধেঃ বানরের আগে শিশুরা।
বানরের খেলা আসলে কোন প্রদর্শনী নয়। এটি ভিক্ষাবৃত্তির একটি কৌশল মাত্র। লম্বা লেজের মিষ্টি বন্ধুটি অনেক বঞ্চনার শিকার হতে হয়। আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, বর্তমান এই পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া উচিৎ।
বানরের মুক্তির মাধ্যমে বঞ্চিত শিশুদের জীবন আরো বেশী দুর্বিসহ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নিয়ে আমি সবচেয়ে বেশী উদ্বিগ্ন। যারা ভিক্ষাবৃত্তির জন্য বানরকে ব্যবহার করতো তাঁরা যে বিকল্প কোন পথ খুঁজে বের করবে না, তাই বাকে বলতে পারে ? আর আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, এসব ক্ষেত্রে শিশুদের ব্যবহারের উপযোগীতা কতো বেশী।
আমার মতে গভর্নরের উদ্বিগ্নতার একমাত্র কারন, আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি।