ধারণা করা হয়েছিল সাধারণ ক্ষমা বিল (অ্যামনেস্টি বিল) থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক পুনর্মিত্রতাকে দৃঢ় করবে। কিন্তু বিরোধীরা মনে করছেন, এটি রাজনৈতিক সংঘাতকে আরো উস্কে দিবে।
২০০৬ সাল থেকে যেইসব কর্মীরা যারা সভা-সমাবেশ এবং মিছিলে যোগ দেয়ার মতো রাজনৈতিক অপরাধ করেছিলেন, তাদের নি:শর্তে সাধারণ ক্ষমা করে দিতেই এই বিলের প্রস্তাব করা হয়েছিল। যদিও নেতারা এই ক্ষমার সুযোগ পাবেন না।
তবে সংশোধিত বিলে অপরাধের মাত্রা পরিমাপ করার পরিধি বড়ো করার সুযোগ রয়েছে। সমালোচকেরা সতর্ক করে দিয়েছেন, রাজনৈতিক নেতা, সামরিক কর্মকর্তা, দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা এই বিলের সুযোগ নিয়ে ক্ষমা পেয়ে যেতে পারেন। এদিকে বিরোধীরা সুনির্দিষ্ট করেই উল্লেখ করেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা'র যাবতীয় কুকর্মকে ‘হোয়াইটওয়াশ‘ করতেই এই বিল পাস করানো হয়েছে। উল্লেখ, থাকসিন দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে বর্তমানে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। স্থানীয় আদালত তার বিরুদ্ধে লুটপাটের প্রমাণ পেয়েছে।
২০০৬ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে থাকসিন ক্ষমতাচ্যুত হন। তার ছোটবোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা বর্তমানে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। থাকসিনের সমালোচকেরা বলছেন, এই বিল সাবেক নেতাকে দেশে ফেরার সুযোগ করে দিবে এবং সরকার তার যেসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে সেগুলো উদ্ধার করতে পারবেন।
মজার ব্যাপার হলো, ‘রেড শার্ট’ নামে পরিচিত সরকার দলীয় জোটের একটি অংশ এই সাধারণ ক্ষমা বিলের বিরোধীতা করছে। এটা তাদের কাছে ‘প্রতারণা'র মতোই মনে হচ্ছে। কেন না, এই বিলের আওতায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিজিৎ ভেজ্জাজিভাকেও (বর্তমানে ডেমোক্র্যাট বিরোধী দলের নেতা) ক্ষমা পাবার সুযোগ দিবে। অভিজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ২০১০ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনকে বানচাল করতে দমননীতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১০ সালের সরকার বিরোধী ওই আন্দোলনে ১০০ জনের মতো রেড শার্ট কর্মী নিহত হয়েছিলেন।
অন্যদিকে বিরোধী দল এবং সরকারি দলের সমর্থকরা এই বিলের সমালোচনা করেছেন।
ব্যাংকক পণ্ডিত বলেছেন, এই বিলে এমন কিছু বিধান রয়েছে যা ক্ষমার পরিধিকে আরো বড়ো করবে:
… এর পরিধি অনেক বেশি। বিভিন্ন সময়ের অপরাধ এর অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। এতে অনেক কিছুই অস্পষ্ট রয়েছে। কোন ধরনের অপরাধের ওপর এই আইন প্রযোজ্য, কোন ধরনের অপরাধের ওপর প্রযোজ্য নয়; কারা এই আইনের অন্তর্ভুক্ত হবেন আর কারা হবেন না, তারা পরিষ্কারভাবে করা উচিত ছিল।
অনুথী ডেজথিভাপর্ন বলেছেন, এই বিলের রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকবে অনেক বেশি:
সবার জন্য সাধারণ ক্ষমা বিল যদি পাস হয়, তাহলে যে পরিণতি হবে, সেগুলোও বিবেচনা করতে হবে। ভবিষ্যতে কোনো দিন যদি কেউ একজন রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা যান, তাহলে আমাদের সন্তানেরা কী বলবে? তারা কী আবার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকে সামিল করবে? আমাদের সন্তানেরা যখন দেখবে আমরা বাবা-মা'রা দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাদের জন্য কী রেখে গেছে, কিন্তু দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে, আমরা কি সেরকম কিছু করেছি?
থাইল্যান্ডের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নেশন ব্যাখ্যা দিয়েছে, কেন এই বিল বিভেদ সৃষ্টি করবে।
থাইল্যান্ডে অনেক অনেক সমস্যা রয়েছে। সেখানে আর একটি রাজনৈতিক ইস্যু টেনে এনে বোঝা বাড়ানোর কোনো মানেই হয় না। এটা জাতিকে বিভক্ত করবে।
ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট “পুনর্মিত্রতা”র পরিকল্পনা কেন দেশব্যাপী অশ্রুসজল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে? উত্তর খুব সোজা: সরকারের আইন পরিষদ থাইল্যান্ডের মূল সমস্যার সমাধান খুঁজে দেখতে চায় না। বরং তারা বিভেদটাকে আরো শক্তিশালী করছে।
বিলের বিতর্কিত দিক নিয়ে টুইটার ব্যবহারকারীরা ক্ষুদ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
Amnesty Bill leads to reconciliation? Far from it – even Govt supporters have different opinions on blanket amnesty.
— veena T. (@veen_NT) October 27, 2013
সাধারণ ক্ষমা বিল কি পুনর্মিত্রতা আনবে? পুনর্মিত্রতা সুদূরপরাহত- এমনকি সরকার সমর্থকদের মধ্যে সাধারণ ক্ষমা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
House has passed 2nd reading of altered amnesty bill, which could bring Thaksin home and allow him to get money back.
— tulsathit (@tulsathit) October 31, 2013
সংশোধিত সাধারণ ক্ষমা বিল সংসদে পাস হলো। এটি থাকসিনকে দেশে ফিরিয়ে আনবে এবং জব্দকৃত টাকা ফেরত পেতে সাহায্য করবে।
By passing a whitewash blanket #amnesty bill, Pheu Thai Party turns #Thailand into pariah state that doesn't respect justice & human rights.
— Sunai (@sunaibkk) November 1, 2013
সাধারণ ক্ষমা বিল পাস হওয়ায় থাইল্যান্ডের পারিয়াহ রাজ্যের ফিউ থাই পার্টি রাজনীতিতে ফিরবে। এরা আইন এবং মানবাধিকারের প্রতি মোটেও শ্রদ্ধাশীল নয়।
Letter from Ministry of Interior ordering provinces to put up signs supporting Amnesty: pic.twitter.com/QOnjolL6g3" via @LiShuhui & @ThePongk
— teamkorn (@teamkorn) November 1, 2013
সাধারণ ক্ষমা বিলকে সমর্থন দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদেশগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছেন: pic.twitter.com/QOnjolL6g3″ via @LiShuhui & @ThePongk
গত ১ নভেম্বরে ১৯ ঘণ্টা বিতর্ক শেষে সংসদ বিল অনুমোদন করে। ধারণা অনুযায়ী, বিরোধী দল এ সময়ে সংসদ অধিবেশন বর্জন করে। আগামী সপ্তাহে বিলটি সিনেটে উঠবে।
বিলের প্রতিবাদে তাত্ক্ষণিকভাবে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। এতে ১০ হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। সবচে’ মজার ব্যাপার হলো, ব্যাংককের স্থানীয় সরকার প্রতিবাদকারীদের ভ্রাম্যমান টয়লেট এবং বাড়তি আলোক সুবিধা দিয়ে সহযোগিতা করেছে।