অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের সরকার ওয়েব ভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার এবং স্কাইপি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে তারা আগামী তিন মাসের জন্য এই সেবাগুলো বন্ধ রাখবে বলে জানিয়েছে। উল্লেখ্য, সিন্ধু প্রদেশের মধ্যে পাকিস্তানের সবচে’ বড় শহর করাচিও রয়েছে।
ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট'রা সরকারের এই পরিকল্পনার প্রতিবাদে টুইটারে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে এটা নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা শুরু হয়েছে। এবং সে আলোচনা এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, জনপ্রিয় এই যোগাযোগ প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করাটা মোটেও ভালো হবে না।
তবে এই নিষেধাজ্ঞা কোথায় কোথায় কার্যকর হবে তা নিয়ে এখনো কেউ-ই নিশ্চিত নয়। যদিও কেউ কেউ এটা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন আছেন। কারণ সম্প্রতি ভাইবার এবং হোয়াটসঅ্যাপ-এ কথা বলায় সময় ব্যবহারকারীরা কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। যা থেকে তারা ধারণা করছেন, সরকার বোধহয় নিষিদ্ধ করার পথে এগুচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় সরকারের বিবৃতির মধ্যে বেশ ফারাক রয়েছে। আর এটাই পাকিস্তানের অনলাইন কমিউনিটিকে আশাবাদী করে তুলেছে যে, সরকার হয়তো নিষেধাজ্ঞা জারি করবে না।
বাইটস ফর অল নামের মানবাধিকার সংগঠনটি কাজ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে। তারা অক্টোবরের ১০ তারিখে সরকারের পরিকল্পনার সমালোচনা করে একটি ব্লগ পোস্ট করে। সেখানে তারা লিখেছে:
প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞা অহেতুক এবং বেশ বড় আকারেই নেয়া হচ্ছে। এটা সিন্ধু প্রদেশের সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করবে। তাদের ওয়েব ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও দূর্বল করবে। স্কাইপি, ভাইবার, ট্যাঙ্গো এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং এবং ভিওআইপি সেবা পাকিস্তানের স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এবং এগুলো তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো সহজ করে দিচ্ছে। এখন এগুলো বন্ধের হুমকির মধ্যে রয়েছে। ফিল্টারিং না ব্লকিং ঠিক কীভাবে নিষিদ্ধ করা হবে তার নির্দেশনা এখনো দেয়নি সিন্ধু প্রদেশের কর্মকর্তারা।
পাকিস্তানে ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ইউটিউব-কে এক বছরের বেশি সময় ব্লক করে রাখা হয়েছিল।
মুতাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) দলের সংসদ সদস্য সৈয়দ আলী রাজা আবিদি (@abidifactor) নিয়মিতভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকেন। তিনি গোটা পরিস্থিতি নিয়েই লিখেছেন:
Then it was YouTube, now it will be rest of the Social Media. This won't work unless you completely shut down the internet all over Pakistan
— Syed Ali Raza Abidi (@abidifactor) October 3, 2013
তখন শুধু ইউটিউবটাই বন্ধ করা হয়েছিল। আর এখন, গোটা সোশ্যাল মিডিয়াটাই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তবে পাকিস্তানের পুরো ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ না করলে এটা কাজ করবে না!
সামা টিভির সাবেক সাংবাদিক নিদা এফ সামীর (@Nidafsameer) তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের মুখপাত্র এহসানুল্লাহ এহসান এবং শহীদুল্লাহ শহীদকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন:
They can allow EhsanUllahEhsans n ShahidullahShahids 2 communicate media offices n journos via phones. won't allow poor ppl to use free aps.
— Nida F (@nidaFsameer) October 3, 2013
তারা এহসানুল্লাহ এহসান এবং শহীদুল্লাহ শহীদকে ফোনের মাধ্যমে মিডিয়া অফিস এবং সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যের যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন না!
এদিকে বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের কিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান হাস্যরস করতে ছাড়েনি।
পাকিস্তানের নকিয়ার অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট (@Nokiapakistan) থেকে তাদের ম্যাসেজিং সার্ভিসের সুযোগ নেয়ার আহবান জানিয়েছে:
Who cares if #Viber, #WhatsApp and #Skype will be banned? LINE, WeChat and Nimbuzz on #NokiaStore are there for all your chatting needs 😀
— Nokia Pakistan (@NokiaPakistan) October 3, 2013
#ভাইবার, #হোয়াটসঅ্যাপ এবং #স্কাইপি নিষিদ্ধ হলে কার কী এসে যায়? আপনার চ্যাটিংয়ের প্রয়োজনের নকিয়া স্টোরে আছে লাইন, উইচ্যাট এবং নিমবাজ সেবা! 😀
দুবাইয়ের ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি পারমাল (@anthonypermal) ঠাট্টা করে টুইট করেছেন:
Dear Sindh Gov, Pls ban taxes too. Apparently what we're paying can't be traced either.
— Anthony Permal (@anthonypermal) October 3, 2013
প্রিয় সিন্ধু প্রদেশ সরকার, দয়া করে আপনারা কর প্রদানের বিষয়টিও নিষিদ্ধ করুন। কেন না, আমরা যে কর প্রদান করি, তা ট্রেস করতে পারি না!
নিষিদ্ধ করার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে পাকিস্তানের ব্লগগুলোতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার প্রতিবাদ জানায়।
পাকিস্তানের যেসব নাগরিক দেশের বাইরে থাকেন, এই নিষেধাজ্ঞা তাদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে তা জানিয়েছে স্থানীয় অ্যাডভোকেসি গ্রুপ মাদিহা লাতিফ উইথ বলোভি:
ব্যবসা বাণিজ্যের বাইরে পাকিস্তানের যেসব পরিবারের সদস্য সারা বিশ্বের ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন তাদের ওপরেও ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলবে। যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না পারায়, তাদের স্বশরীরে গিয়ে দেখা করতে হবে। এতে করে গ্যাসের দাম বাড়বে। পরিবহন খরচও বাড়বে। কর্মক্ষেত্রে/স্কুলে যথেষ্ট সময়ও দিতে পারবে না। প্রতিদিনের ফোন বিল বাড়বে। মুহূর্তের যোগাযোগ খরচও বাড়বে। খরচ কমাতে এবং যোগাযোগ বজায় রাখতেই আমরা স্কাইপি, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করি। এগুলো থাকার কারণেই আমরা সবার সাথে ভালোভাবে যোগাযোগ রাখতে পারি। খুব সাধারণ একটা বিষয় এটা। আমরা সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে চাই। সেজন্য যোগাযোগ প্রযুক্তির এই সেবাগুলো আমরা চাই। কিন্তু সরকার বর্তমানে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমরা কীভাবে কথা বলবো? সরকারের পরবর্তী নিয়ন্ত্রণের বিষয় কী হবে? আমাদের কে কথা বলতে পারবে আর কে পারবে না? না কি সেই আগের যুক্তিতে ফিরে আসবে যে, সরকার সত্যিকারভাবেই জনগণের ‘আয়া'র ভুমিকায় নেমেছে?
প্রস্তাবিত নিষিদ্ধকরণের যুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করেছে স্থানীয় ডিজিটাল অ্যাডভোকেসি কনসালট্যান্ট মাইন্ডম্যাপ কমিউনিকেশনের আমেনা কামাল:
নিষিদ্ধ করা হবে এই কারণে যে, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ভাইবারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কে অনেক খারাপ লোক ঘুরে বেড়ায় যারা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ? আমি মনে করি কিছু খারাপ লোক থাকতেই পারে। তবে নিষিদ্ধ করলেও খারাপ লোকদের এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা থেকে থামানো যাবে না। তারা প্রক্সি'র মাধ্যমে এটা ব্যবহার করবে। তাদেরকে আমার চেয়ে কম বুদ্ধিমান ভাবার কোনো কারণ নেই। তাছাড়া শুধু সিন্ধু প্রদেশে নিষিদ্ধ করলে সবার মনে এই ধারণা জন্ম নিবে যে খারাপ লোকেরা শুধু এই প্রদেশেই রয়েছে।