ভারতের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী মান্না দে মারা গেছেন। ২৪ অক্টোবর ২০১৩-এ বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে [1] তিনি মারা যান। তার আসল নাম প্রবোধ চন্দ্র দে [2]। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। ১৯৪২ – ২০১৩ পর্যন্ত দীর্ঘ সাত দশকের সংগীত জীবনে তিনি ৪ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন। তবে সিনেমাতে গাওয়া গানগুলোই তাকে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছিল। ১০০টির বেশি সিনেমায় অভিনেতারা তার গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন।
তিনি মূলত হিন্দি এবং বাংলাতে গান গেয়েছেন। তবে এর বাইরে ভারতীয় বিভিন্ন ভাষায়ও গান গেয়েছেন। তিনি ভারত এবং বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন।
তিনি মারা যাওয়ার পর নেটিজেনরা তাকে এবং তার সংগীত নিয়ে স্মৃতিচারণায় ডুবে যান।
ব্লগার এবং শিক্ষক ভেঙ্কাতারামানান রামাসেতু [3] তাকে স্মরণ করে লিখেছেন:
তিনি কিংবদন্তি, তার সংগীত প্রতিভার কোনো তুলনা হয় না! ৪০ বছর ধরে গান গেয়ে বলিউডে রাজত্ব করে গেলেন! এখন আমার মনে হচ্ছে, তিনি তার প্রতিভার যোগ্য সম্মান পাননি!
আকাশ উপাধ্যায় প্রবাদপ্রতিম এই সংগীতশিল্পীর জীবনের সবচে’ কম পরিচিত ১০টি বিষয় [4] তুলে ধরেছেন।
রেডিও'র উপস্থাপক, লেখক এবং ব্লগার রীমা মুদগিল [5] লিখেছেন:
অজস্র গান তার। একটা গানেরই কত সংস্করণ। আর তার কণ্ঠ সত্যি অনন্য।/blockquote>
ইন্ডিয়া টুডে (@IndiaToday [6]) মান্না দে'র সংগীত জীবনকে সংখ্যাচিত্রে তুলে ধরেছে:
RIP, Manna Dey! A musical career in numbers pic.twitter.com/bJfqv8I0Hb [7]
— India Today (@IndiaToday) October 24, 2013 [8]
বিদায় মান্না দে! সংখ্যাচিত্রে তার সংগীত জীবন।
লেখক, ব্লগার মাধুলিকা লিড্ডল [9] মান্না দে'র প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন [10]:
এই কারণে আমি মান্না দে-কে পছন্দ করি, এবং তার গুণমুগ্ধ ভক্ত হয়ে আছি: তার গানের বৈচিত্র্যময়তা, তার গানের বিপুল ভাণ্ডার, অনুপ্রাণিত করার মতো তার গানের আবেগ অথবা করুণ রস অথবা আনন্দোচ্ছলতা, যা মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসায় প্রোথিত, যা কখনোই হেলায় ফেলার নয় । তিনি সেই ব্যক্তি যার গানের নামের একটি চেইন রেস্টুরেন্টের (ভজহরি মান্না) নাম রাখা হয়েছে।
একটি যুগ শেষ হয়ে গেল। মান্না দে ছিলেন স্বর্ণ যুগের প্লেব্যাক সংগীতশিল্পীদের মধ্যে শেষ পুরুষ সংগীতশিল্পী। তিনি চলে গেলেন। তার কণ্ঠ, সুর বেঁচে থাকবে এটাই আমাদের সান্ত্বনা।
সাংবাদিক অভিনয় দে [12] মান্না দে'র সেই বিখ্যাত গানের কথা স্মরণ করেছেন, যা বাঙালি শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। গানটিতে উঠে এসেছিল সাত বন্ধুর গল্প যারা কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউজে [13] নিয়মিত আড্ডা দিতেন। কফি হাউজ হলো কলকাতার লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, পণ্ডিত ব্যক্তিদের ঐতিহাসিক আড্ডাখানা:
গানটি লিখেছিলেন গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার। সে সময়ে তারা সাত বন্ধু মিলে কফি হাউজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতেন। সঙ্গে থাকতো চা আর সস্তার চারমিনার সিগারেট। আড্ডায় তারা স্বপ্ন বুনতেন একদিন অনেক বড়ো হবেন।
কিন্তু জীবন তাদের তা হতে দেয়নি। ডিসুজা মারা গেছে। অমল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। প্রেমিকের প্রতারণার পাগল হয়ে রমা এখন পাগলা গারদে। সুজাতা এক ধনী লোককে বিয়ে করে সুখে সংসার করছে। নিখিলেশ এখন প্যারিসে, নির্বাসনে। মঈদুল ঢাকায় ফিরে গেছে। এই সাত বন্ধুর কফি হাউজের উচ্ছল আড্ডা মুখর দিনের ছবি গানটিতে উঠে এসেছে।
যখনই এই গানটা শুনতে শুনতে গলা মিলিয়েছি, আমার গলা ধরে এসেছে। তার গানে-কণ্ঠে এমন কিছু ছিল যা ডিসুজা'র মৃত্যুর কষ্টটাও আপনি অনুভব করতে পারবেন। ডিসুজা ছিল গ্র্যান্ড হোটেলের গিটারিস্ট। অমলের কবি হতে না পারার কষ্টটাও আপনি অনুভব করতে পারবেন। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন বুকে পুষে রেখে ব্যর্থ প্রেমে বদ্ধ উন্মাদ হওয়া রমা'র কষ্টও আপনাকে নস্টালজিক করে দিবে।
তিনি বাংলাদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। ব্লগার প্রফেসর হিজিবিজি [14] সচলায়তনে লিখেছেন:
আমার কৈশোর আর তারুণ্যের উদ্দাম দিনগুলিতে অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী ছিল মান্না দের গান। সঙ্গী এখনো। কৈশোরের সেই দিনগুলি ছিল অসাধারণ – সারাদিন গান শুনতাম। দিন যেত, আর আমি একের পর এক আবিষ্কার করতাম মান্না দের গাওয়া এক একটি গান। গান তো নয় যেন সুরের জাল দিয়ে গেঁথে তোলা শব্দের মালা, যা অবলীলায় প্রকাশ করে আমার মনের একান্ত অনুভূতিগুলো! বাসার পুরানো ক্যাসেট প্লেয়ারে আমি শুনি মান্না দের গান। একবার শুনি, বারবার শুনি, কিন্তু গান পুরানো হয়না।
বাংলাদেশী ব্লগার জুবেরিনো (@zuberino) টুইট করেছেন:
The best tribute to #MannaDey [15] is to listen to his immortal music http://t.co/vWv9zzI5lT [16]
— zuberino (@zuberino) October 25, 2013 [17]
মান্না দে'র চিরস্মরণীয় গানগুলো শোনার মাধ্যমেই তাকে সবচে’ ভালোভাবে শ্রদ্ধা জানানো যায়।
ভারতীয় লেখক ও ব্লগার হরিণী কালামুর (@calamur [18]) উল্লেখ করেছেন:
Fans pay tribute to Manna Dey on Twitter; crowdsourced playlist of his songs trending on the hashtag #MannaDey [15] http://t.co/f3TgtvEBEc [19]
— Harini Calamur (@calamur) October 24, 2013 [20]
ভক্তরা টুইটারে প্রিয় শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। সবাই তার গানগুলো শেয়ার করছে। টুইটারে #মান্না দে হ্যাশট্যাগ (#) ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
লেখক ও ব্লগার অনুরাধা ওয়ারিয়র [21] মান্না দে'র প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনস্বরূপ তার বহুল সমাদৃত গানগুলোর একটি তালিকা [22] সবার সাথে শেয়ার করেছেন।
বলিউড অভিনেতা ও উপস্থাপক অমিতাভ বচ্চন (@SrBachchan [23]) তাকে স্মরণ করে লিখেছেন:T 1200 -Busy day .. not without remembering Manna Dey with minute silence on set..voice gone..winds of sonorous lilting words left behind !
— Amitabh Bachchan (@SrBachchan) October 24, 2013 [24]
টি ১২০০ – ব্যস্ত একটা দিন… সেটে এক মিনিটের নিরবতার মধ্যে দিয়ে মান্না দে-কে স্মরণ করা হচ্ছে… সেই কণ্ঠ চলে গেছে… (কিন্তু) বাতাসের মধুর ধ্বনিব্যঞ্জনাতে তার গান বেজে যাচ্ছে!