ভ্রমণ করার স্বাধীনতা এবং সীমাবদ্ধতার দিক দিয়ে বিবেচনা করলে লেবাননের পাসপোর্ট বিশ্বের সেরা দশটি বাজে পাসপোর্টের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু এই বিষয়টি বিস্ময়কর নয় যে, গত সপ্তাহে হেনলি এবং পার্টনার-এর ভিসা সীমাবদ্ধতা সূচক প্রকাশ করেছে, তবে সিডার বৃক্ষের ভূমির এই বিপর্যয়কর দশা সকল স্তরে এক তিক্ত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অন্তত ব্লগার @আবিরঘাত্তাস লেবাননের কুখ্যাত এবং নাটকীয় বর্ণবাদ সমস্যার প্রেক্ষাপটে পরিহাস করার সুযোগ লুফে নিয়েছে:
এই বিষয়টি মেনে নেওয়া ম্যাডামের জন্য খুব কঠিন যে নেপাল, সুদান, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার জন্য তৈরী “সাহায্যের” তালিকার মধ্যে তিনি নিজেও বিদ্যমান।
তবে রসিকতার এখানে ইতি ঘটেনি, বিশেষ করে যখন লেবাননের নিরাপত্তা প্রধান দ্রুত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে যেখানে তিনি বলেন “লেবাননের পাসপোর্ট বিশ্বের মধ্যে সেরা”। সরকারি কর্মকর্তারা এর সাথে যোগ করেন যে লেবানন শীঘ্রই “নতুন প্রযুক্তির” বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট চালু হবে।
তবে এই ঘোষণা কাউকে মুগ্ধ করেনি:
@mhijazi lol
— Michel Hweis (@MichelHweis) October 4, 2013
@এমহিজাজি (মোহাম্মদ হিজাজি টুইট করেছে) নিরাপত্তা প্রধান যথারীতি পাসপোর্ট তালিকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
মাইকেল হেওয়েজ-এর জবাবে বলছে, লোল [দারুন]
রেভুল্যুশন ৯৬১ হিসেব করে দেখেছেন যে লেবাননের পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়াটি বিশ্বের অন্যতম এক ব্যায়বহুল প্রক্রিয়া:
মাত্র ৫,২৯৬,৭৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা, যা কিনা লেবাননের পাসপোর্টধারী এক নাগরিক বিনা ভিসায় ভ্রমণ করতে পারে, উক্ত বিখ্যাত নীল পাসপোর্ট, যা বিশ্বের অন্যতম ব্যায়বহুল পাসপোর্ট, তা পাওয়ার জন্য একজন লেবাননি নাগরিককে বছরের ৪০ ডলার প্রদান করতে হয় (আর যদি সে তা একই দিনে তা পেতে চায় তাহলে তাকে ৭০ ডলার প্রদান করতে হবে)। অন্যদিকে, উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ডেনমার্ক এবং জাপানের পাসপোর্ট, যে দেশের নাগরিকরা কিনা ৭৩,০০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার বিনা ভিসায় ভ্রমণের সুযোগ পায়, তা পেতে ডেনমার্কের একজন নাগরিকের বছরে ১০.৪ ডলার (দশ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট পেতে খরচ হয় ১০৪ ডলার), এবং একজন জাপানিকে এক বছরের জন্য ১৩.৫০ ডলার ( দশ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট পেতে খরচ হয় ১৩৫ ডলার) প্রদান করতে হয়।
বায়োমেট্রিক ডাটা হচ্ছে এমন একটি বিষয় যা ঠিক আগামীর উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হবে বলে মনে হচ্ছে না। ব্লগার জিনো বলছে এই বিষয়ে আগামীতে কি ঘটবে তা যেন সে দেখতে পাচ্ছে:
“নতুন বায়োমেট্রিক ডাটা” সম্বন্ধে বলা যায়, এটা কেবল একটা বিষয়কেই বোঝায়, আর সেটি হচ্ছেঃ আরো টাকা! =D। ইতোমধ্যে কয়েক বছর আগে ফিল্ম আকারে তৈরী করা পাসপোর্টের জন্য আমরা শত শত টাকা ব্যায় করেছি (আমার বিশ্বাস তা সবচেয়ে ব্যায়বহুল পাসপোর্ট সমূহের মধ্যে অন্যতম?)। পাসপোর্টে আরএফআইডি চিপ যোগ করা এবং বায়োমেট্রিক বিশ্লেষণ-এর মানে কেবল একটাইঃ নিরাপত্তা প্রধানের ঘনিষ্ঠ কেউ একজন অথবা কোন এক রাজনীতিবিদ/যুদ্ধবাজ নেতা এর সকল স্বত্ব নিয়ে নেবে, আর এর জন্য তারা আমাদের কাছ থেকে অস্বাভাবিক পরিমাণ টাকা নিয়ে নেবে। তারা এই পাসপোর্ট করার কাজ থেকে লক্ষ, লক্ষ, টাকা আয় করবে, যা একই রকম অকার্যকর এবং হতাশার কারণ হয়ে রইবে।
এদিকে, @এলিএফারেস, ভিন্ন এক চিন্তাধারা থেকে এই ঘটনার সমালোচনা করছে যে যখন প্রতিক্রিয়া বিষয়টিকে প্রত্যাখান করা থেকে ক্ষোভের দিকে গড়িয়েছে, তখন পরিস্থিতির উন্নয়নে মূলত খুব সামান্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে:
(…) একটি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা কেবল তার সাজসজ্জা, আকার, কিংবা এটা হাতে নিলে কেমন লাগে কিংবা সীমান্ত ভ্রমণে কিভাবে তা স্ক্যান করা হয় তার উপর নির্ভর করে না। কিন্তু নাগরিকদের তা বলবেন না, কারণ আমরা খুব সাধারণ তথ্যকে পেঁচিয়ে ফেলতে পারি, যা আমাদের আছে, তা করি আমাদের রাতের ভালো ঘুম হবার জন্য। আসুন আমরা এটাকে আমাদের জীবনের একটা উপায় হিসেবে অভিহিত করি। আসুন এটাকে আমরা বর্তমান অবস্থাকে চালিয়ে নেওয়ার উপায় হিসিবে অভিহিত করি। আসলেই কি লেবাননের নাগরিকরা তাদের পাসপোর্টের উন্নতি চায়? এর দিকে তাকালে বোঝা যায়, এদের অনেকে সম্ভবত সামান্যতম আগ্রহী নয়।
তবে পাসপোর্টে আসলে কি আছে? বিশেষ করে এমন এক বিশ্বে যেখানে কোন কোন রাষ্ট্রের মধ্যে সীমান্ত রেখা ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, এদিকে অন্যরা কার্যত বন্দী হয়ে আছে, সেখানে পাসপোর্ট আসলে সকল কিছু বোঝাতে পারে। ক্রমশ বাড়তে থাকে একদল লোক নিজেকে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে মনে করতে পারে, কিন্তু যে দেশে তাদের জন্ম সেই দেশ তাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নির্ধারক হিসেবে এ সবে প্রবেশে সুযোগ তৈরীর ক্ষেত্রে এক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এমন এক রাষ্ট্র যেখানে এত বেশী বিশৃঙ্খলা, সেখানে দ্বৈত নাগরিকত্ব এক কাঙ্খিত লক্ষ্যে পরিণত হয়।
আর এ কারণে @খালাদকে-এর করা টুইট হয়ত উদ্বেগ প্রকাশ করে, কিন্তু এটা এমন এক বাক্য যা প্রায়শই বৈরুতে শোনা যায়:
After my wife gets her #Australia n passport we are going to ceremoniously burn her #Lebanon one at the consulate! #justsaying
— كريم (@khaladk) October 2, 2013
আমার স্ত্রী, তার অস্ট্রেলীয় পাসপোর্ট পাওয়ার পর, আমরা কনস্যুলেটে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার লেবাননের পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলব!