এই কলামটি প্রকৃতপক্ষে গত ৮ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে এল মাগালানিউজে [স্প্যানিশ] প্রকাশিত হয়েছে। এল মাগালানিউজ একটি স্থানীয় অনলাইন, নাগরিক পত্রিকা। এটি আমাদের অংশীদার মি ভোজ এর একটি অংশ।
ডাওসন দ্বীপটি চিলির দক্ষিণ মুখে ম্যাগালেন প্রণালীতে পুন্তা এ্যারেনাসের ১০০ কিলোমিটার নিচে অবস্থিত। এটি ১ লক্ষ ২৯ হাজার হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এটি রাজনৈতিক বন্দী-শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হত। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত সেখানে ওনা লোকেদের বন্দী করে রাখা হত। পঞ্চাশ বছর পর এখন এটি রাজনৈতিক বন্দীদের জন্য একটি নির্যাতন কেন্দ্রে পরিনত হয়ছে।
এই দ্বীপটি অগাস্টো পিনোশের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের দ্বারা চর্চিত দমন-পীড়নের সবচেয়ে ভয়াবহ নিদর্শন। সেখানে প্রায় ৪ শত রাজনৈতিক বন্দীকে আটকে রাখা হয়েছিল এবং ৪০ বছর পর সেখানে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের ক্ষতের উপশম করা শুরু করতে সক্ষম হয়েছিল। চিলির নৌবাহিনীর এই পদক্ষেপকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয় তখনই যখন বিভিন্ন মানবাধিকার গ্রুপ [স্প্যানিশ] এবং তাঁদের পরিবারের ৪০ জনেরও বেশী সদস্যের একটি দল ৭ অক্টোবর স্থানটি পরিদর্শনে যায়। ১৯৭৩ সালে চিলিতে সামরিক আঘাতের ৪০ বছর পূর্তি উদযাপনে তাঁরা একটি স্মৃতি-উৎসব কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সেখানে যায়।
ফ্রান্সিসকো এ্যালারকোনের নেতৃত্বে দ্যা ইউনিয়ন কম্যুনাল ডি ডেরেকোস হিউমানোস – এর করা একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে পদক্ষেপটি নেয়া হয়েছে। নাভাল জোন-৩ এর কমান্ডার ইন চিফ রিয়ার এ্যাডমিরাল কার্ট হার্টুং সাবুগোর কাছে দলটিকে দ্বীপে আনার বুদ্ধি দিয়ে তিনিই আবেদনটি করেছিলেন। এটিকে ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত আবারো রাজনৈতিক বন্দি-শিবির হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
দ্বীপটির রাজনৈতিক বন্দী-শিবির থেকে তোলা ছবিঃ
দ্বীপের নানা কার্যক্রম
সফরটি সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়। তখন পর্যটকেরা পেট্রোল বাহন পাইলটো সিবাল্ডে প্রবেশ করে। সকাল প্রায় ১১ টা ৩০ মিনিটে তাঁরা পোয়ের্তো হ্যারিসের ২ নম্বর সাইটের ডকে পৌছায়। এরপর দলটি দ্বীপটিতে সংরক্ষিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে যায়। স্মৃতিসৌধটির নাম রাখা হয়েছে জেন্টে গ্রান্ডের রাখাল সমিতির কাঠ কাঁটার কলের স্মোকস্টেক। এটি ছিল সান রাফায়েলের সালাসিয়ান মিশনের ভোজনালয়। রিও শিকোতে আটক শিবির দেখার মধ্য দিয়ে তাঁদের সফর শেষ হয়।
ম্যাগালেন প্রণালীতে দ্যা র্যাংকিং নাভাল কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে যে, “এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো নৌবাহিনীর জাহাজ কোন মানবাধিকার গ্রুপকে ডাওসন দ্বীপে নিয়ে এলো। এটি এমন একটি প্রকাশভঙ্গি, যা আরো একবার আমাদের নাগরিকদের চাহিদা পূরণের সুযোগ দিয়ে, ধন্যবাদ জানিয়ে আমাদেরকে পূর্ণতা দান করেছে”।
আজ ডাওসন দ্বীপটিতে প্রায় তিন শত লোক বাস করে। প্রধানত নৌবাহিনীর কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং তাঁদের পরিবারই এখানকার অধিবাসী। দ্বীপটির নৌবাহিনী ভিত্তিক কর্মকাণ্ড, তৃতীয় নাভাল জোনের জাহাজগুলোকে সৈন্যদল চালনা করার এবং কোন স্থানে রাখার বিদ্যা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে।
রাজনৈতিক বন্দী এবং সাহিত্য
উল্লেখ্য যে, সাবেক এসএস কর্মকর্তা এবং যুদ্ধাপরাধের দোষে দোষী সাব্যস্ত পলায়মান ব্যক্তি ওয়ালটার রোফ এই ইসলা ডাওসন রাজনৈতিক বন্দী-শিবিরের নকশা তৈরি করেন। তিনি পরবর্তীতে চিলিতে পালিয়ে যান। পুন্তা এ্যারেনাসে সৈন্যদের একটি বিভাগীয় সদরদপ্তরের বৈধ কর্তৃত্বের অধীনে শিবিরটি বহাল আছে। চিলির সামুদ্রিক ও চিলিয়ান আর্নড ফোর্সেসের সদস্যরা পালাক্রমে এটির রক্ষার দায়িত্ব পালন করে থাকে।
সেখানে ৯৯ জন রাজনৈতিক বন্দী আছে। তাঁদের বেশীরভাগই প্রেসিডেন্ট সালভাদর এলেন্ডের অভ্যন্তরীণ চক্রের সদস্য। তাঁদের মধ্যে আছেন সারজিও ভাস্কোভিক, লুইস কোরভালান, আনসেলমো সুলে, ওসভালডো পুসিও, আর্তুরো জিরোন, ক্লডোমিরো আলমেয়দা, জুলিও প্যালেস্ট্রো রোজাস, ফার্নান্দো ফ্লোরেস লাবরা, জোসে তোহা এবং সারজিও বিটার।
সবচাইতে শেষের জন চিলির রাজনৈতিক বন্দী শিবিরের গল্পকে অমরত্ব দান করেছেন। তিনি তাঁর ডাওসন ইসলা ১০ শিরোনামের স্মৃতিকথাটি ১৯৮৭ সালে প্রকাশ করেছেন। মিগুয়েল লিটিন ২০০৯ সালে বইটি নিয়ে বড় পর্দায় একই নামে চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন।
“ডাওসন, ইসলা ১০” নামক চলচ্চিত্রের জন্য ট্রেলার