ভঙ্গুর অর্থনীতি নেপালে উৎসবের আমেজকে নষ্ট করেছে

অক্টোবর ২৬ তারিখে শুরু হয়েছে নেপালে পাঁচ দিন ব্যাপি ‘তিহার’ বা ‘দীপাবলি’ উৎসব। দীপাবলি হচ্ছে যখন হিন্দুরা সম্পদ আর সৌভাগ্যের দেবী লক্ষীর কাছে পুজা করে আর তার আশির্বাদ কামনা করে। পার্শবতী ভারতেও এই উৎসব পালিত হয়।

Tihar

তিহার, আলোর উৎসব, ফ্লিকার ব্যবহারকারী মাঙ্কি ইমেজেস এর সৌজন্যে ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর আওতায় ব্যবহৃত

প্রদীপ কুমার সিং নেপালে তিহার বা দীপাবলিকে বর্ণনা করেছে:

“দীপাবলি শুধুমাত্র একটি উৎসব না বরং দাশায়েনের পরে নেপালীদের জন্য এটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর প্রতিক্ষীত উৎসব। এটি পাঁচ দিনব্যাপী উদযাপিত হয়ে থাকে। উৎসবের সময়ে কাক, কুকুর, ইশ্বর, গরু আর ভাইদেরকে (বোনরা) সম্মান জানায়। দীপাবলীর অবশ্যই ধর্মীয় একটা গুরুত্ব আছে আর যেহেতু এটা বেশ লম্বা উৎসব, তাই এর গতানুগতিক ধর্মীয় তাৎপর্যও দীর্ঘ। তবে আমি কয়েক বছর আগে আমার গুরুজনদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যে এর একটা বৈজ্ঞানিক গুরুত্বও আছে। আমিও দীপাবলির বৈজ্ঞানিক দিকটি সমর্থন করি যে এটা ‘পরিছন্নতা প্রবর্তিত করে'। আসলেই, দীপাবলি উৎসবের থেকে বেশী পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত। সব কিছু ঝকমক করে আর এই ভাবে শুরু হয় আলোর একমাত্র উৎসব, ‘দীপাবলি'।”

এই বছর বিশ্ব অর্থনীতির নিম্নমূখী যাত্রা আর নেপালে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির আঘাত, এই দেশের আসলেই ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ দরকার।

ইউনাইটেড উই ব্লগ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরেছে:

“নেপালের রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কের দেয়া একটা প্রেস স্টেটমেন্টে বলা হয় যে খাদ্য আর পানীয়ের দাম ১৩.৪% বেড়ে গেছে আর খাদ্য ব্যতিত অন্যান্য জিনিষ আর সার্ভিসের দাম ১২.৭% পর্যন্ত বেড়েছে।

খাদ্য আর অন্যান্য জিনিষের এতো দাম বেড়ে যাওয়া, চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাসে মুল্যস্ফীতির হার বেড়ে বিপদজনক ১৩.১ % হয়েছে গত বছরের একই সময়ের ৬.৩% এর তুলনায়।”

রাইটার্স পিট ব্লগের একজন ব্লগার নেপালী অর্থনীতির আর একটা দৃষ্টিকোন প্রদান করেছেন:

“নেপালী অর্থনীতিতে এই অথনৈতিক মন্দা খুব খারাপভাবে আঘাত হানেনি। বৈদেশিক সরাসরি বিনিযোগ নেপালের অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখার জন্য অনেকটাই এককভাবে দায়ী। নেপালের আইন বৈদেশিক বিনিয়োগের ব্যাপারে খুব নমনীয় না যার কারনে স্থানীয় অর্থনীতি নীজের সম্পদের উপর বিশালভাবে নির্ভরশীল। স্টক বাজার একেবারেই নিরাপদ যেহেতু তালিকাভুক্ত শেয়ারব্যবসায়ী সংস্থার মধ্যে বিদেশী শেয়ার দেয়ার কোম্পানী নেই।

কিছু দূর পর্যন্ত নেপালের অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়েছে। নেপালের আয়ের একটা বড় অংশ হলো রেমিটেন্স যা পশ্চিমের মন্দার কারনে সামান্য প্রভাবিত হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী আর বানিজ্যিক ব্যক্তিত্ব নেপালের অর্থনীতিকে ‘অন্তরীত’ বলেছে যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্রের মন্দার তুলনায়।”

Tihar
তিহার, আলোর উৎসব, নেপালের নিউ রোডের একটি দৃশ্য, ফ্লিকার ব্যবহারকারী আরভিভেকের এর সৌজন্যে ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর আওতায় ব্যবহৃত

নেপালী ভাষার ব্লগ মাইসংসার এ এই উৎসবের দৃশ্য আর বেশী উৎসবমুখর। দীপাবলির সময়ে নেপালীরা শুধুমাত্র সম্পদের দেবীর পুঁজাই করে না, এই সময়ে তারা প্রকৃতি আর পরিবারকেও সম্মান জানায়। উৎসবের দ্বিতীয় দিন কুকুরের দিন। মানুষের সব থেকে ভালো বন্ধুকে তার বিশ্বস্ততার জন্য সম্মান জানানো হয়।

এই ব্লগের ‘নেতাদের পোষা কুকুররা কেমন?‘ নামক পোস্টে নেপালের রাজনৈতিক হোমড়াচোমড়াদের যেমন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দুবে, সুর্য বাহাদুর থাপা আর প্রাক্তন মন্ত্রী পশুপতি শমশের রানার কুকুরের কিছু ছবি আছে। নেপালে চলমান অর্থনৈতিক সমস্যার কোন উল্লেখ নেই কিন্তু ব্লগার চেষ্টা করেছে সমাজের অসামঞ্জস্যের কথা তুলে ধরতে। শের বাহাদুর দুবের কুকুর যে তরুণ দেখাশোনা করে তার মাসিক আয় প্রায় নেপালী রুপিয়া ৩০০০ (আমেরিকান ডলার ১= নেপালি রুপিয়া ৮০ প্রায়) আর দুবে পরিবার কুকুরের উপর মাসে নেপালি রুপিয়া ৩০,০০০ খরচ করে।

থাম্বনেইল ছবি: ফুলঝারী, ফ্লিকার ব্যবহারকারী সুভাকর মানানধার এর সৌজন্যে ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর আওতায় ব্যবহৃত

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .