সৌদি আরব – যেখানে আপনাকে গুলি করা হয় এবং এর জন্য আবার শাস্তিও দেয়া হয়

সৌদি ফৌজদারি আদালত কাতিফের চারজন যুবকের বিরুদ্ধে শাস্তির রায় দিয়েছে। তাঁদেরকে ১৬ মাস থেকে চার বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তাদেরি একজন হলেন জালাল আল-কাতান। একটি প্রতিবাদের সময় নিরাপত্তা বাহিনী তাঁর পেটে গুলি করে এবং সে সময় তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে দৌড় দিয়েছিলেন। তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) বিচারটি ছিল এই ঘটনার চতুর্থ এবং শেষ অধিবেশন। গত ৮ জুলাই, ২০১২ তারিখে সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া প্রতিবাদটিকে এই বিচার কার্যটি আবার ফিরিয়ে এনে দীর্ঘায়িত করেছে।

The four Qatif young men. Al-Qattan is top right.

কাতিফের চার জন যুবক। উপরের সর্ব ডানের জন আল-কাত্তান। 

শিয়া যাজক শেখ নিমের আল-নিমেরকে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অনেক যুবকের মাঝে সেই রাতে আল-কাতানও অংশগ্রহণ করেছেন। সেই রাতে (সৈয়দ আকবর আল-শাখোরি এবং সৈয়দ মোহাম্মাদ আল-ফেলফেল) দু’জন শহীদ হয়েছেন এবং জালাল আল-কাতানকে পেটে গুলি করা হয়েছে। আওয়ামিয়াতে তাঁকে একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে কেউ কেউ তাঁর রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। কোন একজন লোক জালালের ভাই আলিকে ডেকে খবর পাঠায়। তিনি আসেন এবং জালালকে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যান। জালালের পরিবার তাঁকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে একটি হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে হাসপাতালে যেতে অস্বীকার করেন। ২৩ জন “চিহ্নিত লোক” – এর মধ্যে দু’জন – তাদের একজন মুরসি আল-রেব। তাঁকে গত জুন মাসে আওয়ামিয়াতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনিও জালালের মতো পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন এবং তাকেও চিকিৎসা করতে সাহায্য করা হয়েছে। তাঁরা একজন সেবিকা পেয়েছেন। কিন্তু তিনি তাঁদেরকে বলেছেন, তাঁর অবস্থা বেশ সংকটপূর্ণ এবং তাঁর সার্জারি করা প্রয়োজন। একজন সক্রিয় কর্মী, একজন শৈল্য চিকিৎসককে খোঁজার প্রস্তাব দেন। কিন্তু কোন শৈল্য চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। তাই আরেকজন সেবিকাকে নিয়ে আসা হলে, তিনিও একই উপদেশ দেন। পরিবারটি আবার জালালকে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে রাজি করাতে চায়। কিন্তু সে রাজি হয়নি। তাই তাঁর চাচা তাঁকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে উপদেশ দেন। এর পরের দিন জালাল আল-কাতান, তাঁর ভাই আলী, চাচা মোহাম্মাদ আল-মিসলাব এবং তাঁর দুলাভাই হুসেন আল-আরিফ কুয়েতে যাওয়ার সময় খাফজি বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার হন।

তাঁদের বিরুদ্ধে আনা কয়েকটি অভিযোগ হলঃ শাসকের প্রতি আনুগত্য ভঙ্গ করা, অন্য প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে বিবৃতি না দেয়া, জালালকে শুশ্রূষার জন্য একটি নিরাপদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া দু’জন লোকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট না করা, নির্দিস্ট স্থানের বাইরে যে দু’জন সেবিকা জালালের চিকিৎসা করার জন্য সাহায্য করতে চেষ্টা করেছিল তাঁদের বিরুদ্ধে বিবৃতি না দেয়া। জালালের বিরুদ্ধে তাঁর পিতামাতাকে অশ্রদ্ধা করার অভিযোগও আনা হয়। কারন হাসপাতালে না গিয়ে আসামী নিজেই তাঁর জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। জালাল এবং তাঁর চাচার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। জালালকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে এবং পরের তিন বছর তাঁর যেকোন রকম ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সময়ে তাঁর চাচাকে চার বছরের জেল এবং পরের চার বছর তাঁর যেকোন রকম ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। জালালের ভাই, আলিকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং পরের দুই বছর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আল-আরিফ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করার পরিবর্তে শুধুমাত্র তাঁর শ্যালককে দেশের বাইরে “পাচারের” অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাঁকে ১৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে এবং পরে ১৬ মাসের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এই রায় প্রদান নিয়ে টুইটার ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেনঃ

কাতিফে আমাদের অনেক জালাল আল-কাতান আছে, যারা গ্রেপ্তারের ভয়ে এবং জালালের মত ভাগ্যবিড়ম্বিত হতে চায় না বলে হাসপাতালে যায়নি। কেউ কেউ শুধুমাত্র জেলে যেতে চায়নি বলে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।

আজ জালাল আল-কাতানের বিচার করা হবে, যাকে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করেছে।

অদ্ভূত! তাঁরা তাকে গুলি করেছে, এরপর তাঁকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

মানবতার রাজ্যে আহত লোকের শুশ্রূষা করা আইনের চোখে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনকি আহত ব্যক্তিটি যদি ঘনিষ্ঠ আত্নীয়ও হয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .