- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

বাংলাদেশ: ফেসবুকে মিলছে পুলিশি সেবা

বিষয়বস্তু: বাংলাদেশ, আইন, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, প্রযুক্তি, সরকার

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উত্তরার একটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট প্রথমবারের মত ফেইসবুকে একটি একাউন্ট খুলেছে এলাকার নাগরিকদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও তাদের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে।

অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ পেট্রোল উত্তরা [1] নামে একটি ফেসবুক পেজ সম্প্রতি সামাজিক মিডিয়ায় আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে। এই পেজের মাধ্যমে ঢাকার উত্তরায় [2] বসবাসরত নাগরিকদের পুলিশ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবা, তথ্য ও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে পুলিশের কাজ এবং দায়িত্ব নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। নানা অপরাধে গত এক বছরে সারাদেশ থেকে ১৩ হাজার ৭৪৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সিকিউরিটি সেলে অভিযোগ জমা পড়েছে। [3] উত্তরায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ লোক বসবাস করে।

অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ পেট্রোল উত্তরা পেজটি পরীক্ষামূলকভাবে ফেসবুকে খোলা হয়েছে। উত্তরাবাসীদের কাছ থেকে পুলিশ সম্পর্কিত যেসব সমস্যা রয়েছে তা শেয়ার করার জন্য আহবান জানানো হয়েছে।

অনলাইনের মাধ্যমে পুলিশের সেবা দেয়ার উদ্যোগ এটাই প্রথম নয়। এর আগে ই-জিডি [4] সেবা চালু করেছিল। তবে খুব একটা সফল হয়নি সেটা। পুলিশের এসএমএস ডেস্ক [5] সেবাও তেমন সফলতা পায়নি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনী। ছবি: এ এম আহাদ। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (১৩/৬/২০১১) [6]

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনী। ছবি: এ এম আহাদ। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (১৩/৬/২০১১)

উত্তরায় যানজট একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। যানজটে নিরসনে পুলিশ কী করছে তা পেজটিতে তুলে ধরা হয়েছে [7]:

উত্তরাবাসীদের যানজট থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিতে আজ থেকে আমরা এয়ারপোর্ট গোল চত্বরের দুপাশে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করেছি।যেসব পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা দিয়ে পার হোন তাঁদেরকে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে এ ব্যবস্থা।আমি নিজে আজ সকাল ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডিউটি করেছি।পুরো সময়টুকু সম্ভব না হলেও অন্ততঃ “রাশ আওয়ার”(Rush Hour) সময়টুকুতে উত্তরার পুলিশ তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করবে পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে অনুপ্রাণিত করতে।দুঃখজনক হলেও সত্য, কাজটি খুব কঠিন এবং পথচারীরা প্রায় কেউই এটি মানতে চান না।তবে আমরা ঠিক করেছি আগামী বেশ কিছুদিন আমরা এই ডিউটি অব্যহত রাখব যাতে পথচারীরা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।

Police cleared illegal parking in front of Scholastica School in Uttara [8]

উত্তরা স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে অবৈধভাবে পার্ক করা গাড়ি সরানো হয়েছে। ছবি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ পেট্রোল উত্তরা ফেইসবুক পেজের সৌজন্যে।

সাম্প্রতিক এক পোস্টে [9] পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার লিখেছেন কিভাবে উত্তরা স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে অবৈধভাবে পার্ক করা গাড়ি সরিয়ে যানজট কমিয়েছে পুলিশ। জনগণের প্রতি পুলিশের অনুরোধ:

জোরপূর্বক কাউকে আইন মানানো সম্ভব নয় এটা আমি আপনি সবাই জানি। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা মেইন রোডে কোনও অবস্থাতেই গাড়ি রেখে যানজট সৃষ্টি করবেন না।

ব্লগার অণু তারেক [10] সবাইকে এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরতে পেজটিতে যোগ দেয়ার আহবান জানিয়েছেন:

এই পেজে দলে দলে যোগ দিন। আপনার এলাকার সমস্যার কথা পুলিশকে জানান, পুলিশ জনগণের সেবক, রক্ষক। সঠিক জায়গায় অভিযোগ করুন- এই উদ্যোগের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সমস্ত পুলিশ থানা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আওতার মধ্যে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে, আপনিও সাথে থাকুন…

ব্লগার আসাদ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান [11] কাজের সূত্রে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে থেকেছেন কিন্তু পুলিশের এই ধরনের উদ্ভাবনী উদ্যোগ তার চোখে পড়েনি। তিনি লিখেছেন:

kindly accept my sincere appreciation. it's indeed an exceptional but very effective way to ensure civic security through social media. I've been to many countries across Asia, Europe and Africa but have never heard about such innovative idea. my personal feeling is that if the mass have accessibility to the law enforcing agencies by any means, it just boost up their level of courage. please keep your motivation up and I hope people will be beside in spirit. good luck!

আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কার্যকরভাবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এই উদ্যোগ এখন পর্যন্ত ব্যতিক্রম। এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার অনেক দেশেই আমি গেছি। কিন্তু এ ধরনের উদ্ভাবনী উদ্যোগের কথা কখনো শুনিনি। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, সাধারণ মানুষের যদি কোনোভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে যেতে পারে, তাহলে তাদের মনোবল বাড়ে। আপনার উদ্যোগটি ধরে রাখুন। আশা করি, জনগণ আপনার পাশে থাকবে। শুভকামনা রইল।

জুনায়েদ হোসেন [12] উদ্যোগকে প্রশংসা করে ‘পুলিশ ফোর্স’ নয় ‘পুলিশ সার্ভিস’ চেয়েছেন:

‘পুলিশ ফোর্স’ নয় আমরা ‘পুলিশ সার্ভিস’ চাই। আমাদের নিরাপত্তা প্রদান করা সংস্থার সাথে আমরা বন্ধুত্ব মানের সম্পর্ক রাখতে চাই।

ফয়সাল ইবনে জামাল [13] আশা প্রকাশ করেছেন এই পেজের মাধ্যমে কমিউনিটি পুলিশিং এর ধারণা এবং তার বাস্তবায়নের ব্যাপারগুলো উঠে আসবে:

এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। আশা করি শুধু মাত্র তথ্য আদান প্রদান কিংবা মতামত-ভিন্নমতেই এটি সীমাবদ্ধ থাকবে না। কমিউনিটি পুলিশিং এর ধারনা ও তার বাস্তবায়নে কীভাবে সবাইকে কাজ করতে হয় এ ব্যাপারগুলো ও উঠে আসবে এই পেজে। ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশি বাস্তবতা এবং এ সময়ের পুলিশি বাস্তবতা যে ভিন্নতর তার ধারনা পুলিশ বিভাগেও যেমন গড়ে ওঠেনি তেমনিভাবে জনগণের ও কোন ধারনা নেই সে সম্বন্ধে। আমাদের সৎ পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্যের অভাব নেই মোটেই। কিন্তু আমাদের সমস্যাগুলি অন্য জায়গায়। ভালো সেবা পেতে গেলে যিনি দেবেন আর যিনি নেবেন তাদের সম্পর্কটা সহজ হতে হয়। বন্ধুত্বটা শুধু মুখে মুখে বললেই হবে না গভীরতম বিশ্বাসেও ধারন করতে হবে।