গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর একটি আদালত বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানি হত্যার রায় দিয়েছে [1]। আদালত অভিযুক্ত কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরবেলায় ভারতের কোচবিহার জেলার অন্তর্গত চৌধুরীহাট সীমান্ত চৌকির কাছে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় [2] গুলিবিদ্ধ হন বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী খাতুন। তিনি তার বাবাকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরছিলেন। কনস্টেবল অমিয় ঘোষ গুলি করেন এবং ফেলানী ৪ ঘন্টা ধরে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকে, মৃত্যু পর্যন্ত। তার অনেক চিৎকার শুনেও কেউ তাকে বাঁচাতে আসেনি। সে সময় সামাজিক সাইটগুলোতে ফেলানির ঝুলে থাকা ছবি ব্যপক প্রচার হয়। নানা ধাপ পেরিয়ে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট বিচার শুরু হয়।
এ রায়ের ঘটনা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার সম্পর্কে নতুন করে প্রভাব ফেলে।
ফেলানি হত্যায় অভিযুক্ত কনস্টেবল ‘নির্দোষ’ হিসেবে খালাস পাওয়ায় বাংলাদেশে সামাজিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
আশফাক নিপুন [4] বিএসএফ-এর সামরিক আদালতের রায়কে তামাশা বলে অভিহিত করেছেন:
So the verdict came; “No One Killed Felani!” What a joke!
বিচারের রায় এলো; “কেউ-ই ফেলানিকে খুন করেনি!” কী তামাশা!
ফারজানা জান্নাত (@farjana_neela [5]) এই রায়কে ন্যায়বিচারের মৃত্যু হিসেবে দেখেছেন:
No one killed or hanged the dead body of #Felani [6]-all this happened automatically; R.I.P #Justice [7] pic.twitter.com/OhBvjF84xK [8]
— Farjana Jannat (@farjana_neela) September 6, 2013 [9]
কেউ-ই #ফেলানিকে হত্যা করেনি কিংবা কাঁটাতারে ঝুলিয়ে দেয়নি। সব এমনি এমনি-ই হয়েছে। বিদায় #ন্যায়বিচার!
এই রায় সীমান্ত হত্যাকাণ্ড আরো উসকে দেবে বলে মনে করেন টুইটার ব্যবহারকারী সুবল সরকার (@burningNlearnin [10]):
RT@bewahid [11]: ফেলানীর রায় একটা বার্তা দেয় এমন নির্মম হত্যা আরো চলবে।
— Subal Sarker (@burningNlearnin) September 6, 2013 [12]
বাংলাদেশের সাথে ভারতের ৩৭১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। প্রতিবছরই ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে অনেক বাংলাদেশী মারা যান। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন [13] অনুসারে, ২০১২ সালে বিএসএফ-এর গুলিতে ৩৮ জন মারা গেছেন।
সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে শান্তনু বণিক ফেসবুকে [14] লিখেছেন:
Bangladesh is a small country next to the mighty India. Therefore, illegal immigration and border-crossing isn't uncommon. Everyday, ordinary people choose to take unthinkable risk in hopes of a better life on the other side of the fence.
It is s crime, but a petty crime. Not one that deserves the ‘Shoot on sight’ policy enforced by the Indian Border Security Force (BSF). […]
ক্ষমতাধর ভারতের পাশে বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ। অবৈধ অভিবাসন এবং সীমান্ত পারাপার এখানে অস্বাভাবিক কোনো ব্যাপার নয়। প্রতিদিনই সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ভালো কিছুর আশায় কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে পাড়ি জমায়।
হ্যাঁ, এটা অপরাধ। তবে তা খুব ছোট। এজন্য কেউ-ই ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ‘দেখামাত্র গুলি’ নীতি আশা করেন না। […]
বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্যের বিপুল পরিমাণ বাজার রয়েছে। তাই ক্ষুদ্ধ অনেকেই ভারতীয় পণ্য ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান বর্জনের ডাক দিয়েছেন। ব্লগার, লেখক আকতার আহমেদ ফেসবুকে [16] লিখেছেন:
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপনার ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া এবং অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে বলছি- সম্ভব হলে টিভিটা একটু বন্ধ করেন, ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি'র অমিতাভ বচ্চনের দরাজ গলার সামনে আপনার কথাগুলো বেশ অস্পষ্ট এবং বেমানান লাগছে!
তবে এর সাথে একমত নন ফেসবুক ব্যবহারকারী মুকিত মোহাম্মদ [17]:
ফেলানী হত্যার রায়ের সাথে ভারতীয় টিভি অনুষ্ঠান পছন্দ করার সম্পর্ক কি? ঐদেশের টিভি অনুষ্ঠান পছন্দ করি বলে আমার দেশের মানুষকে তাদের মেরে ফেলা যেমন জাস্টিফাইড না, তেমনি এই কুবিচারের প্রতিবাদে ঐদেশের টিভি অনুষ্ঠান বর্জনও কোনো যৌক্তিক প্রতিবাদ না|
এদিকে রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ফেসবুকে [18] বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়েছে। যদিও ভারতীয় হাই কমিশন চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষা [19] করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। হাই কমিশনের এক মুখপাত্রের মতে এই রায় যোগ্য কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুমোদন হওয়া বাকি আছে। তবে বিশেষ আদালতের রায়ে আপিল করার সুযোগ নেই।