অব্যহত বৌদ্ধ মূর্তি বিতর্ক বিক্ষোভ নেপালকে কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে

বিরেন্দ্রনগর শহরের কাছে  কাকরেবিহার নামে এক বৌদ্ধ-হিন্দু মন্দিরে, ১৭ ফুট লম্বা এক বৌদ্ধ মূর্তি স্থাপনের দাবীতে ২৯, আগস্ট, ২০১৩ তারিখে নেপালের কাঠমুন্ডু উপত্যকা আরো একবার বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

এবার, বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। গত মাসে যখন বিক্ষোভ শুরু হয় তখন বৌদ্ধ মূর্তি নিয়ে শুরু হওয়া সংঘর্ষে ৪ জন পুলিশ ও ১৭ জন নাগরিক আহত হয়। এর সামান্য পরে বৌদ্ধ মূর্তি অপসারণের ঘটনায় সৃষ্ট ক্ষোভ জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়, কিন্তু দৃশ্যত ঘটনার সমাধান হয়নি।

এই বিক্ষোভ শুরু হয় তখন যখন বুদ্ধের জন্ম তারিখ ১১ মে, ২০১৩ তারিখ বৌদ্ধ পূর্নিমা স্বল্প সময়ের জন্য বুদ্ধের মূর্তি উন্মোচন করা হয়। ইতোমধ্যে কাকরেবিহারের গাছের নীচে স্থাপন করা হয়, এমন এক কাপড় দিয়ে যা কিনা ধর্মীয় উপাচার এবং আর্চনার সমাপ্তির পর অপসারণ করা হয়, যখন স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত হন এবং এতে হস্তক্ষেপ করে এই বলে যে এই ভাবে মূর্তি স্থাপন বনায়ন নীতির বিরুদ্ধাচারণ। যখন এক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে তখন পুলিশের সহায়তা কর্মকর্তারা মূর্তিটিকে উঠিয়ে ফেলে  এবং সেটিকে জেলা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যায়, যেখানে মূর্তিটি এক কোনায় পড়ে থাকে। নেপালি ব্লগ মাই সানসারায় এই ঘটনার ছবি দেওয়া আছে।

প্রজ্ঞা ঘিমিরে, ইউটিউবে একটি ভিডিও আপলোড করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে কিভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং স্থানীয় পুলিশকে ধাওয়া করছে এবং তারপর মূর্তিটিকে স্থাপন করার চেষ্টা করছে:

মাইসানসার-এর তথ্য অনুসারে, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০০৮-এ প্রত্নত্তত্ব বিভাগের সাথে পরামর্শের পর বৌদ্ধ মন্দির স্থাপন এবং সংরক্ষণ কমিটিকে মূর্তি স্থাপনের অনুমতি প্রদান করে। .

বিক্ষোভ এতটাই বিশাল আকার ধারণ করে যে উত্তেজিত জনতার কারণে একটা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুরখেত উপত্যকা বন্ধ ছিল। এই আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ গতি লাভ করে যখন ৩০ জুলাই, ২০১৩ তারিখে বৌদ্ধ সম্প্রদায়   সিংহ দরবারের সামনে এক বিক্ষোভের আয়োজন করে, যা কিনা দেশের প্রশাসনিক কেন্দ্রস্থল। এই বিক্ষোভের কারণে কাঠমুন্ডু উপত্যকার যান চলাচল থমকে দাঁড়ায়।

সরকার, বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানায়, কিন্তু   কোন চুক্তি ছাড়াই এই আলোচনার ইতি ঘটে। তবে বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবী আন্দোলন চালিয়ে যায়, অনলাইন পোর্টাল সেটোপাটি [নেপালি ভাষায়] এবং হামরাকুরা [নেপালি ভাষায়] এই সংবাদ প্রদান করে। বৌদ্ধ ধর্মের কয়েকজন নাগরিক সুরখেত জেলার কাকরেবিহারে ভগবান বুদ্ধের মূর্তি স্থাপনের দাবীতে a আমরণ অনশন ঘোষণা প্রদান করে।  

এদিকে, ভিন্ন সম্প্রদায় এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের এক যৌথ কমিটি ৩১ জুলাই ২০১৩ তারিখে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে এবং কাকরেবিহার বৌদ্ধমূর্তি স্থাপন না করার জন্য বিক্ষোভকারীদের উপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য পরবর্তী শুক্রবার সন্ধ্যায় এক শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এই দলটি ৩ আগস্ট ২০১৩ তারিখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লক্ষ্যে বিবৃতি প্রদান করে যে বৌদ্ধ মূর্তি স্থাপনের দাবী অবশ্য বাতিল করতে হবে। এই ঘটনায় তারা  মামলাও দায়ের করেছে।

বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহাসিক এলাকা

স্থানীয় এবং বৌদ্ধ বিহারের সংস্কৃত, এবং পালি শব্দ অনুসারে মধ্য-পশ্চিম নেপালের সুরখেত পৌরসভার দক্ষিনে অবস্থিত কাকেরবিহার-এর নামকরণের পেছনের কারণ হচ্ছে এই এলাকাটি দেখতে শসার বীজের মত, নেপালি ভাষায় কাকরে মানে হচ্ছে শসার বিচি।

এক সময় যে এলাকা ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে মুখরিত ছিল, সেই প্রাচীন ভাস্কর্যের অমূল্য সমাহার এখন চারপাশে পড়ে পড়ে ধ্বংস হচ্ছে। মূল ফটকে একজন রক্ষণাবেক্ষণ কারীর একটি স্বাক্ষর করা বইয়ে ভ্রমণকারীদের স্বাক্ষর করানো সত্ত্বেও মাটিতে দাঁড়ানো ভালোবাসার বার্তা ভরা কাঠামোগুলো এবং মনোহর গ্রাফিতিগুলো এখানে এক সৌন্দর্য্য যোগ করে।

Kakre Bihar, near Surkhet. Image from Flickr by The Great Himalaya Trail. CC NY-ND 2.0

সুরখেতের কাছে অবস্থিত কাকরেবিহার। ছবি দি গ্রেট হিমালেয়া ট্রেইল-এর ফ্লিকার পাতা থেকে নেওয়া। সিসি এন ওয়াই-এনডি ২.০

এক গবেষণাপত্রে (পিডিএফ), দিলি রাজ শর্মা উল্লেখ করেন :

ঐতিহাসিক কাকরে বিহার সমগ্র এলাকার তুলনায় অসাধারণ অপুর্ব সব মূর্তির সংগ্রহশালা, যা এই বিষয়টি নিশ্চিত করে যে এই এলাকায় মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহ্য অনেক অগ্রগতি লাভ করেছিল, যা হয়ত মধ্য যুগে ভারতের পশ্চিম অংশ, বিশেষ করে গুজরাটের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। মহাযান-এর অনুশীলন হয়ত হিন্দু আদর্শের সাথে মিশে যায় এবং এই এলাকার সামাজিক ঐক্যের জন্য তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

“বুদ্ধের নামে যুদ্ধের পিছনে নয়”

কাকরেবিহারের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এবং ফেসবুক ওয়ালে প্রচণ্ডভাবে আঘাত হানে এবং টুইটার ব্যবহারকারীরা এই নিয়ে আলোচনায় মেতে ওঠে।
মিলন ওয়াগলে (@শব্দচিত্র) টুইট করেছে:

কাকরেবিহারের বৌদ্ধ মূর্তি: বুদ্ধ, শান্তির চেয়েও মহাশান্তি বেছে নিয়েছিলেন। বুদ্ধের নামে যুদ্ধ বেছে নেবেন না। বুদ্ধ দীর্ঘজীবী হোউক, যুদ্ধের পরাজয় ঘটুক।

জাপানে, নেপালের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ডঃ বিষ্ণু হারি নেপাল (@ডঃবিষ্ণুনেপাল ) লিখেছে:

বিশেষজ্ঞরা যে বিষয়ে উপসংহারে পৌঁছেছিল যে নেপাল কাকরেবিহার নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিতর্ক চলছে। সরকার এই বিষয়ে ইতস্তত করছে কারণ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের উপর তিব্বতের একটা প্রভাব আছে।http://t.co/HGi6YslRBy

টরেন্টো ভিত্তিক নেপালি সাংবাদিক সুরেন্দ্র লাওটি (@সুরেন্দ্র লাওটি ) সংবাদ প্রদান করেছে :

বৌদ্ধরা, কাঠমান্ডুতে শক্তি প্রদর্শন করল, নেপালে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে বিকশিত করার জন্য। হিন্দু প্রভাবে ইতি ঘটতে যাচ্ছে। #কাকরেবিহার pic.twitter.com/UppmpfGhdO

বুদ্ধ, তিনি ছিলেন এশিয়ার আলো। সারা জীবন ধরে তিনি শান্তির বাণী প্রচার করে গেছেন। এখন তার অনুসারীদের উচিত নয় শান্তির বদলে যুদ্ধকে বেছে নেওয়া।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .