ভারতবর্ষের কেরালার আট্টাপাডি নামে ঘন জনবসতিপূর্ণ আদিবাসী এলাকায়, আদিবাসী শিশু মৃত্যুর বিহ্বল করা পরিসংখ্যানে আরেকটা সংখ্যা যোগ করে, মাত্র দেড় বছরের মেয়ে কবিতা গত সপ্তাহে অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেল।
২০১৩ সালের শুরু থেকে ৩৫ জন আদিবাসী শিশু আট্টাপাডিতে অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছে। দেশের বহুল পঠিত সংবাদপত্রগুলোর প্রতিবেদনে ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে ভারতের জনসংখ্যার সব থেকে অরক্ষিত সম্প্রদায়ের এই করুণ কাহিনীর পর্যালোচনা করা হয়েছে।
ইউনিসেফ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী নবজাতকদের মৃত্যুর মূল কারণ হল দুর্বল স্বাস্থ্য, আর এর জন্য দায়ী আট্টাপাডির স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো যারা গর্ভবতী আদিবাসী মহিলা, মা ও শিশুদের সঠিক যত্ন নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এই শোচনীয় অবস্থার আরেকটা কারণ হল বিচার বুদ্ধিহীন উন্নয়নের জন্য যথেচ্ছ বৃক্ষচ্ছেদন যা আদিবাসী সম্প্রদায়কে তাদের পরম্পরাগত স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে উৎখাত করেছে। কোজিকোড মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা বিভাগের প্রধান ডঃ পি কে শশীধরন এই বিষয়ের ওপর একটি পরীক্ষামূলক গবেষণা করেছেন আর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে যথেচ্ছ বৃক্ষচ্ছেদন (পিডিএফ সূত্র), ভোগবাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও সচেতনতার অভাব আট্টাপাডির স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার প্রধান কারণ।
আদিবাসী সংক্রান্ত পত্রিকা গোত্রভূমির সম্পাদক রাজেন্দ্র প্রসাদ দি হিন্দু সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন যে এই উন্নয়ন কাঠামোর পরিবর্তন না হলে আট্টাপাডির আদিবাসী জনসংখ্যা আগামী দুই-তিন প্রজন্মে ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে। ‘থাই কুলা সঙ্ঘম’ নামে আট্টাপাডির একটি আদিবাসী মহিলা সংগঠন দাবী করেছে যে অপুষ্টির কারণে যে শিশুরা প্রাণ হারিয়েছে তাদের প্রকৃত সংখ্যা সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে অনেক বেশী।
যদিও ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী ভারতবর্ষে তিন বছরের নীচে ৫০ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার কিন্তু কেরালার উন্নয়ন কাঠামো আর রাজ্যের অসংখ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রের উপস্থিতির কারণে শিশু অপুষ্টির এমন কাহিনী বিরল। দেশের যে সমস্ত রাজ্যে শিশুমৃত্যুর হার ন্যূনতম তাদের মধ্যে কেরালা অন্যতম, যার সঙ্গে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনা করা চলে: যেখানে ভারতবর্ষের জাতীয় গড় ১,০০০ শিশু প্রতি ৪৪ জন সেখানে কেরালায় এই সংখ্যা ঈর্ষণীয় ভাবে ১,০০০ শিশু প্রতি মোটে ১৬ জন। তাই এটা অনেককেই হতবুদ্ধি করেছে যে পরিবর্তনশীল সরকারের চরম অবহেলার কারণে এমন একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে।
বিষয়টা আরও খারাপ হয়েছে যখন ভারতীয় কংগ্রেস পার্টির নের্তৃত্বাধীন বর্তমান ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের মন্ত্রীরা তাদের আজব বিবৃতিতে মায়েদের মদ্যপান আর শিশুদের ঠিকমত না খাওয়াকে দোষারোপ করেছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রী কে সি জোসেফ বিতর্কের সূত্রপাত করে বলেন যে আট্টাপাডির আদিবাসী এলাকায় নবজাতকদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হল আদিবাসী গর্ভবতী মায়েদের আরাক নামক সুরাপান।
এই প্রচলিত মদ্যপানের দাবীকে নাকচ করে , কোট্টাতরা সরকারী আদিবাসী বিশেষজ্ঞ হাসপাতালের প্রাক্তন প্রধান মেডিকেল অফিসার ও বর্তমানে পালাক্কড় জেলার চিকিৎসা বিভাগের উপ আধিকারিক প্রভু দাস, যিনি গত ১৫ বছরে আট্টাপাডির আদিবাসী এলাকার ৩০০০ শিশুর প্রসব করিয়েছেন, বলেছেন যে তিনি কোন গর্ভবতী মাকে মদ্যপান করতে দেখেননি।
সংবাদ মাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে এই পরিস্থিতিকে তুলে ধরার চেষ্টা সত্ত্বেও সরকারের উদাসীনতা অব্যাহত থাকায় সামাজিক সংবাদ মাধ্যমে জনগণের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।
তুস্কর কোমবানস, একজন ব্লগার ও গুগল প্লাসের নিয়মিত ব্যবহারকারী আট্টাপাডির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে লিখেছেন:
#ATTAPPADY ഇക്കഴിഞ്ഞ ഒന്നര വര്ഷം കൊണ്ട് മരിച്ചു വീണത് 52 കുഞ്ഞുങ്ങള്. കഴിഞ്ഞ ബുധനാഴ്ച മാത്രം രണ്ടു ശിശു മരണങ്ങള്. മതിയായ ഡോക്ടര്മാര് ഇല്ലാത്തത് കാരണം രോഗികളെ കോഴിക്കോട്ട് ഗവ. മെഡിക്കല് കോളെജിലേയ്ക്ക് കൊണ്ടുപോകേണ്ടി വരുന്ന ഇവിടുന്ന് അവശരായ രോഗികളെ കൊണ്ടുപോകുന്ന വഴിയില് ആംബുലന്സ് പണി മുടക്കി വഴിയില് കിടന്ന് പലരും മരിയ്ക്കുന്നതും നിത്യ സംഭവം. സ്പെഷലിസ്റ്റ് ഡോക്ടര് ആയി ഇവിടെ ആകെ ഒരു ഗൈനക്കോളജിസ്റ്റ് മാത്രമേ ഉള്ളൂ. ഇവിടുത്തെ നിരക്ഷര-ദരിദ്ര നിത്യപട്ടിണിക്കാരുടെ പ്രധാന ആശ്രയമായ കോട്ടത്തറ ഗവ. ട്രൈബല് ആശുപത്രിയില് ഉപയോഗിയ്ക്കുന്നത് ഭവാനിപ്പുഴയില് നിന്ന് നേരിട്ട് പമ്പ് ചെയ്ത് എടുക്കുന്ന കലക്ക വെള്ളമാണ്. ആശുപത്രിയ്ക്ക് വേണ്ടി ശുദ്ധജലം ലഭ്യമാക്കാന് മുറവിളി തുടങ്ങിയിട്ട് കാലം ഏറെയായെങ്കിലും നാളിതുവരെയായി ജലം ശുദ്ധീകരിയ്ക്കാനോ, പാക്ക് ചെയ്ത ശുദ്ധജലം ലഭ്യമാക്കാനോ വേണ്ട യാതൊരു നടപടികളും സര്ക്കാറിന്റെ പക്ഷത്ത് നിന്ന് ഉണ്ടായിട്ടുമില്ല.
গত দেড় বছরে ৫২ জন শিশু মারা গেছে। চিকিৎসকের অভাবে রুগীদের নিকটস্থ কোজিকোড মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। তবু যানবাহনের অত্যাধিক ভিড়ে বহু রোগী রাস্তাতেই প্রাণ হারান। আট্টাপাডি এলাকায় একজনই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন যিনি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। বেশীর ভাগ হতদরিদ্র লোকেরা ভীষণভাবে দূষিত বভানী নদীর জল ব্যবহার করে। এমনকি হাসপাতালেও ওই একই জল যায়। সরকার এই অবস্থার উন্নতির জন্য কিছুই করেনি।
আরেকজন গুগল প্লাস-এর ব্যবহারকারী, শ্রীকান্ত নাইয়ার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে লজ্জিত। তিনি কেরালার বহু প্রশংসিত উন্নয়ন কাঠামোকে পরিহাস করে বলেছেন :
ചർച്ചകൾ ഇങ്ങനെ നീണ്ടു പോകാൻ തന്നെയാണ് സാധ്യത , വിദേശ രാജ്യങ്ങൾക്ക് ഒപ്പം ആരോഗ്യ രംഗത്ത് മികവു കാട്ടിയ കേരളത്തിൽ 36 കുട്ടികൾ പോഷക കുറവ് മൂലം മരിക്കുകയോ ?. ആയിരക്കണക്കിന് ഡോക്ടർമാർ ഉള്ള സംസ്ഥാനത്ത് ജോലി ചെയ്യാൻ ആളെ കിട്ടാതെ വരികയോ ?. കോടികൾ ഒഴുക്കുന്ന എമെർജിംഗ് കേരള ഉള്ള നാട്ടിൽ പട്ടിണിയോ ?. നാലാൾ അറിഞ്ഞാൽ കേരളത്തിന്റെ അന്തസ്സ് എവിടെ പോകും ?. ജീവന് വിലയില്ലാത്ത മുപ്പത്തിയാറ് കുട്ടികളെ ഓർത്ത് നാണം കൊണ്ട് തല താഴ്ന്നു പോകുന്നു എന്നതാണ് സത്യം.
আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি এই বিতর্কের কোন নিষ্পত্তি হবে না। আমরা একসময় উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে এক সারিতে ছিলাম আর এখন ছত্রিশটি শিশু অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছে। রাজ্যে হাজার হাজার ডাক্তার আছেন কিন্তু আট্টাপাডি এলাকায় কেউ কাজ করেন না। ইমারজিং কেরালার মত উন্নয়ন প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় মুদ্রা খরচ করা হচ্ছে তবু তীব্র ক্ষুধায় ধুঁকছে এই সব গ্রাম? আমি নিজে এই ভেবে লজ্জিত যে এই রাজ্যের কাছে ওই শিশুদের প্রাণের কোন দাম নেই।
কুঞ্জালি কে কে আট্টাপাডির সঙ্কট সম্বন্ধে একটি অনুরূপ পোস্টে প্রত্যুত্তর দিয়েছেন:
കേരളത്തിൽ അട്ടപ്പാടിയിൽ മരിക്കുന്നതിന്റെ അൻപതിരട്ടി ആളുകൾ വാഹനാപകടങ്ങളിൽ ഓരോ വർഷവും മരിക്കുന്നു, ആശുപത്രികളിൽ സൌകര്യങ്ങൾ ഇല്ലാത്തതിന്റെ പേരിൽ ശരിയായ ചികിത്സ കിട്ടാതെ മരിക്കുന്നു, കൊട്ടേഷൻ ടീമുകൾ ഒരു തെളിവും ബാക്കി വെക്കാതെ ആളുകളെ കൊല്ലുന്നു. ഇതിനെക്കുറിച്ചൊന്നും പറയാത്തതെന്തേ? ഒരു മനുഷ്യന്റെയും ജീവൻ മറ്റൊരാളുടെതിനേക്കാൾ മെച്ചമല്ല, മോശവുമല്ല. അതോ ഇതൊന്നും സർക്കാരിന്റെ ഉത്തരവാദിത്വം അല്ലേ?
അപ്പൊ നമ്മൾ ദീനാനുകമ്പൻ ആകണം എങ്കിൽ അട്ടപ്പാടിയെയും ആദിവാസിയെയും പറ്റി പറഞ്ഞു കരയണം, അതാണ്. വേറെ എന്തൊക്കെ വിഷയങ്ങൾ ഉണ്ടായാലും പുട്ടിന് പീര ഇടുന്ന പോലെ ഇടയ്ക്കിടെ അട്ടപ്പാടി, ആദിവാസി എന്നൊക്കെ പറഞ്ഞു കൊണ്ടേ ഇരിക്കണം.
বছরভর দুর্ঘটনা ও অন্যান্য ভাবে বহু, প্রায় ৫০ গুণ বেশী মৃত্যু ঘটছে যা আট্টাপাডির থেকে অনেক বেশী শোচনীয়। হাসপাতালে রুগীরা অবহেলার জন্য মারা যাচ্ছে, ঋণ মাফিয়ারা বন্ধকের জন্য লোক খুন করছে। কেন কেউ এই সব মৃত্যু নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না? কোন মৃত্যুই অন্য কোন মৃত্যু থেকে ভাল বা খারাপ হয় না। এগুলোও কি সরকারের দায়িত্ব নয়? তার মানে সহানুভূতি পাওয়ার জন্য এখন আমাদের আট্টাপাডির আদিবাসী মানুষদের জন্য কিছু কুম্ভীরাশ্রু ফেলতে হবে। আর এই জন্যই অন্য অনেক কিছু ঘটা সত্ত্বেও সবাই এই একটা বিষয় নিয়েই বার বার বলে যাচ্ছে।
রামচন্দ্রন ভেট্টীক্কাট জনসাধারণের নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে চিন্তিত হয়ে লিখেছেন:
അട്ടപ്പാടിയിലെ മരിച്ച് വീണ കുഞ്ഞുളെ അപഹസിച്ച് കൊണ്ട് ഒരു ഭരണാധികാരി നടത്തിയ പരാമർശം ഒന്ന് മതിയായിരുന്നു തെരുവുകൾ കത്തിയമരാൻ. അവനവന്റെ ജാതിയിലും മതത്തിലും രാഷ്ട്രീയത്തിലും സവർണ്ണത നടിക്കുന്ന ഒരു ജനതയിൽ നിന്ന് ദളിതരുടേയും ആദിവാസികളുടേയും പ്രശ്നങ്ങളിൽ അങ്ങനൊന്ന് പ്രതീക്ഷിക്കാനാവില്ല തന്നെ.
কেরালায় জন রোষ সৃষ্টির পেছনে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া বিবৃতিতে আট্টাপাডির শিশুদের নিন্দা করাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু লোকে এখন শুধু ওদের জাত, ধর্ম আর দলীয় রাজনীতি নিয়ে চিন্তিত। আদিবাসী জনসমষ্টি নিয়ে কেউ মাথাও ঘামাচ্ছে না।
সাজিত এন নামে এক উদ্যোগপতি সবার মনে যে প্রশ্নটা জাগছে সেটা জিজ্ঞাসা করেছেন:
Kerala tops the India human development index .. but death and malnutrition stalk the state's tribal block. http://t.co/k9lTfhK2nm
— Sajith N (@playandthink) July 8, 2013
কেরালা ভারতীয় জন উন্নয়ন সূচকে শীর্ষ স্থানে আছে .. কিন্তু মৃত্যু আর অপুষ্টি রাজ্যের আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে তাড়া করে ফিরছে।
সাংবাদিক বিজু গোভিন্দ সরকারের আচরণ সম্পর্কে বলেছেন:
Successive govts both Congress & CPM led coalitions in Kerala have exploited poor tribals whether in Attappady or Wayanad.
— biju govind (@bijugovind) July 2, 2013
ধারাবাহিক ভাবে কংগ্রেস আর সি পি এম নেতৃত্বাধীন জোট, দুই সরকারই কেরালার দরিদ্র আদিবাসীদের শোষণ করেছে, সে আট্টাপাডিতে হোক বা ওয়ায়নাডে।
একটা দেশের জন্য প্রয়োজন উন্নয়ন ও পরিকাঠামো। কিন্তু সেটা যদি সামাজিক উন্নয়নের প্রাথমিক বিষয়গুলো যেমন মহিলা ও শিশু এবং মুল্যবান আদিবাসী জনসংখ্যার একটা পুরো সম্প্রদায়ের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া সম্পর্কে উদাসীন হয় তাহলে সেটা এই হারিয়ে যাওয়া প্রজন্মের ক্ষতিপূরণ কিভাবে করবে?