ইসলামাবাদ এবং চারটি প্রদেশের ৪১ টি জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদীয় আসনের জন্য পাকিস্তানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে বেশ কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলমান এই উপনির্বাচনে অনেক এলাকাতেই নারী ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে।
গত মে মাসে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সাধারন নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের অভিভূত জনসমাগম ছিল সত্যিকার অর্থে উৎসাহব্যঞ্জক দৃশ্য। এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর জনগনের বিশ্বাস পুনরায় নিশ্চিত করেছে। যাই হোক, সর্বোপরি ভোটকেন্দ্রে বরং নারীদের সমাগম ছিল অন্তহীন। বিভিন্ন এলাকার রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ।
চলতি বিশেষ নির্বাচনের সময়ও একই ধারা দূর থেকে দেখে বোঝা যেতে পারে। ভারতীয় সংবাদ পোর্টাল নিটিসেন্ট্রালের মতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) হুঁশিয়ারি উচ্চারন করেছে। খায়বার-পাখতুনখোয়ায় অবস্থিত হাঙ্গু অঞ্চলের নারীদের অপহরণ বা হত্যা করা হবে, যদি তাঁরা ভোট দিতে যায়। অনলাইন সংবাদ পোর্টাল নিউজ পাকিস্তান রিপোর্ট করেছে খায়বার-পাখতুনখোয়ায় অবস্থিত নওশেহরা জেলার কিছু কিছু অংশে এবং পাঞ্জাবের ফালিয়াতে আজ ভোট গ্রহনের সময় রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় দলগুলো নারীদের ভোট দিতে বাঁধা দিয়েছে।
পাকভোট নামের উপনির্বাচনের স্বচ্ছতা পর্যবেক্ষণকারী একটি প্রজেক্ট ২২ আগস্ট, ২০১৩ তারিখে টুইট করেছেঃBannu PK-70: There are rumours of an agreement between contesting candidates in Mardan on not allowing women to come out and vote. #PakVotes
— PakVotes (@PakVotes) August 22, 2013
বান্নুপিকে-৭০: মারদানে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মাঝে নারীদের বাইরে বের হতে এবং ভোট দিতে অনুমোদন না দেয়ার একটি চুক্তি হয়েছে বলে গুজব রটেছে। #পাকভোটস
সুশীল সমাজের একজন সুপরিচিত সক্রিয় কর্মী মারভি সারমেদ নারীদের ভোট কেন্দ্রে বাঁধা দেওয়া হয়েছে এমন অনেক এলাকার কথাই উল্লেখ করেছেনঃ
Women barred from voting in #Hafizabad#Mardan#Hangu#Noashera#Mianwali#MandiBahauddin#Phalia#LakkiMarwat As of 3:40 pm Aug 22
— Marvi Sirmed (@marvisirmed) August 22, 2013
#হাফিজাবাদ #মারদান #হাঙ্গু #নওশেহরা #মিয়ানওয়ালি #মান্দিবাহাউদ্দিন #ফালিয়া #লাক্কিমারওয়াত ইত্যাদি অঞ্চলে নারীদের ২২ আগস্ট দুপুর ৩ টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ভোট প্রদানে বাঁধা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো লক্ষ্য করেছেনঃ
All the constituencies where women have been barred from voting are in either #Punjab or #KhyberPakhtunkhwa
— Marvi Sirmed (@marvisirmed) August 22, 2013
নারীদের ভোট প্রদানে বাঁধা দেওয়া হয়েছে যেসব নির্বাচন কেন্দ্রে তাঁর সবগুলো হয় #পাঞ্জাব নয়তো #খায়বারপাখতুনখোয়া – তে অবস্থিত।
সানাম জাং নামের একজন ভিজে নির্দিষ্ট করে করাচীর এনএ-২৫৪ নির্বাচনকেন্দ্র এবং সেখানে মুহাজির কওমি আন্দোলন (এমকিউএম) রাজনৈতিক দলের কথা উদ্ধৃতি দিয়েছেনঃ
There is no Diif btw Taliban & Mqm (Altaf group) in NA 254 Karachi women are not been allowed to vote …#MQM stopping women
— Sanam Jung (@VJ_Sanam) August 22, 2013
করাচীর এনএ ২৫৪ নির্বাচন কেন্দ্রে যেখানে নারীদের ভোট প্রদানে অনুমোদন নেই সেখানে তালিবান এবং এমকিউএম (আলতাফ গ্রুপ) – এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই…#এমকিউএম নারীদের প্রতিহত করছে
পাক ভোটসের একটি মাঠ পর্যবেক্ষণে মারদানের একটি নির্দিষ্ট নির্বাচন কেন্দ্রের এজেন্টদের মধ্যকার একটি যৌথ চুক্তি পাওয়া গেছে। চুক্তিটিতে বলা হয়েছে যে, চুক্তিতে উল্লেখিত নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে নারীদের ভোট দিতে দেওয়া হবে না। চুক্তিপত্রটির একটি ছবি নিচে পোস্ট করা হলঃ
নথিপত্রটি অনুবাদ করলে দাড়ায়ঃ “সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহ বাট খেল এবং উমারাবাদের তিনজন এজেন্ট যৌথভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে নারীরা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয়া হবে না এবং এ বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কেউ কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন না”।
প্রার্থী | এজেন্ট | স্বাক্ষর |
জামশেদ খান মাহমান্দ | আমজাদ আলী | <স্বাক্ষরিত> |
জাকাউল্লাহ খান | ক্বারি ফরমান | <স্বাক্ষরিত> |
ফজলে রাব্বাই এডভোকেট | ইবন –এ-আমিন | <স্বাক্ষরিত> |
কাগজটি পরে ২২ আগস্ট ২০১৩ তারিখে, প্রিজাইডিং অফিসার বশির আহমেদ স্বাক্ষর করেন।
পাকিস্তানের শহুরে এলাকাগুলোতে এর কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে। সেখানে অনেক নারী উপনির্বাচনের সময় প্রথম বারের মতো ভোট দিলেন। সাধারন নির্বাচনগুলোর সময়ও অনেকটা এ ধরনের চিত্র দেখা গেছে।
শীর্ষস্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলের উপস্থাপিকা আসমা সিরাজি সত্য প্রকাশ করে বলেছেনঃ
I have polled my vote for the first time in my life:)
— Asma Shirazi (@asmashirazi) August 22, 2013
আমি এই প্রথম আমার জীবনে আমার ভোট প্রদান করেছি ঃ)
যদিও সাধারন নির্বাচনের সময় অনেক এলাকাতে গত বারের চেয়ে নারী ভোটারের সমাগম অনেক ভালো ছিল এবং সর্বোপরি নারীদের সমাগম নিজে থেকেই একটি খোঁটাগেঁথে দিয়েছে। পাঞ্জাব এবং খায়বারপাখতুনখোয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নারী ভোটারদের ভোট প্রদান করতে বাঁধা দেয়ার এই প্রচলন এখনও চলছে। বিশেষকরে এই অঞ্চলগুলোতে আসলেই ধর্মীয় রক্ষণশীলতার প্রভাব খুব বেশি।
দুঃখের বিষয় সাধারন নির্বাচনের সময় কর্তৃপক্ষ কখনই এসব অনিয়ম নিবন্ধিত করেনি। কিন্তু ইসিপিকে ধন্যবাদ যে, এবার প্রতিষ্ঠানটি সে ধরনের একটি দৃষ্টান্তকারী নোটিশ প্রদান করেছে। যেসব আসনে মহিলা ভোটারদের ভোট দানে বাঁধা দেওয়া হয়েছে সেখানে তাঁরা পুনরায় ভোটগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে।