আরো বেশী পরিমাণে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের দিকে এগিয়ে গেছে থাইল্যান্ড – এবার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এই সময়ের জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন “লাইন”কে।
প্রযুক্তি অপরাধ দমন বিভাগ (টিসিএসডি) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, জাতীয় নিরাপত্তার “হুমকি” দূর করার জন্য অন্যান্য সামাজিক মিডিয়া সাইট যেমন ফেসবুক, ইউটিউব এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো “লাইন” এর উপর কথোপকথন “নিরীক্ষণ” এর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
টিসিএসডি যুক্তি দেখিয়েছেঃ
থাইল্যান্ডের আদেশ, নিরাপত্তা এবং নৈতিকতার সুরক্ষা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
অনলাইনে কথোপকথন পর্যবেক্ষণ করলে দেশের নাগরিকদের অধিকার এবং গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয় না বলে সরকার বিশ্বাস করে।
কেউ যাতে সাইবার অপরাধ আইন লঙ্ঘন করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকারমূলক কাজ হবে এবং আমরা লাইন অপারেটরদের কাছ থেকে তার অনুমতি পেয়েছি।
জাপান ভিত্তিক লাইন কর্পোরেশন এই বিষয়ে বর্তমানে থাই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে। যদি সব ঠিক থাকে (থাই সরকারের জন্য), তাহলে এটি থাইল্যান্ডের বর্তমান ১৫০ লক্ষ লাইন ব্যবহারকারীদের উপর প্রভাব ফেলবে। টিসিএসডি আশা করছে, অপরাধমূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘নজরদারির প্রথম পংক্তি’ হতে লাইন রাজি হবে:
আমরা চাই লাইন কর্পোরেশন হবে আমাদের নজরদারির প্রথম পংক্তি এবং তাদের অ্যাপ্লিকেশন এর উপর যেকোনো ‘সন্দেহজনক’ কার্যকলাপ আমাদের কাছে তাঁরা পাঠাবে।
লাইন অন্যান্য ইন্টারনেট কোম্পানী যেমন গুগুল, টুইটার এবং ইউটিউব-এর পদক্ষেপ অনুসরণ করতে পছন্দ করে, যেগুলো রাজতন্ত্রের জন্য মানহানি কর বিষয়বস্তু ইন্টারনেট থেকে সরানোর জন্য থাই সরকারের অনুরোধ প্রায়ই মেনে চলে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের দ্বারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ২০০৭ সালের কম্পিউটার সংক্রান্ত অপরাধ আইনের আওতায় যেকোন তৃতীয় পক্ষকে এখন ইন্টারনেট লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করা সম্ভব হয়েছে।
সরকারের ইন্টারনেট স্বাধীনতা দমন করার পুনর্নবীকরণ প্রচেষ্টাকে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় থাই জনগণ অত্যাচার হিসেবে গণ্য করছে। থাই নেটিজেন নেটওয়ার্ক নামের একটি ইন্টারনেট এডভোকেসি গ্রুপ, ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য এই আইনের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেছে। থাইল্যান্ডের আইনজীবী পরিষদও এই নতুন নজরদারি প্রচেষ্টার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
সরকার যে সংবিধান লঙ্ঘন করছে না তা নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, রাষ্ট্র সংস্থা অবশ্যই ব্যক্তির কথা এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবে।
একইভাবে অনলাইনের নেট ব্যবহারকারীরা সরকারের সাম্প্রতিক এই নজরদারি প্রকল্প দ্বারা বিচলিত। প্যান্টিপ নামের একটি জনপ্রিয় ওয়েব বোর্ডে ভালেন্তিকা যুক্তি দেখিয়েছেন, লাইন বা সরকারের দ্বারা আলাপচারিতা ফিল্টারের যেকোনো ধরনের প্রচেষ্টা গোপনীয়তা লঙ্ঘন করবে।
দিনের শেষে, দুই ব্যক্তির মধ্যে লাইন কথোপকথনের পর্যবেক্ষণ করা ফোনালাপ পর্যবেক্ষণ করা থেকে মোটেই ভিন্ন নয়। কোন উন্নত দেশই এটা মানবে না।
কোহ হ্যায় লোক সং সুক, কাপুক ওয়েব বোর্ডে লিখেছেন:
এই সরকার প্রতিদিন অদ্ভুত আচরণ করছে। তারা নিজেদের একটি গণতান্ত্রিক সরকার বলে দাবী করে কিন্তু তাদের আচরণ স্বৈরশাসকদের মত। আমরা অবশ্যই এটাকে প্রতিহত করব।
নিডার একটি সাম্প্রতিক জরিপে লাইন নিরীক্ষণের সরকারের এই নতুন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিরোধীতা দেখা গেছে। ৭৪ শতাংশের কিছু বেশি উত্তরদাতা এই নিরীক্ষার সঙ্গে মতানৈক্য প্রকাশ করেছেন এবং তাঁরা মনে করে যে, সরকার জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা তাঁদের বাক স্বাধীনতাকে রহিত করতে চাইছে।
তথ্য নিয়ন্ত্রণ এবং ইন্টারনেট নজরদারির এই ইস্যুটি প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনেওয়ত্রার বিরুদ্ধে উঠেছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করতে সরকারের সর্বশেষ পদক্ষেপটির বিরুদ্ধে দেশের জনগণের মনোভাব এই মুহূর্তে সীমিত আকারে থাকলেও যেকোন মুহূর্তে এই আন্দোলন গতি লাভ করতে পারে।