ব্যবসাসফল সিনেমা ‘টাইনি টাইমস’-এ চীনের প্রজন্মের দ্বন্দ্ব ফুটে উঠেছে

চলতি গ্রীষ্মেই মুক্তি পেয়েছে ব্যবসাসফল সিনেমা ‘টাইনি টাইমস‘। চার তরুণীর জীবনের নানা ঘটনাই সিনেমার মূল উপজীব্য। তাদের বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের পণ্য, ডিজাইনার পোশাক, জমকালো জীবনধারণ চীনের তরুণদের ভোগবাদিতার বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

গাও জিংমিংয়ের একটি ধারাবাহিক উপন্যাস অবলম্বনে টাইনি টাইমস বানানো হয়েছে। মুক্তি প্রাপ্তির দিনেই এটি চীনে বক্স অফিস রেকর্ড গড়ে। তাছাড়া ২৭ জুন ২০১৩ তারিখে মুক্তি পাওয়ার সময় থেকেই এটি টপ চার্টে রয়েছে। এই সিনেমার সিকুয়েল আগামী ডিসেম্বর মুক্তি পাবে। তবে চীনে ৯ আগস্ট মুক্তি পাবার কথা রয়েছে।

কলেজ পড়ুয়া চার তরুণীর জীবনই সিনেমায় উপজীব্য হয়ে এসেছে। এরা চারজনই স্কুল জীবন থেকেই পরস্পরের সেরা বন্ধু। সিনেমা সফল করে তুলতে বেছে নেয়া হয়েছে ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের সম্পর্ককে যা আমেরিকার টিভি সিরিজ সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি এবং গসিপ গার্ল অথবা দ্য ডেভিল ওয়ারস প্রাডা সিনেমার কথা মনে করিয়ে দেয়।

Tiny Times movie poster. via Wikipedia, Fair Use.

টাইনি টাইমস সিনেমার পোস্টার। ছবি উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া।

সিনেমাটি পরিচালনার পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন গাও জিংমিং। উল্লেখ্য, গাও জিংমিং চীনের সবচে’ বিত্তবান লেখক। তিনি দেশটির তরুণ প্রজন্ম যারা ‘মি জেনারেশন’ বলে পরিচিত তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। এই প্রজন্মের সবারই জন্ম ১৯৮০ সালের পরে। আর বেড়ে ওঠা ৯০ এর দশকে যখন চীনের ভোগবাদী সমাজ বেড়ে উঠছে। সে কারণে তার বেশিরভাগ উপন্যাস তরুণ প্রজন্মের গল্পগাঁথা। গাও জিংমিংয়ের জন্ম ১৯৮৩ সালে একটি স্বচ্ছল পরিবারে। তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য সিটি অব ফ্যান্টাসিজ’ দিয়ে সবার মনোযোগ কাড়েন। সে সময়ে তার বয়স ছিল ২০ বছর। তারপর তার আর পড়াশোনা এগোয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাম কাটা পড়ে। তিনি প্রকাশনা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। গত বছর ফোর্বস-এর সেরা ধনী চীনা নাগরিকের তালিকায় তার নাম ওঠে। তার বার্ষিক আয় ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তিনি সবসময় আভিজাত্যময় জীবনযাপন করেন। কখনোই জনতার আলোচনায় থাকার সুযোগ পায়ে ঠেলে দেন না। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে গাও বলেছেন: “আপনি আপনার জন্য সমাজকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি সমাজের নিয়মের ওপর মাস্টারি করতে পারেন। এই নিয়মটা অন্যদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে পারেন।”

সিনেমাটি বক্স অফিস সফল হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক সমালোচনাও কুড়িয়েছে। মূলধারার মিডিয়া, প্রবীণ লেখককূল এবং অন্যান্য পরিচালকদের বেশিরভাগই নিন্দা করে বলেছেন, সিনেমায় গভীর কোনো বিষয় নেই, সবই ভোগবাদী সমাজের ফাঁপা উদযাপন।

জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক জিয়াও লিমিং (@周黎明) অভিযোগ করেছেন যে, সিনেমায় প্রাচুর্যের ছড়াছড়ি দেখানো হয়েছে:

该片对物欲和美色的炫耀完全是恶趣味的,它不像时尚杂志里的高档商品广告。广告需要刺激人们的购买欲望,它往往借用憧憬。而郭敬明对于富和美的观念,如同一个小时候挨过饿的人,长大后看到一桌子食品时垂涎欲滴,没有淡定或自发的快乐,只有病态的贪婪

আমি কোনোভাবেই এই সিনেমার পক্ষে দাঁড়াতে পারবো না। বাণিজ্যিক ফ্যাশন পত্রিকা বাদে ভোগের এমন সুন্দর কল্পনা আর কোথাও পাওয়া যায় না। গাও যে প্রাচুর্য আর সৌন্দর্য দেখান, তা স্বাস্থ্যকর নয়। তাদের দেখে মনে হবে, অনেক অভাবে ভুগে তারা আজ হঠাৎ-ই খাবার টেবিলের সামনে এসেছে। তাদের স্বত:স্ফূর্ত আনন্দে শান্তির ঘাটতি রয়েছে।

নাট্যকার মাগুয়াশিংহ্যাঙ (@鹦鹉史航) জিয়াওয়ের সাথে সুর মিলিয়েছেন এবং জনপ্রিয় আইডল অভিনেতাদের সমালোচনা করেছেন:

「小时代」有一点是对的,导演把关把得好,全片没出现一个演技派,大家水准一般齐…

দ্য টাইনি টাইমস সিনেমায় একটি জিনিসই শুধু ঠিক আছে- পরিচালক সিনেমায় সেইসব অভিনেতাদের নিয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রকৃত অভিনয় দক্ষতা খুব কমই আছে।

গাও জিংমিং এবং সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভক্তদের কাছ থেকে জিয়াও এবং মাগুয়াশিংহ্যাঙ দুজনই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। অনেকেই লিখেছেন সমালোচকদের বয়স হয়ে গেছে। তারা তরুণ প্রজন্মের বিষয়-আশয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। পরিচালক নিং চাইশেন (@宁财神) ‘পুরোনো ধ্যান-ধারনা'র সমালোচকদের সমালোচনা করে লিখেছেন:

小时代是类型清晰的小鸡电影,好歹能伺候人家自己的观众群。我这次生气的只是周黎明老高刘春杨早史航那些八十多岁的老年人,有愤怒感很正常,但是,没想明白就上战场,胡喷一气,没干掉人家,反倒惹一身骚,所有烦恼都是自找的!

টাইনি টাইমস হলো সেই ধরনের আদর্শ ড্রামা যা তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করে বানানো হয়েছে। আমি জিয়াও লিমিং এবং মাগুয়াশিংহ্যাঙয়ের মতো বুড়োদের ওপর ক্ষুদ্ধ হয়েছি। আমি তাদের ক্রোধটা বুঝতে পারিনি। তবে এটা তাদের তৈরী ফাঁদ যে, যেখানে অবস্থা না বুঝেই যুদ্ধে যোগদান করা আর নাজেহাল হওয়া।

সিনেমার বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করে সোশ্যাল মিডিয়ার বিতর্ককে আরো উসকে দেয় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত পত্রিকা পিপলস ডেইলি। তবে সিনেমা নিয়ে তাদের সমালোচনা ঠিক ছিল না। তখন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এই পত্রিকাটি দর্শকদের মনোযোগ সিনেমা থেকে মতাদর্শ নিয়ন্ত্রণের দিকে নিয়ে যায়:

@北島學長 虽然还没看这个电影,估计也不会喜欢,但人民日报这样上纲上线未免太小题大做了,各种主义并不是因为这个电影才出现、形成的,把人文建设的责任推给《小时代》,不如思考一下这些社会问题出现的根本原因。

@”Senior student Beidao”যদিও আমি সিনেমাটি দেখিনি। দেখলে ভালো লাগবে বলেও মনে হচ্ছে না। পিপলস ডেইলি হৈ চৈ করেই এর দাম বাড়িয়ে দিলো। সিনেমা থেকে ভোগবাদীতাকে ছেঁটে ফেলা সম্ভব নয়। এর চেয়ে সিনেমায় যে মানবতা নির্মাণের দায়িত্ব থাকে, এই সামাজিক প্রপঞ্চের পেছনে প্রাথমিক কারণ হিসেবে পিপলস ডেইলি যদি এটা হাজির করতো তাহলে ভালো হতো।

@朱学东 不允许小时代只讲大时代的时代,一定是可怕的园艺时代。在园艺社会,园艺师永远正确,只有它们才配掌握了草木的生命,园艺社会是人类的大敌。

Zhu Xuedong: একটা সময়ে বিশেষ করে লালনপালনের সময়ে “ক্ষুদ্র সময়ের” পরিবর্তে “বৃহৎ সময়”-কে অনুমতি প্রদান করতে হয়। [সময়ের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হবে যদি একজন ব্যক্তির লালনপালন প্রক্রিয়া (হর্টিকালচার এজ) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও নির্দেশিত হয়। [এই বিষয়টি ব্যাখ্যার জন্য ‘অথরিটেটিভ ক্যালেক্টিভিজম’ শব্দবন্ধটি যুক্তিযুক্ত] হর্টিকালচার সমাজে বাগানের মালিই সব। বাগানের গাছ ও ঘাস কতদিন বাঁচবে, কতটুকু বড় হবে তিনি তা নিয়ন্ত্রণ করেন। বাগানের মতো করে গড়ে তোলা সমাজ মানুষের শত্রু।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .