অনলাইনে বোমা হামলার হুমকি দেওয়ায় স্পষ্টভাষী চীনা গায়িকা অন্তরীণ

অনলাইনে সরকারি ভবন উড়িয়ে দেওয়ার কথা লিখায় চীনা পুলিশ একজন সক্রিয়বাদী গায়িকাকে আটক করেছে।

গত ২০ জুলাই ২০১৩ তারিখে বেইজিং বিমানবন্দরে বোমা স্থাপনের পরপরই উ হংফি নামের একজন সাবেক সাংবাদিক ও বেইজিং-এ বসবাসরত এই গায়িকা চীনের সবচাইতে জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং সাইট সিনা ওয়েবুতে জানায় যে তিনি স্থানীয় সরকারের দুটি বিভাগ উড়িয়ে দিতে চান। এর দুদিন পর বেইজিং পুলিশ “ঝামেলা তৈরীর” অভিযোগে তাকে অন্তরীণ করে।

২৬ জুলাই তারিখে বেইজিং পুলিশ নিশ্চিত করে যে মিথ্যা সন্ত্রাসী হুমকি প্রদান করায় উ কে অন্তরীণ রাখা হয়েছে, এ অপরাধে তাঁর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। অনেকে মনে করেন এই হুমকি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, কিন্তু তারা সন্দেহ করেন যে উ-এর এই আটকাদেশ সরকারের সমালোচনার রাজনৈতিক প্রতিফল এবং পুলিশ তাকে উদাহরণ হিসেবে অন্যদের সামনে উপস্থাপন করতে চাচ্ছে।

উ-এর পোস্টটি সন্ত্রাসী হুমকি হিসেবে বিবেচ্য কিনা তা নিয়ে সিনা উইবোতে উ-এর অন্তরীণ ব্যপক আলোচনার ঝড় তুলেছে।

Singer Wuzhongfei(pic from Sina Weibo)

গায়িকা উ ঝংফেই (ছবি সিনা উইবোর সৌজন্যে)

গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে জানা যায় ২৭,০০০ এরও বেশি অংশগ্রহণকারীর সিনা উইবোতে প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৮২ শতাংশ ভোটার মনে করেন উ এর বক্তব্য অসংগত হলেও তাকে ফৌজদারী অপরাধে শাস্তি প্রদান করা উচিত নয়।

অনেক আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবী যুক্তি দেখান যে উ এমন একটি অপরাধ করেছে যার কোন অস্তিত্ব নেই, অনেকে আবার সুন্দর সমাজের জন্য বাক স্বাধীনতার আহ্বান জানান। সাঙ্গহাই ভিত্তিক একজন আইনজীবী লিখেন:

不是是否同意的问题,根本不成立犯罪。

উ কে কারাগারে প্রেরণ করা উচিত কি উচিত নয় প্রশ্নটা সেটা নয়, বাস্তবতা হল অপরাধটির কোন অস্তিত্ব নেই।

অধ্যাপক ওয়াং কুয়ানজি অন্যান্য ব্লগার কর্তৃক একই ধরণের সহিংস ভাষ্য উদাহরণ হিসেবে আপলোড করেনঃ

吴虹飞如果要被判刑,那么下图这些公开威胁杀人的微博主该怎么处理呢?

উ হংফেই কে যদি শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে ওই সব ব্লগারদের কি হবে যারা প্রকাশ্যে মানুষকে হত্যার হুমকি দিয়েছে?

লেখক তিয়ানু লিখেন

女歌手吴虹飞被刑拘,给人的感觉就是他们现在特别恐惧,有种草木皆兵的感觉。联想起在一系列刑事案件和群体事件中他们的处理方法,给人的感觉他们是完全没有智慧,进退失据,手段简单粗暴。这种情况不改变,恐怕会使得官民对立更加严重。

গায়িকা উ হংফেই-এর আটকাদেশ জনগণকে [সরকার] এতটাই ভীত করে তুলে যে তারা মনে করে প্রত্যেকেই তাদের শত্রু। তারা অন্যান্য ফৌজদারী মামলা কিভাবে সামলায় সেটাই আমার মনে পড়ছে। তারা প্রজ্ঞাহীন, সম্পূর্ণরূপে সূত্রহীন এবং নির্মম। পরিস্থিতি না বদলালে সরকার এবং আমজনতার মধ্যে উদ্বেগ আরো বৃদ্ধি পাবে।

নর্থওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব পলিটিক্স এর অধ্যাপক কান হনগুগো বলেন সুন্দর সমাজের চাবিকাঠি হল বাকস্বাধীনতা:

没有言论自由,就不足以形成健康的公民社会土壤,就会导致病态的政府。事实上,政府并不能从滥用的严刑峻法中得到任何实际的好处。言论的自由开放与权力的节制审慎之间所形成的良性互动,才是政府和公民的最大福音。

সুন্দর নাগরিক সমাজের জন্য বাকস্বাধীনতা প্রয়োজন। বাকস্বাধীনতা হীনতা নির্জীব সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবে। আসলে আইনের অপব্যবহার করে সরকারের কোন লাভ হবে না।

বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ঝাং কুইয়ানফ্যান বিখ্যাত চীনা রাজনীতিবীদ এবং বুদ্ধিজীবী লুও লঙ্গজিকে উদ্ধৃত করেনঃ

“压迫言论自由的危险,比言论自由的危险更危险。”公民言论可能是理性平和的,也可能是激进极端的,甚至带有暴力恐吓的迹象,但是只要还有讨论和说服的空间,就不能动用国家机器压制言论,即便是以法律的名义。

বাকস্বাধীনতা দমনের চাইতেও বেশি খারাপ হল মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন। নাগরিকদের মন্তব্য হবে সুচিন্তিত ও যুক্তিসঙ্গত, কিংবা চরম ও গোঁড়ামিপূর্ণ, এমনকি তাতে সহিংস হুমকিও থাকতে পারে, কিন্তু যে পর্যন্ত আলাপ-আলোচনার সুযোগ থাকবে সে পর্যন্ত আপনি এমনকি আইনের দোহাই দিয়েও বাক স্বাধীনতা দমনের জন্য রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করতে পারেন না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .