সৌদি আটককৃতদের পরিবার কর্তৃক “তৃতীয় বন্দীদিবস” চিহ্নিত

সৌদি আরবে নিরপেক্ষ বিচার না পেয়ে গত কয়েক বছর ধরে কারাভোগ করা আটককৃতদের পরিবার তাদের প্রিয়জনদের নিয়ম বহির্ভূত আটকাবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে তৃতীয় আটক দিবস চিহ্নিত করেছে। নামহীন পক্ষ-সমর্থন গ্রুপ @ই৩টেকাল [গ্রেপ্তার] এবং @আলমোনাসেরন [সমর্থক] ৭ জুলাই দিবসটি পালন করেছে।

পৃথিবীতে যে সামান্য কয়েকটি দেশে স্বেচ্ছাচারী রাজতন্ত্র রয়েছে তার মধ্যে সৌদি আরব একটি এবং এখানে ৩০ হাজারেরও বেশী লোক নিয়ম বহির্ভূতভাবে আটকাবস্থায় থাকার মতো ধ্বংসাত্মক মানবাধিকারের রেকর্ড রয়েছে।

সমস্ত রাজ্যজুড়ে আটককৃতদের পরিবার তাদের আত্মীয়দের মুক্তি চেয়ে তাদের ছবি ও নিদর্শন ঝুলিয়েছে। জনগণকে কারনটি জানাতে তাঁরা ভিডিও তৈরি করেছে এবং প্রচারপত্র বিতরণ করেছে। প্রথম দ্বিতীয় বন্দী দিবসে তাঁরা যা করেনি এবার তাই করেছে। এবার সেতুগুলোতে যেন কেউ কোন নিদর্শন ঝোলাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা বাহিনী সেতুগুলো ঘিরে রেখেছে। এছাড়াও যেসব দেয়ালে বন্দীদের মুক্তি চেয়ে কোন ধরনের দেয়াল লেখনী ছিল সেসব জায়গা তৎক্ষণাৎ রঙ করে ফেলা হয়েছে।

আব্দুল্লাহ আল-আয়াফের পরিবারটি সবচেয়ে বেশী মনযোগ আকর্ষণ করেছে। আল-আয়াফ বর্তমানে ছয় বছর ধরে জেলে আছেন। তার বিচার হয়েছে এবং তিনি নিরপরাধ বলে প্রমানিত হয়েছে, তথাপি তাকে এখনও জেলে বন্দী রাখা হয়েছে। কাসিমে তাদের বাড়ির বাইরে তাঁর ছবি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

image

পুলিশ এবং মাবাহিথের [গোপন পুলিশ] গাড়ি শীঘ্রই বাড়িটি ঘিরে ফেলে। দিনটিতে আল-আয়াফের স্ত্রী মাহা আল-ধুহাইয়ানের সাথে একজন মাবাহিথ সদস্য কথা বলেন এবং তাকে অভিশাপ দেন। এরপর একজন পুলিশ অফিসার ছবিটি নামিয়ে ফেলতে চেয়ে তাঁর সাথে কথা বলেন। তিনি পুলিশ অফিসারটিকে মাবাহিথ সদস্যের কথা জানান।

অফিসারটি উত্তরে বলেছেন, “এমি মনে করি না, নিরাপত্তা বাহিনীর কোন সদস্য এ কথা বলবে”। তিনি আরো বলেন, “আমরা প্রথমেই এখানে আসার একমাত্র কারন হচ্ছে এই নিদর্শনটি, ভালো হয় আপনারা যদি এটি নামিয়ে ফেলেন”।

তাঁর স্ত্রী তাকে বলেছেন, “নিদর্শনটির অর্থ আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই। আমার কাছে আপনাদের গুণ্ডা পাঠাবেন না। নিদর্শনটি থাকবে”।

আল-আয়াফ ও আল-ধুহাইয়ানের ছেলে ইয়াসের তাদের কথোপকথনটি ভিডিও করেন। অফিসারটি ইয়াসেরকে জিজ্ঞেস করেছেন যে তিনি ভিডিও করছেন কিনা এবং ইয়াসের উত্তর দিলেন, “হ্যা, আমি ভিডিও করছি”। অফিসারটি যখন তৎক্ষণাৎ একটি ফোন করেন তখন তাঁর মা অফিসারকে বলেন, “আপনি কি আমার ছেলার সম্পর্কে কথা বলছেন ? তাঁর সম্পর্কে অভিযোগ করবেন না। আমি তাকে ভিডিও করতে বলেছি”।

http://www.youtube.com/watch?gl=US&hl=en&client=mv-google&v=eKDgJGYZdkc

ইউটিউবে ভিডিওটি আপলোড করার সাথে সাথে তা দ্রুত ছড়িয়ে পরে। সৌদি টুইটগুলো মিথ্যা অপবাদের জন্য মাবাহিথ সদস্যকে কৈফিয়ত দেওয়ার জন্য বাধ্য করতে চেয়ে একটি হ্যাশট্যাগ খুলেছে।

ইয়াসেরের ভাই সালেহকে পুলিশ অফিসাররা ভোরবেলা হুমকি দিয়ে বলেছে, যদি সে ইয়াসেরের আইডি তাদেরকে না দেয়, তবে তাঁরা তাঁর গাড়িগুলো গুড়িয়ে দিবে।

মাহা আল-ধুহাইয়ান টুইট করেছেনঃ

@cczz1000: الناس في صلاة الفجر تذكر الله ورجال الشرطة عند بابنا يطالبون تسليم ابنائي لهم والا سيعدم سيارتنا ..اي امن يتحدثون عنه حسبي الله وكفى

যখন লোকেরা ভোরের নামাজ পড়ছে, তখন পুলিশ আমার বাসায় এসে চাচ্ছে, আমি যেন আমার ছেলেদের ধরিয়ে দেই, না হয় তাঁরা আমাদের গাড়ি গুড়িয়ে দিবে। তাঁরা কোন নিরাপত্তার কথা বলছে ?

এরপরের দিন, ৮ জুলাই পুলিশ পুনরায় বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং দাবি করে, তাদের যে ছেলেটি ভিডিওটি ধারণ করেছে, তাকে যেন পরিবারটি ধরিয়ে দেয়। একই সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা পরিবারটিকে ফোন করে ভিডিওটি মুছে ফেলতে বলে এবং তা করলে তাঁরা যা চাইবে তাই দেওয়া হবে বলে প্রতিজ্ঞা করে।

শেষবার আমি যখন ইয়াসেরের সাথে কথা বলেছি, তখন সে আমাকে বলেছেঃ

“আগে হোক আর পরে হোক, আমার বাবা মুক্ত হবেন। আমি এটা আমার বাবার জন্য করছি না। আমি কোন নায়ক নই, কিন্তু পথটি অন্ধকার। তাই আমরা যদি আলো না জ্বালি, তবে পথটিকে আলোকিত করবে কারা ?”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .