মিশরঃ তাহরির স্কয়ারে যৌন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বর্ষপূর্তিতে, তাঁর শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে কয়েক লক্ষ মিশরিয় নাগরিক বিভিন্ন গণ র‍্যালিতে অংশ নেয়। মিশরিয় বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল কায়রোর তাহরির স্কয়ার আবার পূর্ণ হতে শুরু করে। সেখানে যৌন হয়রানি দমন গ্রুপগুলো নারী প্রতিবাদকারীদের প্রতি যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সচল হয়ে উঠেছে। আগের গণ র‍্যালিগুলোতে, বিশেষকরে তাহরির স্কয়ারে, দাঙ্গাকারী জনতার দ্বারা নারীদের প্রতি যৌন আক্রমণ হতে দেখা যায়।

অপারেশন এ্যান্টি সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্ট/ এ্যাসল্ট (অপএ্যান্টএসএইচ) – এর অনুমোদিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৩০ জুন তারিখে অর্থাৎ প্রতিবাদের প্রথম দিনেই ৪৬ টি প্রচন্ড যৌন আক্রমনের ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট করা হয়েছে। ২০১২ সালের পর দাঙ্গাকারী জনতার দ্বারা যৌন আক্রমণের শিকার যারা, তাঁদের উদ্ধার করতে এবং সহিংসতার রিপোর্টের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অব্যবহিত পরে স্বাস্থ্য প্রতিবেদন প্রদান করতে অপএ্যান্টএসএইচ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক স্বার্থ অর্জনের জন্য নারীদের অধিকারের মিথ্যা উদ্বেগের সভাপতিত্বকে দায়ী করে ঐ ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় অপএ্যান্টএসএইচ সরকারকে দোষারোপ করেছে। তাঁরা আরো লিখেছেঃ

নারী প্রতিবাদকারীদের ওপর যৌন আক্রমণ নিয়ে আন্তরিকতা বৃদ্ধি হচ্ছে সাধারণভাবে সমাজ ও রাষ্ট্র, উভয়ের দ্বারা অপরাধ সাধন, নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার প্রতিফলন, যা সর্বসাধারণের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

হিউমেন রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) যৌন সহিংসতার দিকে সকল রাজনৈতিক দলের শৈথিল্যের নিন্দা করে একটি বক্তব্য প্রদান করেছে। এইচআরডব্লিউয়ের জো স্টোর্ক বলেছেন, “মিশরের নারীরা জনসম্মুখে প্রতিনিয়ত যেসব সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে সরকার এবং সকল রাজনৈতিক দলগুলো দৃঢ়ভাবে বাঁধা দানের ব্যর্থতার কারনেই তাহরির স্কয়ারে প্রতিবাদের সময় অনিয়ন্ত্রিত যৌন আক্রমণের ঘটনা ঘটছে, যা তাঁদের সকলের চোখের সামনে তুলে ধরছে”। তাঁরা আক্রমণের শিকার নারীদের সাক্ষ্য প্রমাণসহ “মিশরঃ যৌন সহিংসতার মহামারী” শিরোনামে একটি ভিডিও তৈরি করেছেন।

বিভিন্ন শাসনতন্ত্রের দ্বারা যৌন সহিংসতার সুব্যবস্থিত ব্যবহার সকলের সামনে তুলে ধরার একটি প্রচেষ্টাতেঃ সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, দ্য সুপ্রিম কাউন্সিল অব আর্মড ফোরসেস (এসসিএএফ) এবং দ্য মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিয়ে রাইটস গ্রুপ “সুব্যবস্থিত যৌন নির্যাতনঃ মোবারক এবং এসসিএএফ থেকে মুসলিম ব্রাদারহুড” শিরোনামে একটি ভিডিও তৈরি করেছে। রাইটস গ্রুপের একটি যৌথ লিখিত বিবৃতি অনুযায়ীঃ 

স্বীকারোক্তি অথবা তথ্য বের করে আনার লক্ষ্যে যৌন নির্যাতন করা হয়নি, বরং অপদস্থ করতে, ভয় দেখাতে এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের চুপ করাতে যৌন নির্যাতন করা হয়। নারী এবং পুরুষ, তরুণ অথবা বৃদ্ধের মাঝে ভেদাভেদ রেখে যৌন নির্যাতন করা হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় এটি সংঘটিত হয়েছে, দেশের জেল ও পুলিশ সেলের দেয়ালের ভিতরে এবং বাইরে উভয় জায়গায় এটি সংঘটিত হয়েছে। এমনকি হাই কোর্টের দালানের ভিতরেও যৌন নির্যাতন ঘটেছে। যেখানে আহমেদ তাহাকে ধর্ষন করা হয়েছে তা বিচারপতিদের থেকে সামান্য কয়েক মিটার দূরত্বে, যেখানে তাঁর অধিকারগুলো সুরক্ষিত থাকবে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যৌন নির্যাতনের রিপোর্টগুলো ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটিয়েছে। এ বিষয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর নীরব ভূমিকার প্রকাশ্য নিন্দা জানিয়েছে স্বক্রিয় প্রতিবাদকারীরা। রাজনৈতিক উদ্বেগ বাড়ার সাথে সাথে তাহরির স্কয়ারের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করতে এবং প্রতিবাদকারীদের অবৈধভাবে জাত বলে প্রমাণ করতে, কয়েকজন সদস্য এবং প্রতিবাদকারী যৌন আক্রমণের রিপোর্টগুলো ব্যবহার করেছে। তাহরিরে অংশগ্রহনের একটি আমন্ত্রনের উত্তরে দ্য মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন মুখপাত্র জেহাদ এল হাদ্দাদ বলেছেনঃ

@জেলহাদ্দাদঃ এটি একটি দয়া দেখানো যে #তাহরির স্কয়ার কতোটা নিচে নেমে গেছে। ৭টি গনধর্ষনের ঘটনা, কয়েক ডজন যৌন হয়রানি এবং চুরির ঘটনা, …

নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহনকে প্রতিহত করতে এবং নারীদের হয়রানি করতে গুন্ডা পাঠানো হয়েছে বলে কয়েকজন প্রতিবাদকারী দ্য মুসলিম ব্রাদারহুডকে সরাসরি দোষারোপ করেছে। অন্যান্যরা তাতে অসম্মতি প্রকাশ করে বিতর্ক করেছে যে সমস্যাটি আরো জটিল হয়ে যাচ্ছে। মোস্তফা বাহগাত ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদল এবং বিপ্লবী বাহিনী [আরবি], উভয়কে নির্দেশ করে তাঁর সমালোচনাপূর্ণ একটি নোট ফেসবুকে শেয়ার করেছেনঃ

لما حصلت حالات الاعتداء و الاغتصاب يوم 25 يناير اللي فات كانت في حملة في كل حته يعني اﻻحزاب” المدنية و اليسارية و القومية” و كمان عليها الصحف و القنوات. عماله تصرخ وتقول الاخوان عاوزين يرهبوا الستات و بيستخدموا نفس اساليب النظام السابق ودية مجموعات منظمة و كلام كله انتوا عارفينة.
ومات الكلام علي كدة
و بالرغم من محاولات كتير من ناس انها تحاول تشرح للمعسكر “بتاعنا ” ان الموضوع اكبر من عصابات منظمة و ان دة بيحصل عادي كل يوم وفي كل حتة ومفيش يوم بيعدي من غير خبر في جرنان عن حادثة اغتصاب وان في اﻻعياد بيحصل كدة.
اللي ان كلهم تعاملوا معانا باعتبرنا مجانين

للاسف كتير منهم بيشوف ان قضايا الستات اصلا مش مهمه و النسوي منهم شوية بيقول مش وقته قضايا الفقراء و النظام الظالم اهم و محتاج تركيز و مش مفيد اننا نشتت نفسنا في قضايا الستات “المهمه” بس فرعية

المشكلة انهم مش شايفين مشاكل الستات اصلا ولو شافوها هيشوفوها اما مصلحه شخصية او مصلحة سياسية
اسف هنفضل في الحال دة لحد ما المعسكر “بتاعنا” يعترف اصلا ان الحوادث دي بتحصل و يعترف ويصرح بيها و يقتنع ان مشاكل الستات في نفس اهمية الخناقة علي السلطة.

গত ২৫ জানুয়ারি তারিখে যখন যৌন আক্রমণ সংঘটিত হল তখন সুশীল সমাজের একটি প্রচারাভিযান চলছিল। বামপন্থী এবং জাতীয়তাবাদী দল সহ গণমাধ্যম চিৎকার করছিল, দ্য মুসলিম ব্রাদারহুড নারীদের ভয় দেখাতে চায় এবং সংগঠিত দাঙ্গাকারী জনতার দ্বারা পুরনো শাসনতন্ত্রের কৌশল ব্যবহার করছে। এখানেই এটির সমাপ্তি ঘটে। “আমাদের ক্যাম্প” – এ আমাদের মাঝে অনেকেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে যে সংগঠিত দাঙ্গাকারী জনতার চেয়েও ইস্যুটি অনেক বড়। সবখানে এই হয়রানি একটি সাধারন দৈনন্দিন ঘটনায় পরিনত হয়েছে; খবরের কাগজেই প্রতিদিন আমরা ধর্ষনের খবর পাচ্ছি; এমনকি ধর্মোৎসবের সময়েও এধরনের ঘটনা ঘটছে। তাঁরা সবাই আমাদের সাথে এমন আচরন করছে, যেন মনে হচ্ছে আমরা পাগল।

আমাদের পক্ষে এই পরিস্থিতি এতোটা নোংরা কেন?

তাঁদের অনেকেই মনে করেন নারী ইস্যুগুলো তেমন গুরুতবপূর্ণ নয়। যারা কিছুটা নারীবাদী, তাঁরা বলেন এটা সঠিক সময় নয়; দারিদ্র্য এবং দুঃশাসন নিয়ে কাজ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নিজেদেরকে অন্যমনস্ক করতে, এখনও প্রান্তিক ইস্যুগুলোকে “গুরুতবপূর্ণ” মনে করাটা যুক্তিযুক্ত নয়।

প্রকৃত সমস্যা হচ্ছে তাঁরা নারীদের সমস্যা দেখতে পায় না এবং যদিও বা দেখতে পায়, তা কেবল ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। যতক্ষণ না “আমাদের ক্যাম্প” সত্যতা স্বীকার করে নেবে যে ঐ ঘটনাগুলো সংঘটিত হয় এবং প্রমাণ সহকারে বিশ্বাস করবে যে ক্ষমতার যুদ্ধের মতো নারীদের সমস্যাগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ, ততক্ষণ আমরা একই অবস্থানে থাকবো।

যৌন সহিংসতার ওপর খবর শেয়ার করতে গিয়ে স্বক্রিয় প্রতিবাদকারী এনজি ঘোজলান যে উভয়সংকটে পরেছেন তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেনঃ 

النهاردة 44 حالة إعتداء على فتيات في ميدان التحرير، مع الأسف إحنا بين طرفين، طرف خايف من مواجهة الحوادث دي “حتى لا تشوه قضيته” وطرف بيستغل المواقف دي عشان يعلم على الطرف الأولاني، وفي النهاية في 44 إنسانة (النهاردة بس) الشعب الجميل انتهك أجسادهن الحرة. مفيش ثورة مع إغتصاب مفيش ثورة مع أجساد منتهكه.

আজ তাহরির স্কয়ারে মেয়েদের ওপর দাঙ্গাকারি জনতা কর্তৃক আক্রমণের ৪৪ টি ঘটনা ঘটেছে। দূর্ভাগ্যবশত আমরা দু’টি দলের মধ্যে আটকে আছি। একটি দল এসব ঘটনার মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে যেন তাঁদের উদ্দেশ্য কলঙ্কিত না হয়। অন্য দলটি বিপক্ষ দলকে বদনাম করতে এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। সবশেষে মুক্ত স্বাধীন ৪৪ জন মানুষ আজ সুন্দর মানুষদের দ্বারা সহিংস আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এখানে ধর্ষনের কোন বিপ্লব নেই। সহিংসতার শিকার যারা, তাঁদের নিয়ে কোন বিপ্লব নেই।

রাস্তাঘাটে হয়রানি এবং আক্রমণ বাঁধা দিতে বেশকিছু উদ্বোগ নেওয়া হয়েছে, যেমন তাহরির বডিগার্ডস, ইমপ্রিন্ট মুভমেন্ট এবং অন্যান্য। “ক্ষমা নয়” শিরোনামে একটি পোস্টে ইয়াসমিন এলরিফি এই উদ্বোগের একটি অংশ হিসেবে তাঁর চিন্তা ধারনা শেয়ার করে বলেছেনঃ

আমি সেসব নারী ও পুরুষদের দ্বারা উত্সাহিত হয়েছি যারা সব সময় এই যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। আবার তাদের মানসিক এবং শারীরিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং যারা সৃজনশীল, করিত্কর্মা এবং স্বজ্ঞাত। আমি আশা করি যে অনেক লোক আছেন যারা রাষ্ট্রপতির বা একটি সরকারের পতন দাবি করে সামাজিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে আরও বহুমুখী, আরো জটিল এবং আরো কঠিন করে দেখতে চান।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .