গিলগিটের ছোট শহর কিলাসে একজন মা ও তাঁর বয়ঃসন্ধিকালে থাকা দু’টি মেয়েকে পাঁচজন মুখোশধারী লোক তাঁদের বাড়িতে ঢুকে গুলি করে মেরেছে। এটিকে পাকিস্তান সম্মান রক্ষার্থে হত্যা করা হতে পারে বলে রিপোর্ট করেছে।
২৪ জুন, ২০১৩ তারিখে পনের ও ষোল বছর বয়সী দু’টি মেয়েকে খুনের লক্ষ্যবস্তু করা হয় একটি মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখে, যেখানে তাঁরা তাঁদের বাগানে বৃষ্টিতে ভেজা উপোভোগ করছিল। ভিডিওটি স্থানীয় ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটিকে পরিবারটির সম্মানহানিকর একটি ব্যপার বলে মনে করা হয়।
কর্তৃপক্ষ দৃঢ়ভাবে বলছে মেয়ে দু’টির খুনী তাঁদের সৎভাই খুতর, যে এই ভিডিওটি দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে এবং তাঁর ধারনা মতে সে তাঁর পরিবারের সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য তাঁর চারজন বন্ধুর সাহায্য নেয়। এ পর্যন্ত তাঁর বন্ধুরা ধরা পরেছে এবং তাঁদের অপরাধ স্বীকার করেছে, কিন্তু খুতর এখনও মুক্ত।
পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী “পাকিস্তানে নারীর বিরুদ্ধের সহিংসতার সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ঘৃণ্য রূপ” হচ্ছে সম্মান রক্ষার্থে হত্যা। রিপোর্টটি বলছে, পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে, ২০১২ সালে ৯১৩ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯৯ জন শিশুও রয়েছে।
দুনিয়া ব্লগে পাকিস্তানে সম্মান রক্ষার্থে হত্যার কারন ব্যাখ্যা করে শফিকুল হাসান সিদ্দিকি লিখেছেনঃ
এটি প্রতিশোধের একটি ফলাফল। শতকরা ৯৫ ভাগ নারীকে উদ্দেশ্য করা হয়। সামান্য বিষয়ে ওপর ভিত্তি করে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সম্মতিতে, পরিবারেরই কোন একজন সদস্য (বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ) একজন নারীকে হত্যা করে এবং শাস্তি দেয়। যে নারীর কারনে পরিবারটি অসম্মানিত হল, নিজেদের রক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে উৎসর্গ করার এই মুহূর্তটি সমস্ত পরিবারটির জন্য গর্বের বিষয় হয়ে যায়। অনেকগুলো কারন আছে, যেগুলোকে সম্মান রক্ষার্থে হত্যার প্রধান ও মূল কারন বলে মনে করা হয়।
নিউইয়র্ক টাইমসের পাকিস্তান ব্যুরোর প্রধান ড্যাকলান ওয়ালশ (@ড্যাকলানওয়ালশ) সাম্প্রতিক হত্যাটির সম্পর্কে এক প্রতিক্রিয়ায় টুইট করেছেনঃ
@ড্যাকলানওয়ালশঃ সম্পূর্ণ উন্মাদনা – উত্তর পাকিস্তানে বৃষ্টিতে ভিজে উপভোগ করছে এমন ভিডিও দেখা যাওয়ায় দু’টি মেয়ে ও মাকে হত্যা করা হয়েছে। http://beta.dawn.com/news/1020576
লিঙ্গ ইস্যু বিষয়ক একজন ব্লগার লুবনা খান (@লুবনাজিগিয়ানি) হত্যাটি নিয়ে মন্তব্য করে বলেছেনঃ
@লুবনাজিগিয়ানিঃ ঘৃণ্য ধরণের একটি অপরাধ। কোন পরিস্থিতেই সম্মানীয় লোকেরা হত্যা করে না – পৌরুষপূর্ণ ব্যক্তির অহমিকা-প্রকাশই শেষ কথা।
“সম্মান রক্ষার্থে হত্যা” শব্দটিকে রাজনৈতিক ব্লগার জেশ (@জেশ) একটি ইস্যু হিসেবে নিয়েছেনঃ
বেলুচিস্তান প্রদেশের টুইটার ব্যবহারকারী গ্যাড্রোশিয়া (@গ্যাড্রোশিয়ান) আরো লিখেছেন, রক্ষনশীল এলাকাগুলোতে প্রকাশ হয়ে পড়া মোবাইল ভিডিও – গুলো ছাত্রীদের জন্য ভয়ানক পরিণাম ডেকে আনছেঃ@জেশ২: সম্মান রক্ষার্থে হত্যা একটি অসার্থক নাম – একটি ভ্রান্ত উপদেশ দাতা আবেগ – যদি সত্যিকার অর্থে তাঁদের সম্মান থেকে থাকে, তবে তাঁদের নিজেদের হত্যা করা প্রয়োজন, অন্যদের নয়।
@গ্যাড্রোশিয়ানঃ বেলুচিস্তানেও এধরনের অনেকগুলো ঘটনা রয়েছে, যেখানে স্কুল অথবা কলেজের ছবি প্রকাশিত হয়ে পড়ে। এবং মেয়েদের কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক এই হত্যাটির কিছুদিন আগের লেখাটিতে দ্যা ফিউচার, সম্মান রক্ষার্থে হত্যা বন্ধ করার সমাধানটি সংক্ষেপে বলেছেনঃ
আমি মনে করি বর্তমান ক্ষমতার ধারনাটি পরিবর্তন করতে পুরুষ সদস্যদের চিন্তা ধারায় একটি ব্যাপক বিপ্লব আনা প্রয়োজন। একটি লিঙ্গকে অন্যটির ওপর ক্ষমতায়ন না করে, বরং যৌথ লক্ষ্য অর্জনে, অনাগত বংশধররা যেন নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব করতে পারে এমন একটি উন্নত সমাজ ও উন্নত ভবিষ্যতের জন্য দু’টি লিঙ্গের মাঝে সমতা আনা, বর্তমান পরিস্থিতি পরিবর্তনের পূর্বশর্ত।