- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

থাইল্যান্ড চালে ভর্তুকি প্রত্যাহার করেছে

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, থাইল্যান্ড, ইতিহাস, উন্নয়ন, নাগরিক মাধ্যম, ব্যবসা ও অর্থনীতি, রাজনীতি, সরকার

থাইল্যান্ডের সরকার চালে ভর্তুকি প্রত্যাহারের [1] ঘোষণা দিয়েছে। ৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লোকসান দেয়ার পর সরকার এই প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। দেশটির ৪ মিলিয়ন কৃষক এই ভর্তুকিতে লাভবান হতেন। ২০১১ সালে নির্বাচনে জেতার পর প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা ভর্তুকি চালু করেছিলেন। এর আওতায় সরকার কৃষকদের কাছ থেকে বেশি মূল্যে চাল কিনে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করতো। সরকারের কাছে বেশি মূল্যে চাল বিক্রি করায় কৃষকদের সঞ্চয়ের পরিমাণ বেশ বেড়ে গিয়েছিল।

গত পাঁচ দশক ধরে থাইল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারী দেশ হলেও সম্প্রতি ভারত এবং ভিয়েতনাম এই স্থান অধিকার করেছে। সমালোচকরা দাবি করেছেন, চালের ভর্তুকি কর্মসূচীর কারণে চাল সেক্টরে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

ভেরা প্রাতিচাইকুল জানিয়েছেন, শুরু থেকেই এই কর্মসূচী ছিল অবাস্তব [2]:

চালের ভর্তুকি কর্মসূচীকে সমালোচকরা প্রথম দিন থেকেই অবাস্তব বলে আসছেন। কৃষকদের কাছ থেকে ভোট পাওয়ার এটাই ছিল প্রথম অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ। আর কৃষকদের প্রকৃত সুবিধা দেয়া ছিল দ্বিতীয় অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ।

Thai farmers during protest at Government House. Photo by Piti A Sahakorn, Copyright @Demotix (6/25/2013 [3]

থাই কৃষকরা গর্ভমেন্ট হাউজের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করছেন। ছবি: পিতি এ সাহাকর্ন। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (৬/২৫/২০১৩)

সরকারের এই কর্মসূচীর কারণে গরীব কৃষকরা নন, লাভবান হয়েছেন মধ্যস্বত্ত্বভোগী আর চাল ব্যবসায়ীরা, এমনটাই যুক্তি [4] দেখানো হয়েছে এশিয়া সেন্টিনেল-এ প্রকাশিত একটি লেখায়:

অন্য সূত্রগুলো বলছে, এই কর্মসূচী থেকে কৃষকরা কীভাবে লাভবান হচ্ছেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এটা অনস্বীকার্য যে, বেশি দাম থেকে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটা চলে যাচ্ছে মধ্যভোগীদের কাছে।

পিটার ওর থাইল্যান্ডে জনপ্রিয়তা [5] মাপার মাপকাঠি হিসেবে চালে ভর্তুকির সমালোচনা করেন:

ভোটের লড়াইয়ে জেতার জন্য স্বপ্ল মেয়াদী রাজনৈতিক সুবিধা পেতে সরকার এই জনপ্রিয় পদক্ষেপগুলো নিয়ে থাকে। তারা দেশের সমস্যাগুলো বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া অগ্রাহ্য করেন।

নতুন এই কর্মসূচী শুরু হয়েছে আগের চাল কেনা কর্মসূচী থেকে। আগেও উচ্চমূল্যে চাল কেনা হতো, কিন্তু সরকার কতোটুকু পরিমাণ কিনবে, সেটা ঠিক করতে ব্যর্থ হতো।

বিক্রম নেহরু এই কর্মসূচীর সমস্যা কি ছিল সেটা ব্যাখ্যা [6] করে সমাধানও দিয়েছেন:

ক্রমবর্ধমান খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন চাল নীতির আরেকটা সমস্যা হলো দুর্নীতি। কৃষকরা তাদের চাল বিক্রি করে মিল মালিকদের কাছে। আর মিল মালিকরা স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী। এরা নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে চাল সরবরাহ করতে কৃষকদের বাধ্য করতে পারে। আবার তারা সরকারের কাছ থেকে নির্ধারিত দামই আদায় করে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, গত এক বছরে মিল মালিকের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।

থাইল্যান্ডের উচিত ২০০৬ সালের কর্মসূচীতে ফেরত যাওয়া। এখানে কৃষকদের বাজার মূল্যের চেয়ে কিঞ্চিত কম মূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তা ছিল।

কিন্তু সরকার নিশ্চিত এই কর্মসূচী থেকে কৃষকরা উপকৃত হয়েছেন। তারা দাবি করেছেন, এই কর্মসূচীর মাধ্যমে কয়েক মিলিয়ন দরিদ্র কৃষক উপকৃত [7] হয়েছেন:

…৯৭.৮% কৃষক একমত হয়েছেন, এই কর্মসূচীর কারণে তাদের সব ধরনের ঋণের বোঝা কমাতে সাহায্য করেছে। আর ৯৩.৭% কৃষক এই কর্মসূচীতে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। ৮৫.৪% কৃষক জানিয়েছেন, তারা আগের চেয়ে বেশি সঞ্চয় করতে পারছেন।

অ্যান্ড্রু স্পুনার সমালোচকদের স্মরণ [8] করিয়ে দেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো চালে থাইল্যান্ডের অনেক বেশি ভর্তুকি দেয়:

আশ্চর্যের বিষয় হলো, সরকারের ধারনাকৃত লোকসানের পরিমাণ যদি ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়, তাহলে থাইল্যান্ডের চাল কেনা কর্মসূচীকে তুলনামূলকভাবে বেশ ছোট-ই বলা যায়। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভর্তুকির পরিমাণ ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, জাপান এবং নরওয়ের কৃষি আয়ের ৬০% পর্যন্ত সরকারের ভর্তুকি রয়েছে।

কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়াকে অদ্ভুত মনে করার কিছু নেই। ২০১১ সালের সাধারণ নির্বাচনে কৃষকরা চাল কেনা কর্মসূচীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল। তাই এই নীতিতেই ফিরে যাওয়া দরকার।

তেরেন্স চুলাভাচানা একই যুক্তি [9] তুলে ধরেছেন:

থাইল্যান্ডের কৃষকদের কীভাবে ভালো হবে? ইউরোজোন এবং আমেরিকার কৃষকদের কী করে ভালো হয়? ঘটনা হলো, তাদের সাথে তুলনায় থাইল্যান্ডের কৃষকরা নিতান্তই গরীব। থাইল্যান্ডের খামারগুলো কতটুকু ভর্তুকি পায়? এবং ইউরোজোন এবং আমেরিকার খামারগুলো কতটুকু ভর্তুকি পায়? ঘটনা হলো, ইউরোজোন এবং আমেরিকার খামারগুলো যে পরিমাণ ভর্তুকি পায়, সে তুলনায় খুব সামান্যই ভর্তুকি পায় থাইল্যান্ডের খামারগুলো।

তাই থাইল্যান্ডের চালের ভর্তুকি কেন অবাস্তব বলে বিবেচিত হবে?

চালের ওপর ভর্তুকি প্রত্যাহারের প্রতিবাদ [10] করে ব্যাংকক এবং আশেপাশের শহরগুলিতে কৃষকরা তাত্ক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।