কাবুলে বোমা হামলার পর দোহায় দপ্তর খুলেছে তালেবানরা

আফগানিস্তানের কাবুলের পশ্চিমাঞ্চল গত ১৮ জুন একটি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে। এতে কমপক্ষে তিনজন মারা গেছে এবং বিশ জনেরও বেশী লোক আহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মিত্র (আইএসএএফ) বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বাকি জায়গা গুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের ঠিক আগ মূহুর্তে এই বিস্ফোরণটি ঘটল। একদিকে হামলার খবর শুনে আফগানদের মাথা ঘুরে গেছে, অন্যদিকে কাতারে তালেবানরা একটি অত্যাধুনিক নতুন সদরদপ্তর খুলেছে

আল জাজিরার রিপোর্ট অনুযায়ী একজন জনপ্রিয় আফগান ধর্ম গুরু, রাজনীতিবিদ এবং শান্তির উচ্চ কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মাদ মোহাকিক ছিলেন বিদ্রোহী দলটির লক্ষ্যবস্তু। বিস্ফোরণের সময় তাঁর গাড়িবহর সংসদের দিকে যাচ্ছিল। বোমা বিস্ফোরণে তাঁর কোন ক্ষতি হয়নি, তবে গাড়িবহরের একটি যান ধ্বংস হয়ে যায় এবং এতে কমপক্ষে তাঁর চারজন নিরাপত্তারক্ষী আহত হয়।

বিস্ফোরণের পর মোহাকিক স্থানীয় লোকজন ও বয়োজ্যেষ্ঠ আফগানদের সাথে কথা বলে আশ্বস্ত করেন যে তাঁকে আগেও কয়েকবার হুমকি দেয়া হয়েছে এবং তাঁরা ধরে নিয়েছে যে তিনি শহরের আশেপাশে আর আসবেন না। কিন্তু সরকারী গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাঁকে সংসদে যেতে হয়েছে। খবরটি আফগানদের কাছ থেকে একটি ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়া আকর্ষনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পরেছে। সাবেক পাকিস্তানি কূটনীতিক মোশাররফ জাইদি (@মোশাররফজাইদি) টুইট করেছেনঃ 

ওস্তাদ মোহাকিক আমার দেখা সবচেয়ে দয়ালু ও ভদ্র একজন নেতা। তাঁর দীর্ঘ জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করি। আফগানিস্তানের শত্রুরা কখনো সফলকাম হবে না।

পাকিস্তানও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র (@পাকস্পোকসপার্সন) টুইট করেছেনঃ

পাকিস্তান হাজী মোহাম্মাদ মোহাকিকের গাড়িবহরের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

আফগানিস্তানের ইতিহাসে ১৮ জুন, ২০১৩ তারিখ অন্যতম কঠিন একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত, যেহেতু একদিকে আন্তর্জাতিক থেকে জাতীয় বাহিনীর হাতে নিরাপত্তার দায়িত্ব হস্তান্তর করা হচ্ছে, অন্যদিকে কাতারের দোহায় তালেবানদের সদরদপ্তর খোলা হয়েছে। এ সম্পর্কে দোহা থেকে কাতার সরকার এবং তালেবান একজন প্রতিনিধি প্রচার মাধ্যমকে জানিয়েছেন।

Screen shot 2013-06-20 at 12.11.29 AM

“ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্থান” এর দোহা হেড কোয়ার্টারের নাম ফলক। [আল জাজিরার রিপোর্ট থেকে স্ক্রিন শর্ট]

ভয়েস অব আমেরিকার আশনা টিভির উপস্থাপিকা লিনা রোজবিহ-হায়দারি তাঁর গণ ফেসবুক পেজে তালেবানদের দোহা সদরদপ্তরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একজন তালেবান প্রতিনিধির ছবি পোস্ট করেছেন। দপ্তর উদ্বোধনের মাধ্যমে তালেবানদের স্পষ্টত জন্মের বৈধতার নিন্দা করে কয়েকশ রাগান্বিত আফগান ছবিটিতে তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। লিলা আলি লিখেছেন [ফার্সী]:

چه دنیایی بی انصافی! برای آدمکش ها اینقدر قدر داده می شود

কতোটা অবিচারক পৃথিবী! খুনীদের এমন সম্মান দেয়া হচ্ছে।

আমির ইমাল মন্তব্য [ফার্সী] করেছেনঃ

افراد که از طالبان پیشتیبانی میکنند یکبار تصاویر از مرگ افغان های بیچاره که در این حملات طالبان ازبین رفتن سر خم کرده و عدالت کنید و ببینید که ایا قتل اولاد وطن و قتل غریب و بیچاره وطن قابل قبول است ؟ ایا قابل انسانیت است ؟ ایا جذ اساسات اسلامی است؟؟ ایا وقتیکه از گروه طالبان پیشتیبانی میکنی ایا از دین خبر داری ؟ ایا به وطن و مردم خود محبت داری ؟ خون در رگهایت جریان دارد ؟ خود را انسان میدانی ؟ اگر جواب منطقی داری خوب پس مهربانی

যারা তালেবানদের সমর্থন করেন, তাঁদের উচিৎ আয়নায় একবার সেসব লোকদের চেহারা দেখা, যারা তালেবানদের হামলায় মারা গেছেন। এরপর আপনারা সিদ্ধান্ত নেবেন আপনার দেশের হত দরিদ্র ও নিষ্পাপ শিশু ও জনগণের মৃত্যু আপনি মেনে নেবেন কিনা। এটা কি মানবতা? এটা কি ইসলামের নীতির মধ্যে পড়ে? আপনি যখন তালেবানদের সমর্থন জানান তখন কি আপনার ধর্ম সম্পর্কে সচেতন? আপনি কি আপনার দেশ এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসেন? সেই রক্ত কি আপনার শিরায় প্রবাহিত হয়? আপনি কি নিজেকে একজন মুসলমান মনে করেন? যদি আপনার সমর্থনের পেছনে কোন যুক্তিযুক্ত কারন থাকে তবে তা দয়া করে আমাদের জানান।

আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত আব্দ বসির জোমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে [ফার্সী] দেখিয়েছেনঃ 

 خانم روزبه من از نگرانی که افکارت را مشغول ساخته آگاهم… بعد از ایجاد دفتر آنها بیشتر قدرت سیاسی بدست آوردند و همچنان فرصتی خوبی را برای بدست آوردن کمک مالی از کشور های عربی بدست آوردند… افغانستان حالا دو دولت دارد…(جمهوری اسلامی افغانستان) و (امارات اسلام)… یک نمونه از کذشته !!! بسیار جای تاسف است و باز هم مردم این رهبران مصلحت گراه را نشناختند که خون صدها هزار انسان را ریختانده اند و امروز نیز همه با این کار سکوت اختیار کردند

মিস রোজবিহ, আপনাকে যে চিন্তাগুলো উদ্বিগ্ন করে তুলছে তা সম্পর্কে আমিও সচেতন। তালেবানরা দপ্তর প্রতিষ্ঠার পর আরো বেশী ক্ষমতা অর্জন করেছে এবং আরব রাষ্ট্রগুলো থেকে আর্থিক সাহায্য লাভের সুযোগ তৈরী হয়েছে। বর্তমানে আফগানিস্তানে দু’টি সরকার রয়েছেঃ আফগানিস্তান ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ও ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তান……অতীতের একটি চিহ্ন। এটা খুবই দুঃখজনক যে জনগণ তাঁদের [তালেবান] চিনতে পারেনি, যারা শত শত মানুষের রক্ত ঝড়িয়েছে। আজ, আরো একবার সবাই নিশ্চুপ।

জাকির শাখিজাদা আরো একটি রাগান্বিত মন্তব্য [ফার্সী] করেছেন, যা অনেকটা এই রকমঃ

اينرا نبايد دفترگفت بلكه باغ وحش گفت قطر دريك اقدام بي سابقه براي خدمت به افغانستان تعدادي از حيوانات وحشي را ازافغانستان جمع نموده ويك باغوحش براي بازديد جهانيان ازين حيوانات كمياب افتتاح نموده

এটিকে একটি “দপ্তর” নয় বরং একটি “চিড়িয়াখানা” বলা উচিৎ। আফগানিস্তানকে অনেক সেবা দেয়ার পাশাপাশি কাতার এই বিরল পশুগুলোকে একত্রিত করে সারা বিশ্বকে দেখানোর জন্য একটি চিড়িয়াখানা খুলেছে।

এই পোস্টটি কিরগিজিস্তানের বিশকেকে অবস্থিত আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল এশিয়ার জিভি কেন্দ্রীয় এশিয়া অন্তরিত প্রজেক্টের একটি অংশ।   

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .