মিয়ানমার: প্রতিবাদের বছর ২০১২

অং সান সু চি’র নির্বাচনে বিজয়, রোহিঙ্গাদের প্রতি নিপীড়ন এবং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সরকারি ভ্রমণের ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মিয়ানমার ২০১২ সালে আলোচনায় এসেছিল। এটি সত্যিই বিস্ময়কর ছিল এবং গ্লোবাল ভয়েসেস এই ঘটনা এবং বিষয়গুলোর নাগরিক প্রতিক্রিয়া নথিবদ্ধ এবং অনুবাদ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু গত বছর প্রকাশিত গল্পগুলোর পর্যালোচনা করে আমরা ঘোষণা করতে পারি যে, ২০১২ সালটি ছিল মিয়ানমারে প্রতিবাদের একটি যুগান্তকারী বছর।

কমিউনিটি প্রতিবাদগুলো কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, লেপটাডুং এ চীনা আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত তামা খনির প্রকল্প স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রচণ্ড বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। সন্ন্যাসীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিবাদ শিবির রাষ্ট্র বাহিনী ছত্রভঙ্গ করে দিলে তা বিশ্বব্যাপী তীব্র নিন্দার সৃষ্টি করে।

বৈদ্যুতিক ঘাটতির প্রতিবাদে সমাবেশ। ছবিঃ সি যে মিয়ানমার ফেসবুক পাতা 

গত গ্রীষ্মে বৈদ্যুতিক ব্যর্থতায় প্রতিক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি শহরে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে। মানুষ বিদ্যুৎ প্রদানে সরকারের অক্ষমতা এবং পাশাপাশি নিজ দেশের বিদ্যুৎ চীনে সরবরাহ করার সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা জানায়।

আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসে শান্তির প্রতীক হিসেবে নীল বেলুন উড়ানো। ছবিঃ সি যে মিয়ানমার ফেসবুক পাতা 

সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে শান্তি আলোচনার সমর্থনে শান্তি সমাবেশ সংগঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উদযাপনে বিভিন্ন দল একটি মিছিল যোগদান করে, যদিও শান্তি দিবসের ঘটনা পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ হয়েছে। এছাড়াও এই উদ্যোগগুলো এটাই তুলে ধরেছে যে, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ দেশে হাজার হাজার উদ্বাস্তু তৈরি করেছে।

এছাড়াও বেশ কিছু ছোট ছোট প্রতিবাদ ছিল যেগুলো পাবলিক বিতর্ক তৈরি করে, বিশেষ করে অনলাইনেঃ

খনি বিরোধী প্রতিবাদে যেসব নারী কর্মী যোগদান করেন, তাঁদের একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আটক করা হয়, ছাত্র আন্দোলনের উপর একটি সামরিক অভিযানের ৫০ তম বার্ষিকী স্মৃতিরক্ষার একটি প্রয়াস অবরুদ্ধ করে দেয় সরকার এবং অনেক মানুষ ‘বুদ্ধ জুতা‘ এর বিক্রয় দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছে।

দেশের পশ্চিম অংশের সহিংসতা দেশের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র আলোচনা তৈরি করে। বিশ্বের প্রায় সবাই রোহিঙ্গাদের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য একযোগে নিন্দা জানিয়েছিল। আশ্চর্যজনকভাবে, জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর স্বীকৃতির জন্য সংগ্রামরত রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে দেশিয় মতামত ছিল বিভক্ত এবং এমনকি বিরোধী ব্যক্তিত্বরাও রোহিঙ্গাদের অঙ্গীকারের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেন নি। গণতন্ত্রের আইকন অং সান সু চি রোহিঙ্গা ইস্যু উল্লেখ করে নিছক ‘আইনের শাসন’ সম্পর্কে বক্তৃতা করায় মিয়ানমারের বাইরে কর্মীরা হতাশ হয়েছে।

তথাপি, রোহিঙ্গা ইস্যু বিতর্ক আমাদের ভুললে চলবে না যে, স্থানীয় বিরোধের ফলে হাজার হাজার নিরপরাধ রোহিঙ্গা এবং রাখাইন গ্রামবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

হাজার হাজার মানুষ মিয়ানমারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা আগমনের উত্সাহিত হয়েছেন। এই ঘটনা এটারই ইঙ্গিত দেয় যে, বেসামরিক সরকার দ্বারা বাস্তবায়িত স্থানীয় সংস্কার বিশ্বের নেতাদের দ্বারা স্বীকৃত হচ্ছে। এছাড়াও নেটিজেনরা সক্রিয়ভাবে অং সান সু চি’কে ওবামার দেওয়া বিখ্যাত চুম্বনে মন্তব্য করেছেন।

৫০০ এর অধিক রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি ও নিয়মিত সংসদ নির্বাচন করা গত বছরের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

নেটিজেনরা মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, সামাজিক মাধ্যমের উপর ঘৃণা ছড়াবেন না। ছবিঃ নিউ ম্যান্ডেলা 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .