সিরিয়াঃ পুরাতন হোমস শহরে অবরুদ্ধতার এক বছর

এই পোস্টটি আমাদের সিরিয়া প্রতিবাদ ২০১১ সংক্রান্ত বিশেষ কভারেজের অংশ।

প্রাচীন শহর হোমসকে মাঝে মাঝে সিরিয়া বিপ্লবের রাজধানী হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এ মাসে সৈন্যদের দ্বারা শহরটি অবরোধের এক বছর পূর্ণ হল। বাশার আল-আসাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রথমে যেসব শহর থেকে শুরু হয়েছে তাঁদের মধ্যে হোমস একটি। বাবা আমর, বাব সাবা, খালিদিয়া ও দেইর বালবা সহ শহরটির জেলাগুলো এবং হোমসের আশেপাশের ১৪ টি প্রতিবেশী শহরে গত দু’বছরের বেশী সময় ধরে সিরিয়ার শাসনতন্ত্র অবাধে বোমা বর্ষণ, গোলা নিক্ষেপ এবং গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠনের জন্য হানা দিচ্ছে। এমনকি খাবার ও ঔষধ সরবরাহকে কমিয়ে দিয়ে সেখানে টিকে থাকাকে প্রতিনিয়ত আরো কঠিন করে তুলছে।

homs...city under siege by abdulrahman-romano

হোমস… অবরুদ্ধ শহর,  ছবিঃ আব্দুলরহমান- রোমানো

২০১২ সালের নভেম্বর মাসে গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইন “হোমস, ধ্বংসের কাছাকাছি সিরিয়ার একটি বিপ্লবী শহর” শিরোনামে একটি পোস্ট প্রকাশ করেছিল। হোমসের ১৪ টি প্রতিবেশী শহর “অবরোধ” করে রাখা একটি বিশেষ ব্যাপার – এটি সিরিয়ার অন্যান্য শহরের মতো নয়। এটি আমাদের গাজা অবরোধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তথাপি, হোমসে কোন গোপন সুরঙ্গ নেই, যার মধ্য দিয়ে তাঁরা নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, চিকিৎসা সাহায্য এবং আহত ও অসুস্থদের গোপনে বহন করতে পারে। হোমসের একটি এলাকায়, যেখানে ৪ লক্ষ লোক বাস করে সেখানে কয়েক হাজার লোকের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করা হয়েছে। স্টরিফাই-তে জেয়ডিটি২৩ রিপোর্ট করেছেনঃ

এই মুহুর্তে সমগ্র সিরিয়াতে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বলা যেতে পারে হোমসের অবরুদ্ধ অবস্থাকে। দ্বন্দ্বের দু’দিকেই প্রতিদিন মৃত্যুর মাশুল যোগের মধ্যদিয়ে অবরোধ চলছে কয়েক মাস ধরে। জনগণের টিকে থাকার সংগ্রামের কিছু ছবি, টুইট এবং ভিডিও নিচে রয়েছে।

পুরাতন হোমসে ফলমূল ও শাকসবজি ফলানোর মতো কোন কৃষিজমি নেই। ফলে খাদ্য সরবরাহে অভাব দেখা দিয়েছে। এই ভিডিওটিতে শিশুদের পাতা কুড়াতে দেখা যাচ্ছে এবং তাঁরা খাবারের অভাব নিয়ে অভিযোগ করছেঃ

সেখানে কোন হাসপাতাল অথবা মেডিকেল সেন্টারও নেই [গত ১ লা এপ্রিল, ২০১২ তারিখে আল-আমাল হাসপাতালটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে]। তা সত্ত্বেও, কাজ চালানোর জন্য কিছু [সতর্কীকরণঃ গ্রাফিক ভিডিওর একটি লিংক যেখানে দেখানো হয়েছে অ্যানেসথেশিয়া ছাড়াই একজন আহত ব্যক্তির অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে] অস্থায়ী হাসপাতাল রোগীদের সেবা দিতে শিক্ষানবিস ডাক্তারদের উপর নির্ভর করছে।

সরকার অবরুদ্ধ প্রতিবেশী এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ, পানি ও যোগাযোগ সেবাও কর্তন করে নিয়েছে। তা সত্ত্বেও কুয়ার পানি, বিদ্যুৎ জেনারেটর এবং স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবহারের উপর নির্ভর করে অধিবাসীরা বেঁচে আছে। সেখানে কোন বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। তথাপি কয়েকশ শিশু প্রতিদিনকার বোমা বিস্ফোরণের মাঝে জীবনধারণ করছে। বিরামহীনভাবে প্রতিদিন মর্টারের গোলাবর্ষণ, রকেট উৎক্ষেপণ, দীর্ঘ-সীমার মিসাইল, ট্যাঙ্ক এবং যুদ্ধবিমানের শব্দে কেঁপে উঠছে।

শহরটির ধ্বংসের কথা প্রকাশ করতে সিরিয়ার সক্রিয় কর্মীরা “হোমসের অবরোধ ভেঙ্গে ফেল” – এর ফেসবুক পেজে এই ভিডিওটি ৬ জুন, ২০১৩ তারিখে পোস্ট করেছেন।

“ইয়াসিন এবং মরিয়ম সাব্বাঘ…হোমসের অবরোধের অবসান হোক” শিরোনামে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা বৃহত্তর সিরিয়া ব্লগটিতে পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে একজন ভাই ও একজন বোনের (ইয়াসিন ও মরিয়ম) খুনের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। জেলাগুলোতে শাসনতন্ত্রের বাহিনীর বর্ষণ করা মর্টারের বোমার আঘাতে বাড়ির বাইরে খেলার সময় শিশু দু’টি মারা যায়। তাঁদের শহীদ হওয়ার ভিডিওটিতে একটি আবেগআপ্লুত মন্তব্যে বলা হয়েছেঃ

একটু আগেই একটি খবর আমার হৃদয়কে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করেছে এবং আমার চোখ অবিশ্বাসে অসাড় হয়ে গেছে। [……] মরিয়ম ও ইয়াসিন সাব্বাঘ তাই পেল যা তাঁদের জীবনকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছিলঃ মর্টার, গোলাবর্ষণ, অন্ধকার, ভয় এবং ধ্বংস; তাঁরা বঞ্চিত ছিল শিক্ষা থেকে, বিদ্যালয় থেকে, বন্ধুদের থেকে এবং প্রতিবেশীদের সাথে খেলা করা থেকে, বিশ্বের অন্যান্য শিশুদের মতো জীবনের নিয়ামক উপভোগ করা থেকে, খাদ্য ও নিরাপদ পানি থেকে, বিদ্যুৎ থেকে, সবকিছু থেকে…

Break the siege of Homs. Source Facebook page

অবরুদ্ধ হোমস মুক্ত কর। সূত্রঃ ফেসবুক পাতা 

এই ফেসবুক পেজটিতে ইয়াজান হোমসি সিরিয়ার জনগণকে বিপ্লবটিকে সমর্থন জানাতে এবং শহীদদের রক্ত বৃথা না যেতে দেয়ার আহ্বান করেছেন। সিরিয়ার সকল সক্রিয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে একজন সক্রিয় কর্মী এই বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এটিকে সুরক্ষিত রাখার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে একটি চিঠি লিখেছেন, যা হোমসি পোস্ট করেছেনঃ

عتب شهيد على كل متخاذل ….
تاريخ الكتابة 9-6-2013 حمص – المنطقة المحاصرة
تاريخ الشهادة 10-6-2013 حمص – المنطقة المحاصرة

একজন শহীদ সেসব লোকেদের নিন্দা করে লিখেছেন, যারা দায়িত্ব পালন না করে বেঁচে আছে…

লেখার তারিখ ০৯/০৬/২০১৩ হোমস – অবরুদ্ধ এলাকা

শহীদের আত্নবলির তারিখ ১০/০৬/২০১৩ হোমস – অবরুদ্ধ এলাকা

এই পোস্টটি আমাদের সিরিয়া প্রতিবাদ ২০১১ সংক্রান্ত বিশেষ কভারেজের অংশ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .