হিন্দি ভাষা আরোপের প্রতিবাদে উত্তরপূর্ব ভারতের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

ভারতে ভাষা রাজনীতির একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের কথিত ভাষার সংখ্যা প্রায় ৪৩৮। তবে, সংবিধান মাত্র ২২ টি নির্ধারিত ভাষার স্বীকৃতি দেয়।

সম্প্রতি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য হিন্দি অথবা সংবিধানের অষ্টম তফসিলে উল্লিখিত যে কোনো আধুনিক ভারতীয় ভাষার (আসামি, বাংলা, বোডো, ডোগ্রি, গুজরাটি, কন্নড়, কাশ্মীরি, কোঙ্কনি, মৈথিলি, মালায়ালম এবং মনিপুরি) একটি পত্র অধ্যয়ন করা বাধ্যতামূলক করার পর বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। যেসব শিক্ষার্থীরা হিন্দি কিংবা উপরে উল্লেখিত যেকোন একটি আধুনিক ভারতীয় ভাষায় কথা বলে না, তাঁদের জন্য আবশ্যিক হিন্দি বা অন্যকোন “আধুনিক ভারতীয় ভাষা” (এমআইএল) পাঠ করা কঠিন হবে।

ইসলামাবাদ ভিত্তিক ভারতীয় সাংবাদিক রেজাউল হাসান লস্কর @রেজাহাসান টুইটারে বলেছেন:

@রেজাহাসানঃ উত্তর ভারতের @রাকেশ্মানি তে আমরা যারা হিন্দি ভাষা জানি না তাঁদের উপর ভাষাটি চাপিয়ে দেবার কোনো কারণ নাই।

Students protest the imposition of Hindi and Modern Indian Languages, Image courtesy NEFIS Delhi Facebook Page

হিন্দি এবং অন্যান্য আধুনিক ভারতীয় ভাষা আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। নেফিসের দিল্লি ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া। 

আন্তর্জাতিক সংহতির জন্য নর্থ ইস্ট ফোরাম (নেফিস) উত্তরপূর্বের ছাত্রদের উপর হিন্দি / আধুনিক ভারতীয় ভাষা আরোপের বিরুদ্ধে ২০০ জন শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করেছে। এটা মণিপুর খবর এবং সংহতি তে রিপোর্ট হয়েছিল:

আমাদের আবেদন সত্ত্বেও বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন থেকে কেউ আমাদের সাথে আলোচনা করার জন্য আসেনি। আমরা অফিসের বাইরে নিরাপত্তা রক্ষীদের দ্বারা খারাপ আচরণ পেয়েছি এবং মেয়ে শিক্ষার্থীরা যৌন বিষয়ক অপব্যবহারের শিকার হয়েছে। 

নেফিসের সমম্বয়কারী চিংলেন খুমুখাচেম ব্যবসায় স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে কথা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মিলস শেখানোর পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই, সেকারণে হিন্দি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই থাকবে পছন্দের তালিকায়।

পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই ভাষার জন্য অবকাঠামো এবং অনুষদীয় শক্তির পরিস্থিতি এতোই ছোট যে মনিপুরি, আসাম ইত্যাদি মিলস ভাষায় কথা বলা সম্প্রদায়ের জন্যও বিষয়টি অনেক সমস্যা তৈরি করবে।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে হিন্দি প্রবর্তনের বিরুদ্ধে দ্যা এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) এর কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।

উত্তরপূর্ব ভারতের শিক্ষার্থীর যারা হিন্দি বা অধিকাংশ মিল’স ভাষায় পরিচিত নয় তাঁদের জন্য এই সব ভাষা আবশ্যক করা অনুচিত হয়েছে বলে নেফিস দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি পেশ করেছে। এই বিষয়ে প্রতিবাদটি মার্চ ২২ থেকে মার্চ ২৫ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। চিংলেন আরো বলেন:

উত্তরপূর্ব ভারতের শিক্ষার্থীদের বিশেষ চাহিদার এই স্থূল অবহেলাটি নতুন জিনিস নয়। আমাদের পর্যবেক্ষণে এটাই দেখেছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি এবং এর কাঠামোতে উত্তরপূর্ব ভারতের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সর্বদা উপেক্ষিত করা হয়। পক্ষপাতের এই তাজা উদাহরণ আমাদের জন্য একটি উপলক্ষ যেটি সাম্প্রদায়িকতার উপরে উঠে আমাদের সাধারণ স্বার্থ সুরক্ষায় একটি সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ জানানো।

North Eastern States Of India. Image courtesy NEFIS Delhi Facebook page

ভারতের উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলো। 

একটি তামিল ব্লগ মন্তব্য করেছে:

উত্তরপূর্ব ভারতের শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে হিন্দি আরোপের বিরুদ্ধে কথা বলছে, এটা দেখতে ভাল … আশা করছি বিভিন্ন ভাষাগত গ্রুপ থেকে যুবকরা একে অপরের সাথে নেটওয়ার্কিং শুরু করতে পারবে, যেটি সাংবিধানিক সংশোধনী আনয়নের আমাদের সাধারণ লক্ষ্যকে এগিয়ে নিবে। আমাদের সাধারণ লক্ষ্য হচ্ছে, কোনো একক ভাষা ইউনিয়নের একমাত্র সরকারী ভাষা হতে পারে না, অষ্টম তফসিলে উল্লিখিত সমস্ত ভাষা ইউনিয়নের সরকারি ভাষা এবং এই ভাষাগুলোর আপডেটে উদ্যমহীনতাকে অবশ্যই নিন্দা জানাতে হবে এবং এর নিয়মিত আপডেট করতে হবে।

ভারতের পরিবর্তনের সময়উত্তরপূর্ব ভারতের জনগণের প্রতি বৈষম্য থামান ফেসবুক পাতা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা এখন আবারও প্রতিবাদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .